নিজে বাঁচি আহালদের বাঁচাই
- Details
- by এহসানুল কবীর
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’লা বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা নিজদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজন-আহালদের জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা কর।” (সূরা তাহরীম ৬৬: ৬) । স্রষ্টার প্রতি অনুগত ও অঙ্গীকারাবদ্ধ দু’টি মানুষের স্রষ্টার নির্দেশ মেনে চলা ও পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে একটা পরিবার গঠিত হয়। একজন পুরুষ ও একজন নারী পরস্পরের সান্নিধ্যে আসে বৈধভাবে। কেন? আল্লাহ্ তা’লার ভাষায়:
“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।” (সূরা রুম ৩০: ২১)
একটা সুন্দর পরিবার গড়ার রেসিপি কি? কিভাবে পরস্পরের মধ্যে এই শান্তি-সুখ-ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি হবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের চিন্তার আর ফর্মূলার শেষ নেই। যখন এত চিন্তকরা ছিলেন না তখন বোধ করি মানুষ আরো সুখী ছিল। আধুনিক সমাজ যেন পুরোপুরি ভেঙে পড়ছে। বাবা-মা-সন্তান কারো মধ্যেই যেন বনিবনা নেই, ভালবাসা নেই, দয়া-মায়া-দায়িত্ববোধ কিছুই নেই। আগে ধারণা করা হতো উঁচু তবকার পয়সাওয়ালা পরিবারগুলোতেই বুঝি এই সমস্যা। কোভিড-১৯ আমাদের দেখিয়ে দিল এই সমস্যা ছড়িয়ে গেছে ঘরে ঘরে। কোভিডে ঘরে আটকা পড়া স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব চরম রূপ ধারণ করে। নারী নির্যাতন সহসাই যেন আকাশ ছোঁয়। তালাক বৃদ্ধি পেল ব্যাপকভাবে।
বস্তুত: এখন অনেক পরিবার কেবল এক ছাদের নীচে কোনরকম বসবাস করে মাত্র। সবাই যার যার মত কাজে ব্যস্ত। পরস্পরের সাথে কোনরকম রাতে একটু দেখা তাও বিভিন্ন ব্যস্ততা টিভি, নেট-এর ফাঁকে ফাঁকে। ফলে দায়সাড়া সম্পর্ক চলেছে– একরকম তথাকথিত সুখী পরিবার। যখনই দীর্ঘসময় একত্রে থাকার প্রসংগ আসলো তখনই সুখের প্রকৃত চিত্র বেড়িয়ে এসেছে। আবার বাবা-মার প্রতি সহজাত ভালবাসাও আজ আশা করা যাচ্ছে খুবই কম। কোভিড-এ বাবা-মাকে দূরে কোথাও ফেলে আসার মধ্য দিয়ে এমনটাই প্রকাশ পেয়েছে।
সুখী পরিবার চাচ্ছি। কিন্তু মানুষের স্রষ্টা এজন্য কি ফর্মূলা দিয়েছেন তার ধার ধারছি না। জানতেও চাচ্ছি না তিনি কি বলেছেন। এভাবে তথাকথিত মনোবিদ, সমাজবিদরা অন্ধের মত নানা পথ বাতলে পরিস্থিতিকে চরম জটিল করে তুলেছেন। পাশ্চাত্যে পরিবারের অবস্থা তো আরো ভয়াবহ।
ভাল সন্তান চাই। কিভাবে গড়বো, প্রাচীন এক বুজুর্গকে বিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, সন্তানের বয়স কত? উত্তর এল ৬ মাস। উনি বললেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে। অর্থাৎ কিনা ভাল সন্তান চাইলে ভাল মা দরকার। বিয়ের আগেই তোমার আসা দরকার ছিল। কি ধরনের মা বাছাই করছো তোমার সন্তানের জন্য সে জ্ঞান নেয়া প্রয়োজন সবার আগে।
