আপনি পড়ছেন

বিশ্বজাহানের মালিক আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা'লা বলেন, "বল ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে কখনো নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" (সুরা যুমার ৩৯: ৫৩)।

dont be sad allah with usমানুষের পাপের চেয়ে মহান আল্লাহর ক্ষমার বিশালত্ব তুলনাহীন, ফাইল ছবি

অনেক বিজ্ঞ আলেমগণের মতে, আল-কুরআনের সবচেয়ে আশা জাগানিয়া আয়াত হল সুরা যুমারের এ আয়াতখানা। এ আয়াতে আল্লাহপাক তাঁর সকল বান্দাকে তাঁর ক্ষমার সুসংবাদ শুনিয়েছেন।

হযরত উমর (রাঃ)-এর খিলাফতকাল। আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর (রাঃ) এক রাতে একদিকে যাচ্ছিলেন। তার পিছে পিছে তার সাথে কিছু লোক আসছিল। হঠাৎ তিনি প্রশ্ন করলেন- আচ্ছা তোমাদের মধ্যে কেউ বলতে পার, কুরআন মাজীদের সবচেয়ে হতাশাব্যঞ্জক আয়াত কোনটি? কাফেলার পেছনে অন্ধকার থেকে এক ব্যক্তি জবাব দিলেন- "ফামাই ইয়া'মাল মিসক্বলা যাররাতিন খাইরাই ইয়ারাহ, ওয়া মাই ইয়া'মাল মিসক্বলা যাররাতিন শাররাই ইয়ারাহ" অর্থাৎ "যদি কেউ অনু পরিমাণ ভাল কাজ করে কিয়ামতের দিন সে তা দেখতে পাবে, আর যদি কেউ অনু পরিমাণ খারাপ কাজ করে তবে সে তাও সে দেখতে পাবে।" (সুরা যিলযাল ৯৯ : ৭-৮)

উল্লেখ্য, এ আয়াতখানি যখন নাযিল হয় তখন আবূ সাইদ খুদরী (রাঃ) রসুল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ, কিয়ামতের দিন আমি কি আমার ছোট ছোট পাপগুলিও দেখতে পাব? রসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তা'লা বলেছেন, অবশ্যই তা দেখতে পাবে।’ আবূ সাইদ খুদরী আর্তনাদ করে কেঁদে উঠলেন, ‘তাহলে তো আমি মরেই যাব।’

উমর (রাঃ) অন্ধকারে হাঁটছেন আর কাঁদছেন। কিছু দূর অগ্রসর হয়ে তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘তোমাদের কেউ কি বলতে পার কুরআনুল কারীমের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক আয়াত কোনটি?’ পেছনে অন্ধকার থেকে আবার আওয়াজ এলো "লা তাকনাতু মির রহমাতিল্লাহ" অর্থাৎ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যেও না" (যুমার ৩৯: ৫৩)

হযরত উমর কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের ভিতর আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ আছে নাকি? আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ জবাব দিলেন, "আমি তো বললাম, আমি তো জবাব দিলাম।"

আয়াতের নির্দেশ হল "বল"। প্রাথমিকভাবে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি এ নির্দেশ। পরবর্তীতে তা আমাদের প্রতি। আল্লাহর হুকুম হল- মানুষকে জানিয়ে দাও তারা যেন তাদের রবের রহমত থেকে নিরাশ না হয়। গুনাহ-খাতা তো তাদের হবেই। তারা যেন হতাশ না হয়। আল্লাহর ক্ষমা তাদের গুনাহ থেকেও বিশাল। "কাতাবা আ’লা নাফসিহির রহমাহ"- "রহম করাকে তিনি নিজের উপর ওয়াজিব করে নিয়েছেন।" (সুরা আন'আম ৬ : ১২, ৫৪)

অতএব তোমরা ক্ষমা চাও, তিনি ক্ষমা করে দিবেন, গুনাহ যতই বড় হোক তাঁর ক্ষমার সামনে তা কিছুই নয়।

