ওরা ছিল কয়েকজন যুবক
- Details
- by এহসানুল কবীর
মহান আল্লাহ তা’লা বলেন, “----- ওরা ছিল কয়েকজন যুবক, ওরা তাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদের সৎ পথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেছিলাম।” (সূরা কাহাফ ১৮:১৩)
তুরস্কে আসহাবে কাহাফের গুহা, ফাইল ছবি
আসহাবে কাহাফ! সত্যের প্রতি অবিমিশ্র অনুরাগ ও আনুগত্য, সত্যের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের এক নিরন্তর সত্য ঘটনা।
স্থান- এফিসোস নগরী। বর্তমান তুরস্কের ইজমির থেকে ২০-২৫ মাইল দক্ষিণে এ শহরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। সময়- ঈসা (আ.) এর জন্মের প্রায় আড়াইশ বছর পর। রোম সম্রাট দাকিয়ানুস ঈসা (আ.)-এর প্রকৃত অনুসারীদের চরম নির্যাতন চালাচ্ছে। দাকিয়ানুস ও এফিসোস নগরীর মানুষেরা ছিল মূর্তিপূজারী মুশরিক। দেবী ডায়ানার পূজারী। এমনি সময় রাজপরিবারের কতিপয় যুবক তাওহীদের শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং শিরকী আকীদা বর্জন করে তাওহীদী আদর্শ অনুসরণ করা শুরু করে। তারা ঘোষণা করে বসে,
“-----আমাদের প্রতিপালক আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক। আমরা সকলেই তাঁর পরিবর্তে অন্য কোন ইলাহকে আহবান করবো না। যদি করে বসি, তবে তা হবে অত্যন্ত গর্হিত কাজ। আমাদের এই স্বজাতির মানুষেরা তাঁর পরিবর্তে অনেক ইলাহ গ্রহণ করেছে। এরা এই সমস্ত ইলাহ সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? যে আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে তার চেয়ে বেশী জালিম আর কে?” (সূরা কাহাফ ১৮: ১৪-১৫)
যুবকদের মধ্যে ঘটে যাওয়া এ বিপ্লব এবং প্রচলিত বিশ্বাস ও ঐতিহ্য প্রত্যাখ্যানের তাদের মনোভাব এককান দু’কান হয়ে সম্রাটের কানে গেল। সে তাদের তিন দিন সময় দিল সংশোধনের - নিজ ধর্ম ও ঐতিহ্যের দিকে ফিরে আস নইলে মৃত্যুদন্ড। এই অবকাশের সুযোগে যুবকেরা গোপনে নিজ শহর থেকে হিযরত করলো। পথিমধ্যে এক কুকুর তাদের সাথী হল। এক পর্যায়ে তারা আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিল এক বড়সর বিস্তৃত গুহাকে। পরিশ্রান্ত যুবকেরা সেখানে ঘুমিয়ে পড়লো। এভাবে কেটে গেল কয়েক শত বছর। দাকিয়ানুসের রাজত্ব শেষ হয়েছে। রোমানরা খৃষ্টধর্মে দিক্ষিত হয়েছে। কিন্তু ততদিনে ঈসা (আ.)-এর রেখে যাওয়া তাওহীদী বিশ্বাসের মধ্যে ঢুকে গেছে নানা বিকৃতি। এর মধ্যে অন্যতম হল আখিরাতে অবিশ্বাস। তৎকালীন রোম সম্রাট জাতির এ বিকৃতিতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