হযরত ওমরের খিলাফতের সময়কার ঘটনা। এক বাবা তার সন্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে ওমর (রা)-এর কাছে এল। হযরত ওমর সেই ছেলেকে ডেকে তাকে পিতার অধিকারের ব্যাপারে কোমলভাবে নসিহত করলেন। ছেলে জিজ্ঞাসা করলো, আমিরুল মু’মেনীন! ছেলের কি পিতার কাছে কোন অধিকার পাওনা আছে? ওমর (রা.) বললেন, অবশ্যই তার অধিকার আছে। তার অধিকার হল পিতা তাকে একজন নেককার মা দিবে। তার অধিকার পিতা তাকে একটা সুন্দর নাম দিবে, তাকে সুশিক্ষা দিবে।
ছেলেটা বললো, আমিরুল মুমেনীন! তাহলে আপনি আমার বাবাকে জিজ্ঞাসা করুন- তিনি আমার এ হকগুলো আদায় করেছেন কি না? আমার মা হলেন একজন নাম পরিচয়হীন মহিলা। আমার বাবা আমার নাম রেখেছেন জুয়াল অর্থাৎ সামুদ্রিক কীট বা পোকা, তিনি আমাকে কোন সুশিক্ষাই দেননি। কুরআন কি তা আমি জানি না, সে শিক্ষা আমাকে দেয়া হয়নি। ওমর (রা.) ক্ষুব্ধ হয়ে বাবাকে ডেকে বললেন, তুমি তোমার অধিকার চাইতে এসেছ? অথচ ছেলের কোন অধিকারই পূরণ করোনি। তুমিই নিজেই নিজের অধিকার নষ্ট করেছ।
এ ঘটনা আমাদের সমাজের পরিবারগুলোতে অশান্তির কারণগুলো দেখিয়ে দেয়। বিয়েতে বর-কনের যোগ্যতা এখন বাহ্যিক সৌন্দর্য টাকা-পয়সা ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধা হাসিলের সম্ভাবনা। অথচ রসূল (সা.) বলেছেন, দ্বীনদারীকে প্রাধান্য দাও।
- সন্তানদের নাম রাখা হচ্ছে, যার সঙ্গে ঈমান-ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। আমার এক ছোটবেলার খেলার সাথী ছিল। মুসলিম ঘরের সন্তান। নাম গিটার; তার ২ বোনের নাম পিয়ানো ও সিতারা। আরেক ভদ্রলোক সন্তানের নাম রেখেছেন এক, দুই, তিন- শুধু সংখ্যা। চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন নেই। আরেকজন সন্তানদের নাম দিয়েছেন ডলার, রুবল ইত্যাদি। তার ঝোঁক কোনদিকে তা বলে দেয়া প্রয়োজন বোধকরি নেই। আরেকজন সন্তানদের নাম দিয়েছিরেন এরিক, ভিক্টোরিয়া, এলিজাবেথ। এই সন্তানরা বড় হয়ে কোনদিকে যাবে তাও বোধকরি পিতা ঠিক করে দিলেন। রসূলুল্লাহ্ এজন্য খারাপ নাম পরিবর্তন করে দিতেন। ভাল কাজে খারাপ নামের লোক নিয়োগ দিতেন না।
- আর কুরআন-হাদীস শিক্ষা তো খুবই গৌন বিষয়। ৩ বছর না হতেই ইংরেজী স্কুলে নাম লেখানো হবে। তারপর বস্তা ভরা বই কাঁধে নিয়ে সে বিজাতীয় ভাষা, কালচার, বিশ্বাস আর জীবন পদ্ধতি শিক্ষার জন্য ছুটবে। এমনকি জেনারেল মিডিয়াম স্কুলগুলিতেও আজ আর দ্বীনি বা নৈতিক শিক্ষা ও নৈতিকতা চর্চার ছিটে ফোটাযুক্তও নেই। ফলাফল তো সবাই দেখছি, আর ভোগ করছি।
স্ত্রীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্র
কুরআন মজীদের সূরা বাকারার ২২৩নং আয়াত এভাবেই শুরু হয়েছে। এ আয়াত নিয়ে বিভ্রান্ত বিকৃত নারীবাদীদের কতই না পেরেসানী। বিষয়টি বোঝারও তারা চেষ্টা করেনি।