একশত মানুষ হত্যাকারীর ঘটনা

পূর্ব যামানার এক লোক ৯৯ জনকে হত্যা করে। অতঃপর তার মধ্যে অনুশোচনা জাগে। সে এক সাধারণ দ্বীনদার মানুষকে জিজ্ঞাসা করে, তার তওবা করার সুযোগ আছে কিনা? ঐ লোক জবাবে বলে, তোমার মত লোকের তওবা আল্লাহ কিছুতেই কবুল করবেন না। (হয়তোবা এই লোক আমাদের বর্তমান যামানার কিছু কট্টর লোকদের মত ছিল। যে সবাইকে কোন না কোন উসিলায় জাহান্নামে পাঠাতে চায়।) ঐ খুনি তখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে একেও খুন করে ১শ পুরা করে। অতঃপর তার মধ্যে পুনরায় অনুশোচনা জাগে। সে খোঁজ করে একজন বিজ্ঞ আলেমের কাছে যায়। তাকে গিয়ে বলে আমি একশ জনকে হত্যা করেছি। আমার কি তওবা করার সুযোগ আছে? ঐ বিজ্ঞ আলেম ব্যক্তি জবাবে বলেন, অবশ্যই আছে। তোমার আর তোমার তাওবার মাঝে কে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে? তুমি অমুক স্থানে যাও। সেখানে কিছু ভাল মানুষ আছে যারা আল্লাহর ইবাদত করে। তুমি তাদের সাথে মিলে আল্লাহর ইবাদত কর। আর তুমি তোমার এলাকায় ফিরে যেও না। কেননা সেটা বড়ই খারাপ জায়গা।

ঐ তওবা অন্বেষী লোকটা তখন আলেম ব্যক্তির নির্দেশিত স্থানে যাত্রা শুরু করে। পথিমধ্যে সে মারা যায়। তার রূহ নিয়ে যাওয়ার জন্য রহমত ও আযাবের উভয় ফিরিস্তারাই উপস্থিত। আযাবের ফিরিস্তাদের বক্তব্য সে একশ লোককে হত্যা করেছে। অতএব সে জাহান্নামী। অপরদিকে রহমতের ফিরিস্তাদের দাবী সে তো তওবা করেছে। বিষয়টি আল্লাহপাকের সমীপে আসলে তিনি নির্দেশ দেন, তোমরা দু’দিকের দূরত্ব মেপে দেখ। যে দিকটা নিকটবর্তী, তাকে সেদিকের বলে ধরে নেয়া হবে। মেপে দেখা গেল সে যেদিকে যাচ্ছিল ঐ দিকটাই নিকটে। এর ফলে রহমতের ফিরিশতারা তাকে নিয়ে গেল। এক বর্ণনায় এসেছে আল্লাহপাক ঐ দিকটা তাঁর কুদরতে নিকটবর্তী করে দেন। আরেক বর্ণনায় এসেছে ঐ লোক মৃত্যুর পূর্বে হামাগুড়ি দিয়ে ঐ এলাকার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। মেপে দেখা যায় ঐ এলাকার দিকে ১ বিঘত পরিমাণ বেশী অগ্রসর হয়েছে। হাদীসটা বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে।

তো কি পেলাম নবী (সা.) এর এ হাদীস থেকে ভেবে দেখি-

১) সবারই তওবা করার ও ক্ষমা লাভ করার অধিকার রয়েছে।

২) গুনাহ যত বড়ই হোক তওবা করলে আল্লাহ মাফ করে দেবেন। কারণ এক ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যাকে গোটা মানবজাতিকে হত্যার সাথে তুলনা করা হয়েছে পবিত্র কুরআনে (মায়িদাহ ৫:৩২)। এই লোকের তাওবা কবুল হলে আমাদের তওবাও কবুল হবে, ইনশাআল্লাহ।

৩) তওবা থেকে কাউকে নিরাশ করা যাবে না। রসুল (সঃ) বলেন,
"তোমরা সহজ কর, কঠিন করো না। সুসংবাদ দাও, বীতশ্রদ্ধ করো না। পরস্পরকে মেনে মানিয়ে চল, মতবিরোধ করো না" (বুখারী, মুসলিম)

৪) শুধু তওবার ইচ্ছা বা মুখে মুখে করলে হবে না। তওবার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। গুনাহর কাজ ত্যাগ করে আল্লাহর বন্দেগীর দিকে অগ্রসর হতে হবে।

