আরেকটি ট্যাঙ্কার আটক করল ইরান

এক সপ্তাহের মাথায় আরেকটি তেলবাহী ট্যাঙ্কার আটক করল ইরান। বুধবার সকালে ইরানের বিপ্লবী গার্ড কোর (আইআরজিসি) সদস্যরা হরমুজ প্রণালীতে পানামার পতাকাবাহী ট্যাঙ্কার নিওভির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রগামী ট্যাঙ্কার অ্যাডভান্টেজ সুইট আটকের এক সপ্তাহের মাথায় এ ঘটনা ঘটল। মার্কিন নৌবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে।

হরমুজ প্রণালী থেকে নিওভি ট্যাঙ্কার আটক করেছে ইরান

গ্রিক কোম্পানি স্মার্ট ট্যাঙ্কারসের মালিকানাধীন মোটর ভেসেল নিওভি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই বন্দর থেকে একই দেশের ফুজাইরাহ বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। হরমুজ প্রণালী পারাপারের সময় আইআরজিসি নৌবাহিনীর এক ঝাঁক ফাস্ট অ্যাটাক নৌযান নিওভিকে ঘিরে ধরে এবং গতিপথ পাল্টে ইরানের সমুদ্রসীমায় ঢুকতে বাধ্য করে। বর্তমানে ইরানি নৌযানগুলোর প্রহরায় বন্দর আব্বাসের দিকে যাচ্ছে নিওভি।

দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি স্যামসাংয়ের তৈরি ৩ লাখ ৭ হাজার ডেড ওয়েইট টনেজ (ডিডব্লিউটি) ট্যাঙ্কার নিওভি ইরানের অপরিশোধিত তেল বহন করে থাকে। জাহাজটিকে আটকের কারণ সম্পর্কে ইরান এখনও কিছু বলেনি।

এর আগে সোমবার মালয়েশিয়া উপকূলের বিপরীতে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয় গ্যাবনের পতাকাবাহী ট্যাঙ্কার পাবলো। ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল নিয়ে সিঙ্গাপুর যাচ্ছিল পাবলো। গতকাল রাত নাগাদ পাবলো ট্যাঙ্কারের আগুন নিভেছে। পাবলো ট্যাঙ্কারের ২৫ নাবিককে উদ্ধার করে মালয়েশিয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনজন এখনও নিখোঁজ রয়েছে।

পাবলো হচ্ছে শ্যাডো ট্যাঙ্কার। লয়েডস লিস্টের তথ্য মতে, গত চার বছরে চারবার নাম, পতাকা ও মালিকানা বদল হয়েছে ট্যাঙ্কটির। ২০১৮ সাল থেকে ক্রমানুযায়ী ক্যামেরুন, কুক আইল্যান্ডস, তানজানিয়া ও সবশেষ গ্যাবনের পতাকা বহন করছিল পাবলো। রাশিয়া, ইরান, ভেনিজুয়েলার মতো যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে, তারা এ ধরনের শ্যাডো ট্যাঙ্কার ব্যবহার করে।

পাবলো ট্যাঙ্কারে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি। অসমর্থিত সূত্রের বরাতে রুশ সংবাদমাধ্যম বলেছে, মিসাইল হামলার কারণে পাবলো ট্যাঙ্কারে আগুন লেগে থাকতে পারে।

গভীর সমুদ্রে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছে ইরানের তেলবাহী ট্যাঙ্কার পাবলো

পাবলোর রুশ ক্যাপ্টেন মালয়েশিয়ার এনএসটি টিভিকে জানিয়েছেন, সোমবার বিকেলে তিনি আকস্মিকভাবে টের পান জাহাজের ডেক কেঁপে উঠেছে। কি হয়েছে খোঁজ নিতে গিয়ে তিনি দেখতে পান, জাহাজের ওয়্যারলেস ও কমিউনিকেশন সিস্টেম বিকল হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে জাহাজে আগুন ধরে গেলে নাবিকরা লাইফ বয়া নিয়ে সাগরে নেমে যান। কাছাকাছি এলাকায় দু্টি জাহাজ থাকায় তাদেরকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ইরানের নৌবাহিনী ওমান উপসাগর থেকে মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী একটি ট্যাঙ্কার আটক করে বন্দর আব্বাসে নিয়ে যায়। অ্যাডভান্টেজ সুইট নামের ট্যাঙ্কারটি কুয়েতের মিনা সউদ বন্দর থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হাউস্টন বন্দর অভিমুখে যাচ্ছিল।

অ্যাডভান্টেজ সুইট ট্যাঙ্কার আটকের বিষয়ে ইরানের নৌবাহিনী বলেছে, দুই সপ্তাহ আগে পারস্য উপসাগরে একটি ইরানি নৌযানকে অন্যায়ভাবে ধাক্কা দেয় তেলবাহী ট্যাঙ্কার অ্যাডভান্টেজ সুইট। এতে ওই নৌযানের দুইজন নাবিক সাগরে ডুবে মারা যান ও কয়েকজন আহত হন। সমুদ্রযাত্রার রীতি অনুযায়ী, বিপন্ন নৌযানের নাবিকদের উদ্ধারে সহায়তা না করে অ্যাডভান্টেজ সুইট দ্রুত ওই এলাকা ছেড়ে যায়। পরবর্তীতে ওমান উপসাগরে ট্যাঙ্কারটি শনাক্ত হলে সেটিকে আটক করা হয়।

নৌ পরিবহন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, তুর্কি মালিকানাধীন ট্যাঙ্কার অ্যাডভান্টেজ সুইট মার্কিন জ্বালানি কোম্পানি শেভরনের ভাড়া খাটছিল। ইরানী কমান্ডোরা অ্যাডভান্টেজ সুইটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কয়েকদিন আগে মার্কিন কর্তৃপক্ষ সুয়েজ রাজন নামে একটি গ্রিক মালিকানাধীন ট্যাঙ্কারের গতিরোধ করে সেটিকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যায়। ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল নিয়ে চীনে যাচ্ছিল সুয়েজ রাজন।