- মানুষ মরণশীল। তাই মানব বংশ অব্যাহত রাখা, বিরাজমান মানবের নিজ জাতির অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদ। এজন্য সমকামীতা কোন স্বাভাবিক প্রবণতা না। এটা বিকৃতদের চাপিয়ে দেয়া মানসিকতা। সবাই সমকামী হলে মানব বংশ সে প্রজন্মেই শেষ। মানব বংশধারা বজায় রাখার জন্য সৃষ্টিকর্তা পুরুষকে করেছেন বীজের অধিকারী। আর নারীকে দিয়েছেন বীজ গর্ভে ধারণ, সন্তান জন্মদান ও লালনের দায়িত্ব। তাই তাকে শস্যক্ষেত্রের সাথে তুলনা করেছেন।
- কৃষকের কাছে তার শস্যক্ষেত্র সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। তাই এই তুলনা দিয়ে নারীকে অবমূল্যায়ন করা হয়নি। বরং তার প্রকৃত মূল্য তুলে ধরে তার যথাযথ পরিচর্যার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
- ভাল ফসলের জন্য অন্যতম শর্ত হল ভাল শস্যক্ষেত্র। এজন্য দ্বীনদারী, শালীনতা, পবিত্রতা দেখে বিয়ে করতে বলা হয়েছে।
- যথাযথ ফসল পেতে হলে কৃষককে তার শস্যক্ষেত্রে যথাযথ পরিচর্যা করতে হবে। সেচ, সার, কীটনাশক, নিড়ানী, ক্ষতিকর পশুর হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য বেড়া দেয়া প্রভৃতি পদক্ষেপ নিতে হবে। পুরুষকে এভাবে নারীর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, “পুরুষ নারীর তত্ত্বাধায়ক” (সূরা নিসা ৪: ৩৪)। স্ত্রীর যথাযথ ভরণপোষণ, তাকে পর্দা-পুশিদার মধ্যে রাখার মাধ্যমে পুরুষ তা আঞ্জাম দিবে।
- সর্বোপরি ভাল ফসলের জন্য বীজের মালিককে যথাযথ বীজের অধিকারী হতে হবে। বীজ খারাপ হলে ফসল ভাল আশা করা যায় না। এজন্য পুরুষকেও যথাযথ ঈমানের অধিকারী, দ্বীনদার চরিত্র ও দ্বীনি জিন্দেগীর অনুসারী হতে হবে। সংক্ষেপে একটা ভাল পরিবার গঠনের প্রাথমিক পদক্ষেপ এই ছোট্ট আয়াতাংশের মধ্যে বলে দেয়া হলো।
সুন্দর উত্তরাধিকারের জন্য দ্বীনদার পরিবার
যথাযথ উত্তরাধিকারের জন্য প্রয়োজন পরিবারে দ্বীনি পরিবেশ তৈরী করা। এক দম্পতির কন্যা সন্তানের জন্মের পর নার্স পিতাকে পরামর্শ দিচ্ছেন, “এখন থেকে আপনাকে খুব সতর্কতার সাথে চলতে হবে। কারণ দুটো ছোট ছোট চোখ আর ছোট ছোট দুটা পা আপনাকে সবসময় অনুসরণ করবে।”
খুবই বাস্তববাদী নসিহত। আরেকটা এমন বাস্তব কথা হল, “বাচ্চারা কান দিয়ে নয় বরং চোখ দিয়ে শুনে” অর্থাৎ তাদের যা বলা হয় তা নয়, বরং যা তারা পরিবারে ও আশপাশে ঘটতে দেখে তাই শুনে, তাই অনুসরণ করে।
পরিবারে দ্বীনি পরিবেশ সৃষ্টির জন্য করণীয়:
(১) সন্তানদের জন্মের পরপরই শরীয়ত মাফিক ডান কানে আযান দেয়া, আকীকা করা, তাহনিক করা জরুরি। ( উল্লেখ্য বাম কানে ইকামত দেয়াটা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।)
(২) সন্তানের জন্য একটা উত্তম নাম নির্ধারণ করতে হবে যা দিয়ে তাকে সবসময় ডাকা হবে। ভাল নাম, খারাপ নাম, Pet name বা ঘরোয়া নাম নয়। সুন্দর অর্থবোধক নাম। আল্লাহর সাথে মিলিয়ে নাম যেমন-আব্দুল্লাহ্, আব্দুর রহমান অথবা নবীদের নামে বা বিশিষ্ট সাহাবী বা মহিলা সাহাবীদের নামে অথবা সুন্দর কোন অর্থবোধক ইসলামী নাম রাখা দরকার। আরবী নাম রাখলাম এমন Uncommon যা উচ্চারণ করতে দাঁত পড়ে যায়। তখন বিকৃত কোন নামে ডাকা ছাড়া উপায় থাকে না।