৫) তওবার জন্য ইসলামবিরোধী স্থান, পরিবেশ, সংঘ, বন্ধুত্ব ত্যাগ করা খুব জরুরি। রসুল (সা.) বলেছেন-

"মানুষ তার বন্ধুর দ্বীন অনুসরণ করে। সুতরাং প্রত্যেকে যেন কার সাথে বন্ধুত্ব করছে তা যাচাই করে নেয়।" (তিরমিযী, আহমদ)

কিয়ামতের দিন যে সাত শ্রেণীর মানুষ আরশের ছায়ায় থাকবে তাদের মধ্যে এক শ্রেণীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরস্পরকে ভালবাসে, পরস্পরের সাথে বন্ধুত্ব করে। অতএব বন্ধু ও সাথী নির্বাচন দ্বীনদারীর ভিত্তিতে হওয়া দরকার। একজন মানুষের বিষয়বুদ্ধি অতটা চালু নয়, কিন্তু সে ভাল মানুষ, দ্বীনদার মানুষ। আরেকজনের দ্বীনদারীর খবর নেই, কিন্তু বিষয়বুদ্ধি খুব টনটনে। আমাদের প্রবণতা হল এই দ্বিতীয় ব্যক্তিকে পছন্দ করা। এমনকি যারা দ্বীনী কাজকর্ম করে, দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে পড়ে ও পড়ায় তারাও বর্তমানে এই রোগে আক্রান্ত। সবাইকে যে বাড়ী-গাড়ীর মালিক হতে হবে! দ্বীনদার সহজ সরল, ধান্দাবাজী বুঝে না এদের সাথে চললে কি তা পাওয়া যাবে!? কিন্তু ইসলামের নির্দেশ হল- একেই বন্ধু ও অন্তরঙ্গ হিসেবে গ্রহণ কর। নইলে কিয়ামতের দিন কত মানুষের আর্তনাদ হবে:

"হায় দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম। আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল আমার কাছে উপদেশ (হিদায়াত) আসার পর। শয়তান তো মানুষের জন্য মহা প্রতারক।” (সুরা ফুরকান ২৫ : ২৮-২৯)

৬) তওবার জন্য হতাশ হওয়া যাবে না। মৃত্যু দমতক অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ঐ খুনির মত। যখন তার মৃত্যু যন্ত্রনা শুরু হয়ে গেছে তখনও সে হামাগুড়ি দিয়ে তওবার দিকে এগিয়ে গেছে।

ইবলিস শব্দের অর্থ চরম হতাশা। মুমিন ঠিক তার উল্টো। সে কখনো আল্লাহর রহমত থাকে নিরাশ হয় না। কিছু তরুণের সাথে কথা হচ্ছিল। সন্তানসম এই ছেলেগুলো বস্তুবাদ ও নোংরামির এই পরিবেশ থেকে মুক্তি চায়। পথ খুঁজছে। কোন পথে কল্যাণ। তাদের পরিবারগুলো বস্তুবাদিতায় আক্রান্ত- টাকা, টাকা, আরো টাকা চাই। আরো বিলাস, আরো ভোগ, আরো তরক্কী। এরা এই দমবন্ধ হয়ে যাওয়া চিন্তাধারা থেকে মুক্তি চায়। এদের কেউ কেউ ছোটকালে কুরআন পড়া শিখেছিল। ভুলে গেছে। এমন অনেকে আছেন নামায পড়াও ভুলে গেছে। হতাশ হবেন না কেউ। অল্প অল্প করে শুরু করুন। দেরী করবেন না, আজই শুরু করুন। কুরআন শরীফটা খুলে বসুন। অনুবাদ পড়া শুরু করুন। আম্মাজানেরা জায়নামায মেলে নামায শুরু করুন। ভাই-মুরুব্বিরা মসজিদমুখী হোন। কে কী বলে পরোয়া করবেন না। খোঁজ করুন কার কাছ থেকে দ্বীনের সঠিক শিক্ষাটা পাওয়া যাবে, আল্লাহ মিলিয়ে দিবেন। আমাদের ক্ষমা করার নানা ব্যবস্থা আছে তাঁর কাছে।

৭) দোয়া করি সবাই হিদায়াতের জন্য: "হে বিশ্বজাহানের প্রভু, আমরা না চাইতেই আপনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। মেহেরবানি করে দোযখে দিবেন না। মাফ করে দিন, হিদায়াত করুন।”

