ইমরান খানের গ্রেপ্তার ‘পূর্ব পরিকল্পিত’

ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রাঙ্গণে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নাটকীয় গ্রেপ্তার এবং সঙ্গে সঙ্গে আদালত ওই ঘটনাকে আইনি বৈধতা দেওয়ায় বিষয়টিতে স্পষ্ট হলো, গ্রেপ্তারের ওই ঘটনা সরকার ও সেনাবাহিনীর পূর্বপরিকল্পিত। ইসলাম খবর এক প্রতিবেদনে একথা জানিয়েছে।

ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করার ছবি

পাকিস্তানি সেনা জেনারেল অসীম মুনির ইমরান খানের প্রতি কম ধৈর্যশীল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা ছাড়াও একাধিক কারণে ইমরানের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করছেন মুনির। যদিও সেনাবাহিনীর মধ্যে এখনও ইমরানের প্রতি সমর্থন পোক্ত। সেনাবাহিনীর মধ্যে তার সমর্থকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পাঞ্জাব এবং অন্যান্য প্রদেশের সামরিক পরিবার থেকে এসেছে।

এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদ ও অন্যান্য প্রাক্তন সিনিয়র জেনারেলদের সঙ্গে ইমরান খানের সম্পর্ক মুনিরের জন্য গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করেছে।

এসব টানাপোড়েনের মধ্যে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) একটি ওয়ারেন্টের ভিত্তিকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে মঙ্গলবার ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের আধা সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স।

টেনে হিঁচড়ে তাকে হাইকোর্টের বাইরে নিয়ে আসা হয়। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম বলছে, ঘাড় ধরে তাকে পুলিশের গাড়ির কাছে নেওয়ার সময় হামাগুড়ি দেওয়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট ইমরান খানের গ্রেপ্তার বাতিল ঘোষণা করেছেন ও তার মুক্তির আদেশ দিয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আগামীকাল ইসলামাবাদ হাইকোর্টে জামিন আবেদন করতে বলেছেন। ইমরান খানের আবেদনের শুনানি শেষে আজ বিকেলে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ এ সিদ্ধান্ত দেন।

এর আগে বিকেলে ইমরান খানের আবেদনের শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গ্রেপ্তার সম্পূর্ণ বেআইনি ঘোষণা করেন এবং তাকে এক ঘণ্টার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে হাজির করতে ন্যাবকে নির্দেশ দেন।

এ সময় ন্যাবের পক্ষ থেকে ইমরান খানকে হাজির করতে আগামীকাল দুপুর পর্যন্ত সময় চেয়ে আবেদন করলে আদালত আজ বিকেল ৪:৩০ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে বলেন, আমরা সমগ্র পাকিস্তানকে কারাগার বানাতে দেবো না।

সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের পরপর পুলিশের একটি গাড়িবহর ইসলামাবাদ পুলিশ লাইন্সের দিকে রওনা হয়। সেখানে গেস্ট হাউসে আটক রাখা ইমরান খানকে কিছুক্ষণ পর কালো একটি মার্সিডিজ বুলেটপ্রুফ গাড়িতে করে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ইমরান খানকে বহনকারীর আগে-পিছে আরও ১৫টি যানবাহন ছিল।

এরইমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের দিকে যাবার পথে ইসলামাবাদের বিভিন্ন স্থান থেকে পিটিআই নেতা আলী মুহাম্মদ খান, কাসিম সুরী, ইজাজ চৌধুরীসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ অবস্থায় পিটিআইর পক্ষ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের সুপ্রিম কোর্টে যেতে বারণ করা হয়।

বিকেলে আদালত কক্ষে ইমরান খানকে দেখতে পেয়ে প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল বলেন, ইটস গুড টু সি ইউ। এরপর আদালত ইমরান খানের বক্তব্য শোনেন।

শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি বলেন, ইমরান খান সুবিচার পাননি। ন্যাব তার এখতিয়ার বহির্ভূত ও বেআইনি কাজ করেছে। এ প্রতিষ্ঠানটি অতীত থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি। আমরা ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করছি। তাকে অবিলম্বে মুক্তিদানের নির্দেশ দিচ্ছি।

তিন-সদস্যের বেঞ্চের রায়ে আরও বলা হয়, আদালত ইমরান খানকে আগামীকাল ইসলামাবাদ হাইকোর্টে জামিন আবেদন করার নির্দেশনা দিচ্ছে। একইসঙ্গে আদালত মনে করে, ইমরান খানের উচিত তার সমর্থকদের অবিলম্বে বিশৃঙ্খলা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া।

উল্লেখ্য, এর আগে তোষাখানা মামলায় আদালত থেকে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ লাহোরে তার বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু সমর্থকদের কারণে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি তারা। একইভাবে একাধিকবার চেষ্টা করেও সমর্থকদের বাধার মুখে তখন ইমরানকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।