(৩) ঘরে নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত হওয়া দরকার। বাচ্চাদের ১/২ বছর বয়স থেকেই নবীদের ও সাহাবীদের কাহিনী ইত্যাদি শুনানো প্রয়োজন। একটু বয়স হলেই ভাল আলিম বা কারী দিয়ে কুরআন শিক্ষার হাতখড়ি হতে হবে। কথা বলতে শিখলেই কালেমা, সূরা ইখলাস প্রভৃতি তার সামনে বারবার বলে তাকে তা শিখিয়ে দিতে হবে। সবকাজে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করে তালিম দেয়া খুবই জরুরি। এটা কর- এটা আল্লাহ্ পছন্দ করেন, ওটা করো না কারণ আল্লাহ্ পছন্দ করেন না। এভাবে ভালগুন ও ভাল কাজগুলোর সাথে তাকে পরিচিত ও অভ্যস্ত করা এবং তার জীবনে আল্লাহ্ তা’লার সক্রিয় উপস্থিতি শিক্ষা দেওয়া দরকার।
(৪) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেটাই বাছুন ঘরে দ্বীনি শিক্ষা চালু রাখতে হবে। ছোটদের উপযোগী আকীদা বিষয়ক বইগুলো, ইবাদাতের নিয়মকানুন আদব ও সুন্দর আচার-ব্যবহার, ধৈর্য্যশীলতা, সহানুভূতিশীলতা প্রভৃতির তালিম ঘরেই দিতে হবে। বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এগুলো আশা করা যাচ্ছে না। Home schooling চালু করতে হবে ঘরে ঘরে।
(৫) ৭ বছর বয়স হলেই নামাযের শিক্ষা ও তাকীদ এবং ১০ বছর বয়সে নামাযে গাফলতির জন্য শাসন করতে হবে। বাচ্চাকে শাসন করা যাবে না, না বলা যাবে না এসব অনৈসলামী শয়তানী ফর্মুলা বর্জন করি। শাসন মানে গরু-ছাগলের মত মারধর নয়। তবে ন্যায়-অন্যায় বোধ সৃষ্টি এবং অন্যায় করার পরিণাম যেন বাচ্চা বুঝতে পারে এটা জরুরি। নামাযের সাথে সাথে ছোটকাল থেকেই রোজার অভ্যাস করতে হবে। সাহাবীরা খুব অল্প বয়স- পুতুল খেলার বয়স থেকেই রোজার অভ্যাস করাতেন। আর এখন ১৭/১৮/২০ বছর হয়ে গেলেও আমাদের সন্তানরা নাকি রোজা রাখার বয়সই হয়নি। সুবহানাল্লাহ্! আল্লাহ্ আমাদের বুঝ দিন।
(৬) ঘরে দ্বীনি মাহফিল, বৈঠক, ইফতার মাফফিল, কুরআন-হাদীসের দারস ইত্যাদি আয়োজন করলে সন্তানরা একটি দ্বীনি পরিবেশ ও দ্বীনি সাহচার্য পাবে। ছেলে সন্তানদের একটু বয়স হলে সাথে করে মসজিদে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
(৭) লালন-পালনের ক্ষেত্রে ছেলে মেয়েতে পার্থক্য করা যাবে না। রসূল (সা.) এটা হারাম বলেছেন। বাস্তবতা হল কন্যা সন্তানের লালন-পালনে বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। তাকেই যে ভবিষ্যত মানব শিশুকে ধারণ ও জন্ম দিতে হবে।
কন্যা সন্তানের বিষয়ে আমাদের অভিভাবক বিশেষত: মায়েদের অনীহা ও অনাচার বর্জন করা খুবই জরুরি। অথচ রসূল (সা.) বলেন-
“যখন কারো ঘরে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে, তখন আল্লাহ্ সেখানে ফেরেস্তা প্রেরণ করেন। তারা এসে বলেন, হে ঘরবাসী! তোমাদের উপর সালাম। ফেরেস্তারা ভূমিষ্ঠ কন্যাকে নিজেদের পাখার ছায়াতলে নিয়ে নেন এবং তার মাথার উপর হাত রেখে বলতে থাকেন এটা একটা দুর্বল দেহ। যা একটি দুর্বল জীবন থেকে জন্ম নিয়েছে। যে ব্যক্তি এ দুর্বল জীবনের প্রতিপালনের দায়িত্ব নিবে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্য তার সাথে থাকবে।” (তিবরানী)