নবী (সা.) এর ভাষায়-

আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা, ওয়াত তুক্বা, ওয়াল আ'ফাফা, ওয়াল গিনা।

অর্থ- হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হিদায়াত, তাকওয়া, পবিত্রতা ও সচ্ছলতা প্রার্থনা করছি।
চান, চাইলেই দেয়া হবে এটা এমনই দরবার।

৮) Timeless advice বলে একটা কথা আছে। ঐ নাম না জানা বিজ্ঞ আলেম ব্যক্তির সেই কথা-"তোমার আর তোমার তওবার মধ্যে বাঁধা হবে কে?” চিরন্তন কল্যাণময় এক পরামর্শ। আল্লাহ তার কল্যাণ করুন। আমরাও মানুষের কল্যাণকামী হই। দ্বীনের দিকে মানুষকে আগ্রহী করে তুলি। বীতশ্রদ্ধ করে না দিই। আল্লাহ মাফ করুন।

তওবা ও মাফির পথে কুরআনি দিক নির্দেশনা

সুরা যুমারের উল্লিখিত আয়াতের (৫৩ আয়াত) এর পরবর্তী আয়াতগুলিতে তওবার পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য করণীয় ও তার জরুরত তুলে ধরা হয়েছে। আসুন সেদিকে খুব সংক্ষেপে দৃষ্টি দেই-

১) "তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ কর, তোমাদের নিকট শাস্তি আসার আগেই, এরপর আর তোমাদের সাহায্য করা হবে না।" (যুমার-৫৪)

অতএব আল্লাহর দিকে তাঁর দ্বীনের দিকে অগসর হতে হবে। দ্বীন জানতে হবে, দ্বীনের বিষয়গুলি মেনে চলতে হবে। মৃত্যুর আগেই তা করতে হবে। মৃত্যুর পর কুরআনখানি, মিলাদ, বড় বড় দোয়া অনুষ্ঠান কোন কাজে আসে না, হুজুরদের পকেট ভারী করা ছাড়া।

২) "অনুসরণ করো তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে উত্তম যা নাযিল হয়েছে তার, তোমাদের উপর অতর্কিতভাবে তোমাদের অজ্ঞাতসারে শাস্তি আসার আগে।" (যুমার -৫৫)

আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে, আল-কুরআন এবং তার ব্যাখ্যা রসুলের সুন্নাহ। তাই কুরআন-সুন্নাহই মানতে হবে। বাজারের সস্তা ধর্মীয় কিতাব বা মনগড়া ওয়াজ বা বক্তব্য নয়। কুরআন হাদীসের কাছেই ফিরে আসি। "উত্তম যা নাযিল করা হয়েছে"-কথাটির তাৎপর্য হল, আল্লাহর কিতাবে কল্যাণময় যেসব নসিহত নাযিল হয়েছে সেগুলো মেনে চল। আল্লাহর কিতাবের সব কথাই উত্তম।

৩) "যাতে কাউকেও বলতে না হয়, 'হায়! আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যে আমি যে শৈথিল্য করেছি তার জন্য আফসোস। আমি তো ঠাট্টাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।" (যুমার ৫৬)

অতএব, আল্লাহর হুকুম-আহকাম জানা-মানায় শৈথিল্য করা যাবে না। অলসতা ও গাফলতি ঝেড়ে ফেলতে হবে। ধীরে ধীরে জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। সাধ্যমত আমল করতে এবং দুর্বলতা ও ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। আল্লাহর দ্বীন নিয়ে, দ্বীনের হুকুম আহকাম, দ্বীনের নিশানি চিহ্ন যেমন- দাড়ি, টুপি, হিজাব, নামায নিয়ে কোন রকম কটাক্ষ করা ছাড়তে হবে। এ ধরনের কাজে যারা অভ্যস্ত তাদের সোহবত-সম্পকও বর্জন করতে হবে।

৪) "অথবা কেউ যেন না বলে আল্লাহ আমাকে হিদায়াত করলে আমি তো অবশ্যি মুত্তাকীদের অন্তুর্ভুক্ত হতাম।" (যুমার: ৫৭)

আল্লাহ কাউকে জোর করে হিদায়াতের পথে নিয়ে আসবেন না। নামায পড়াবেন না; হারাম ছাড়াবেন না; দ্বীনের পথে চলতে বাধ্য করবেন না। তিনি তো কুরআন নাযিল করেছেন। নবী পাঠিয়েছেন। আমাকে-আপনাকে বিবেক, বুদ্ধি-জ্ঞান দিয়েছেন। হিদায়াতের পথে চলার উদ্যোগটা নিজেকেই নিতে হবে। তাহলে ঐ খুনি ব্যক্তির মত সাহায্য পাওয়া যাবে। আল্লাহ বলেন,

"যারা আমার পথে চেষ্টা-সংগ্রাম করে আমি তাদেরকে আমার পথে হিদায়াত দান করবো। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন।" (আনকাবূত ২৯: ৬৯) (এছাড়া সুরা লাইল ৪-১০ আয়াত দ্রষ্টব্য)

৫) "অথবা শাস্তি প্রত্যক্ষ করলে যেন কাউকেও বলতে না হয়: আহা! যদি একবার পৃথিবীতে আমার প্রত্যাবর্তন ঘটতো তবে আমি সৎকর্মশীল হতাম।" (যুমার: ৫৮)

পৃথিবীর এই জীবন একবারই। একে হেলাফেলা করার কোন সুযোগ নেই। মৃত্যুযন্ত্রণা প্রকাশের আগেই তওবার পথে, ক্ষমার পথে আগাই। দেরী না করি। মৃত্যুর সময়ক্ষণ তো কেউ জানি না!

৬) "প্রকৃত ব্যাপার তো এই যে, আমার আয়াত ও নিদর্শন তোমার নিকট এসেছিল, কিন্তু তুমি এগুলিকে মিথ্যা বলেছিলে এবং অহংকার করেছিলে; আর তুমি তো ছিলে কাফিরদের একজন।" (যুমার: ৫৯)

আল্লাহপাক তাঁর অসীম রহমতে আমাদের হেদায়াত দিয়েছেন। জীবনের বিভিন্ন সময় আমাদের নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে হেদায়াতের পথে আগানোর জন্য মনের মধ্যে তাগিদ দিয়েছেন। অহংকার, লোকে কী বলবে, সমাজ–পরিবার-অবৈধ আয়-রুজি-বিলাস-ব্যসন ইত্যাদির চিন্তায় মানুষের আর দ্বীনের পথে আগানো হয় না। চিন্তার কথা আজকের এই দুনিয়ার সামান্য সময়ের ভোগ আর লোকদের নিন্দা থেকে বাঁচার জন্য চিরস্থায়ী জাহান্নাম খরিদ করছি নাতো আমরা?

আল্লাহপাক তাঁর কথা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা চিন্তা করি, উপলব্ধি করি।

লা তাহযান ইন্নাল্লাহা মাআ'না

শিরোনামের এই বাক্যখানি সুরা তওবার ৪০ আয়াতের অংশ। রসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করছেন। সাথে আবু বকর (রাঃ)। সওর গুহায় তারা আশ্রয় নিয়েছেন। কাফির রক্তপিপাসু কুরাইশরা গুহার মুখে উপস্থিত। একটু খেয়াল করলেই তাদের দেখে ফেলবে। আবু বকর (রাঃ), রসুলুল্লাহ (সা.) কে বিষয়টি বললেন। রসুলুল্লাহ (সা.) এর নিশ্চিত উত্তর-

"লা তাহযান ইন্নাল্লাহা মাআ'না।" অর্থ- "(হে আবু বকর!) দুশ্চিন্তা করো না। আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।"

আমাদের সাথেও রব্বুল আ'লামীন আছেন। তাঁর রহমত আছে আমাদের সাথে। আমরা তাঁর দিকে আগাই। তার রহমতের দিকে আগাই। ফিলিস্তিন, কাশ্মির, উইঘুর, রোহিঙ্গা তথা বিশ্বের তাবৎ মুসলিম ভাই-বোনেরা মনে রাখুন, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। জালিমের পতন ও ধ্বংস অবস্যম্ভাবী।