(৮) ঘরে একটা ইসলামী লাইব্রেরি থাকা দরকার ছোট-খাট হলেও। বাচ্চাদের বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে ছোটকাল থেকেই।
(৯) রসূল বলেন, “মানুষ তার বন্ধুর দ্বীন অনুসরণ করে।” বাচ্চাদের বন্ধু-বান্ধব-সাথীদের দিকে নজরদারি রাখতে হবে। সৎস্বভাব দ্বীনদারদের সাথে বন্ধুত্বকে উৎসাহিত করতে হবে।
(১০) মোবাইল, টিভি, নেট এগুলো থেকে বাচ্চাদের যথাসম্ভব দূরে রাখতে হবে। যতটুকু লেখা পড়ার জন্য দরকার সাথে থেকে ততটুকু ব্যবহারই নিশ্চিত করতে হবে।
(১১) আদর্শ সন্তানের জন্য দোয়া করা আল্লাহর নির্দেশ ও নবীদের সুন্নাত। যেমন:
- ইবব্রাহিম (আ.)-এর দোয়া।
“রব্বী হাবলী মিনাস সোলেহীন।”
অর্থাৎ “হে আমার রব! আমাকে সৎকর্মপরায়ণ সন্তান দান কর।” (সূরা সফফাত ৩৭: ১০০)
-যাকারিয়া (আ.)-এর দোয়া:
“রব্বী হাবলী মিল্লাদুনকা যুররিইয়াতান তোইয়্যিবাহ।”
“হে আমার রব! আমাকে তুমি তোমার তরফ থেকে সৎ বংশধর দান কর।” (সূরা আলে ইমরান ৩: ৩৮)
অথবা যেমন কুরআনে শিক্ষা দেয়া হয়েছে: “রব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া যুরয়্যিইয়াতিনা কুররাতা আ’য়ুনিউ ওয়াজ আলনা লিল মুত্তাকীনা ইমামা।
অথাৎ “হে আমাদের রব! আমাদের জন্য এমন জীবন সংগী-সংগীনি ও সন্তান-সন্ততি দান কর যারা হবে আমাদের জন্য হবে নয়ন প্রীতিকর এবং আমাদেরকে কর মুত্তাকীদের জন্য অনুসরণযোগ্য।” (সূরা ফুরকান ২৫: ৭৪)
দোয়া করি সবাই। কুরআনের ভাষায় অথবা নিজের ভাষায়। বুঝে বুঝে আন্তরিকতা সহকারে করি।
(১২) সর্বোপরি পিতা-মাতাদের নিজেদের দ্বীনি জিন্দেগী অনুসরণ করা খুবই জরুরি। নিজেরা স্বেচ্ছাচারী জীবন যাপন করে সন্তানদের আদর্শ মানুষ করে গড়া সম্ভব নয়। নিজেরা সারাদিন টিভি নেটে বুদ হয়ে থেকে দ্বীনদার সন্তান আশা করা যায় না। তাই অভিভাবকদের নিজেদের কুরআন-হাদীসের জ্ঞান অর্জন, ইবাদাত বন্দেগীতে পাবন্দ থাকা, সৎস্বভাব ও চরিত্রের আদর্শ স্থাপন করা অপরিহার্য।
(১৩) ইসলামী প্যারেন্টিং বা সন্তান লালন-পালনের উপরে বেশ কিছু ভাল বই বাজারে পাওয়া যায়। যেমন -
১. সন্তান স্বপ্নের পরিচর্যা - মির্যা ইওয়ার বেগ;
২. শিশু মননে ঈমানের পরিচর্যা - ড. আইশা হামদান
৩. প্যারেন্টিং-এর মূলনীতি-কানিজ ফাতিমা
৪. প্যারেন্টিং-আমীর জামান ও নাজমা জামান
এগুলো সংগ্রহ করে অধ্যয়ন করলে উপকার হবে।
(১৪) পারিবারিক বৈঠক: নির্ধারিত দিন অল্প সময়ের জন্য হলেও পরিবারের সবাই একত্রিত হয়ে দ্বীনি বিষয়ে আলোচনা করা খুবই উপকারী পদ্ধতি। পরিবারে জ্ঞানের কথা আলোচনা ও নিকট লোকদের নিকট তা প্রচার করার নির্দেশ পাই আমরা সূরা আহযাব ৩৩: ৩৪ আয়াতে এবং সূরা তাওবা ৯: ১২২ আয়াতে।
পরিবারে কুরআনের দারস বা তাফসীর হতে পাঠ, দ্বীনি বিষয়গুলি আলোচনা যেমন আকীদা বিষয়ক কোন বই যেমন ড. বেলাল ফিলিপস এর “এক” বা সালেহ আল-ফাওযানের “আকীদা আত্ তাওহীদ” বা রসূলের চোখে দুনিয়া থেকে পাঠ করা যায়।
হাদীস গ্রন্থ ইমাম নববীর “রিয়াদুস সোলেহীন” এবং ইমাম বুখারীর “আল-আদাবুল মুফরদ (তাহকিককৃত)” পাঠ করা খুবই উত্তম হবে।
(১৫) মসজিদভিত্তিক শিশু-কিশোরদের জন্য প্রোগ্রাম গ্রহণ: মসজিদগুলোকে সক্রিয় করা দরকার। তুরস্কে তারাবীর পর বাচ্চাদের ইমামের সাথে খেলার ব্যবস্থা আছে। আমাদের এখানে বাচ্চাদের মসজিদে দেখলে একশ্রেণীর অতিমুসুল্লি ভীষণ বিরক্ত হন। এসব বদলাতে হবে। ইমামদের সক্রিয় হতে হবে। ঈদ, পরীক্ষা, অসুস্থতা ইত্যাদি সামনে রেখে বাসায় বাসায় যাওয়ার খোঁজ-খবর নেয়ার, উপহার-মিষ্টি ইত্যদি দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া দরকার। মসজিদ কেন্দ্রীক কুইজ প্রতিযোগিতা, সীরাত প্রতিযোগিতা, কেরাত প্রতিযোগিতা ইত্যাদির মাধ্যমে বাচ্চাদের মসজিদমুখী ও তাদের ইসলামী জ্ঞান বাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থাৎ একটা Vibrent বা কর্মচঞ্চল ইসলামী কমিউনিটি গড়তে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কে?
মহান আল্লাহ্ তা’লা বলেন-
“বল, ক্ষতিগ্রস্ত তারাই যারা কিয়ামতের দিন নিজেদের ও নিজেদের পরিজনবর্গের ক্ষতি সাধন করে। জেনে রাখ, এটাই সুস্পষ্ট ক্ষতি।” (সূরা যুমার ৩৯: ১৫)
বিপরীত দিকের চিত্রটা দেখুন:
“আর যারা ঈমান আনে এবং তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানে তাদের অনুগামী হয় তাদের সাথে মিলিত করবো সন্তান-সন্ততিকে এবং তাদের কর্মফল আমি কিছুমাত্র হ্রাস করবো না।” (সূরা তুর ৫২: ২১)
অর্থাৎ যদি এমন হয় পিতা-মাতা ও সন্তান উভয়ই জান্নাত লাভ করেছে। তবে সন্তান নিজ ঈমান ও আমলের অগ্রসরতার কারণে উচ্চতর জান্নাত লাভ করেছে। এমতাবস্থায়, উভয়কে একত্র করার জন্য আল্লাহ্ তা’লা সন্তানকে পিতামাতার জান্নাতে নয় বরং পিতা মাতাকে সন্তানের সাথে উচ্চতর জান্নাতে রাখবেন। সুবহানাল্লাহ্! নেক ও পবিত্র জিন্দেগীর কতইনা উপকার!
তাই আসুন, ঘরগুলিকে আলোকিত করতে সকলে অগ্রসর হই। মনে রাখি, নিজেকে ও আহাল তথা পরিবারের সদস্যদের জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচানোর জন্য নির্দেশ এসেছে। অতএব, এর জন্য জবাবদিহি অবশ্যই হবে। তার জন্য সবাই প্রস্তুতি নেই। সাধ্যমত চেষ্টা করি। যারা বিয়ে করেননি, বিবাহ উপযুক্ত হলে নেককার পাত্র-পাত্রী পরিবার দেখে অবিলম্বে বিয়ে করুন। নেক পরিবারের জন্য দোয়া করুন। আমাদের মত যারা বিয়ে করেছি, সন্তান-সন্ততি আছে তারা সক্রিয় হই। কেউ পিছিয়ে থাকলে হতাশ হবেন না মোটেও। আল্লাহর রহমত আমাদের ব্যর্থতার মাত্রার চেয়েও অনেক অনেক গুণ বেশী। উনার কাছে নেক পরিবার ও সন্তানের জন্য দোয়া করি। বিশেষত: রমজানের এই শেষ বেলায় বেশী বেশী করি, সবসময় করি, রাত্রিতে তাহাজ্জুদে করি। আদর্শ নাগরিক চাই, আদর্শ জাতি চাই, আখিরাতে জান্নাত চাই। নিজেরা নেককার হই, চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জন করি। নেক পরিবার গঠনে অগ্রসর হই। মহান আল্লাহ তা’লা সকলের সহায় হোন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.