স্বপ্ন দেখি, আকাংখী হই। জান্নাতের সেই পথে অগ্রসর হই। আল্লাহর সাহায্য নিকটেই। তিনি ক্ষমা করে দিবেন বলে ওয়াদা করেছেন।

রাত পোহালে ঈদ
আজ আমাদের ঈদ! রে ভাই
আজ আমাদের ঈদ
রাত পোহালে ফর্সা হল; ভেঙে গেল নিদ।
ও ভাই আমাদের ঈদ। (কবি কায়কোবাদ)

রাত পোহালেই ঈদ। দীর্ঘ দু’ বছর করোনার পর একটু মুক্ত পরিবেশে ঈদ। যদিও বিশ্বে চলছে মহাযুদ্ধের ঘনঘটা। চোর-বাটপার-দুর্নীতিবাজরা জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে সবার। তারপরও ঈদ সবার জন্য খুশির বার্তা নিয়ে আসুক। রোজাদারের জন্যই ঈদ। তার মজুরী দিবেন খোদ আল্লাহ তা'লা নিজে। এজন্যই তারা ঈদগাহে উপস্থিত। আল্লাহর নির্দেশমত রোজা রেখে ফিতরা দিয়ে উপস্থিত তাঁর বান্দারা। তিনি তাদের নিরাশ করবেন না। কিন্তু যারা রোজা রাখলেন না, ইচ্ছা করে নামায পড়েন না! তাদের কি হবে? ঈদে তো তাদেরই হট্টগোল বেশী। তাদের জন্য ঈদের বার্তা- তওবা করি। ভাই, নিজেদের ধ্বংস থেকে বাঁচাই; পরিবার বাঁচাই, জাহান্নাম বড়ই খারাপ জায়গা।

কেবল রোজাকেন্দ্রিক ইবাদতগুজার না হই

রোজার শেষ দিকে এসে মসজিদে ফরয নামাযে নামাযীর ভিড় নেই। তারাবীর নামাযে আগ্রহ কম। ইমাম-খতিবদের ফরমায়েশি দোয়ার আগ্রহ কমে গেছে। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। সারাটা মাস কষ্ট করে তীরে এসে যেন তরী ডুবে না যায়। রোজা ও রোজার শিক্ষা ধরে রাখতে হবে। এই লক্ষ্যে আমরা নীচের কাজগুলো করতে পারি-

- শাওয়ালের ছয় রোজা রাখি। রসুল (সা.) বলেছেন- রমজানের রোজা ও শাওয়ালের ছয় রোজা মিলে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে।

- প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়্যামে বীজের রোজাগুলো রাখি।

- যারা আরেকটু পারবেন প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবারও রোজা রাখতে পারেন।

- এসবই নফল রোজা। কেউ বোঝা নিবেন না যেন। করলে সওয়াব, সারা বছর রোজার অনুভূতি ও পরিবেশ ধরে রাখার সুযোগ।

- রাতের নামাযগুলি বিশেষত: তাহাজ্জুদ ধরে রাখার চেষ্টা করি। নফল রোজাগুলি রাখার এটা আরেক ফায়দা। সেহরি খেতে উঠলে তাহাজ্জুদটাও আদায়ের সুযোগ পাওয়া যায়।

- দোয়া, দান-সদকাহ অব্যাহত রাখি সারা বছর। দোয়া কবুলের সময়গুলোতে বেশী বেশী দোয়া করি। নিকটতম লোকদের মাঝে দান-সদকাহ করতে থাকি।

সবশেষে, দীর্ঘ একটা মাস যারা আমাদের সাথে ছিলেন, আমাদের, তাদের ও সব মুসলমানকে আল্লাহ মাফ করে দিন; পরিবার-পরিজনসহ সকলকে সুস্থ রাখুন, ঈমান ও ইসলামের উপর কায়েম রাখুন, বিশ্ববাসীকে হেদায়াত দান করুন, কল্যাণ দান করুন। সবার জন্য আন্তরিক দোয়া ও কল্যাণ কামনা করছি। আমাদের সবার জন্যও দোয়ার আবেদন থাকল।

ঈদ মোবারক। তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম। আল্লাহ এই ঈদ ও এর যাবতীয় কল্যাণ সকলের জন্য কবুল করুন , আমীন। আমীন। সুম্মা আমীন।।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.