এমতাবস্থায়, আল্লাহ্ তা’লার ইচ্ছায় ঐ যুবকদের ঘুম ভাঙল। স্বভাবতঃই তারা ক্ষুধার্ত। তাদের একজনকে তারা শহরে পাঠালো খাবার কিনে আনতে। খাবারের দাম মেটাতে গিয়ে লাগলো বিপত্তি। কয়েকশ বছর আগের মুদ্রা দেখে লোকদের সন্দেহ সে হয়তো কোনো গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছে। খোঁজ-খবর নিলে প্রকৃত অবস্থা বের হয়ে আসলো। বাদশাহ নিজে এসে তাদের সাথে দেখা করলো। অতঃপর যুবকেরা আবার গুহায় প্রবেশ করে শুয়ে পড়লো। এবার তারা সত্যই মৃত্যুবরণ করলো। এ ঘটনায় আখিরাতের বিষয়ে সন্দিহানদের সামনে মৃত্যুর পর জীবন সর্ম্পকে আর সন্দেহ রইলো না। এভাবেই আল্লাহ তা’লা ঈমানের দাবীতে বলিয়ান একদল যুবককে হিফাযত করলেন। আবার তাদের দ্বারাই পরবর্তী সময়ের মানুষদের ঈমানী সংস্কারের ব্যবস্থা নিলেন।
আসহাবে কাহাফের যুবকেরা কয়জন ছিলো? তিনজন, পাঁচজন, সাতজন? তারা কতকাল সেখানে ছিল তিনশ বছর না তিনশত নয় বছর?- এ বিতর্কের সাথে এ ঘটনার মূল শিক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই। এ সব আল্লাহ্ই ভাল জানেন। (কাহাফ: ২২-২৬)
তিনি নির্দেশ দিলেন-
“সাধারণ আলোচনা ব্যতীত তুমি তাদের বিষয়ে বিতর্ক করো না---।” (কাহাফ: ২২)
কিন্তু আমাদের যে ঝোঁক সেদিকেই– কতজন, কোথায়, কতকাল? পরিসংখ্যানের জঞ্জালে শিক্ষার খোঁজ নেই।
সূরা কাহাফে, আসহাবে কাহাফের সাথে সাথে মূসা (আ.) ও খিজির (আ.) এবং যুলকারনাইনের ঘটনার বর্ণনা এসেছে। নবী (সা.) জুমুআ’র দিন বিশেষ করে সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করতে বলেছেন। তাহলে দাজ্জালের ফিতনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে। গোটা সূরা না পারলে অন্তত প্রথম ১০ আয়াত না হয় শেষ ১০ আয়াত পড়তে বলেছেন তিনি।
দজ্জালের ফিতনা থেকে নবীগণ (আ.) পানাহ চাইতেন। কি এমন জরুরি শিক্ষা আছে এ ঘটনাগুলোয় যা আমাদেরকে সে ভয়াবহ ঈমান বিধ্বংসী ফিতনা থেকে রক্ষা করবে? আর না বুঝে কেবল কুরআন তেলাওয়াত করলেই বা সে শিক্ষা কিভাবে পাওয়া যাবে চিন্তার বিষয়?
আসহাবে কাহাফের ঘটনায় মোটা দাগে শিক্ষা হল:
(১) ঈমানের পথে দৃঢ়তা অবলম্বনের শিক্ষা,
(২) আল্লাহ্ তা’লা তাঁর অনুগত বান্দাদের সর্বাবস্থায় রক্ষা করেন এমনকি স্বাভাবিক অবস্থার সম্পূর্ণ ব্যত্যয় ঘটিয়ে হলেও, এবং
(৩) আখিরাতের বাস্তবতা ও অবশ্যম্ভাব্যতা
কত বছর বয়স পর্যন্ত কাউকে যুবক ধরা হবে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। জাতিসংঘের বিবেচনায় ১৫-২৪ বছর পর্যন্ত বয়সকালকে youth বা যৌবন ধরা হবে। রাশিয়ায় ধরা হয় ১৪-৩৫ বছর পর্যন্ত। বৃটিশদের মতে, ৪০ বছরে পৌঁছলে আর নিজেকে young বা যুবক বলা যাবে না।
এ সবই সংখ্যা তত্ত্ব। তবে যৌবনের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন-
- গভীর আবেগ ও প্রচন্ড সাহসিকতা,
- প্রাণবন্ত,
- সংস্কার ও পরিবর্তনের প্রতি প্রবল ঝোঁক,
- উচ্চতর আদর্শের জন্য কুরবানীর স্পৃহা,
- সম্পর্কের টানাপোড়েন মুক্ত,
- সম্পদের প্রতি লালসামুক্ত,
- উন্মুক্ত হৃদয়,
- নিজেকে চ্যালেঞ্জ, পরিবর্তন ও সংস্কারের সাহস।
যৌবনকালের সাথে বয়সের একটা সাধারণ যোগসূত্র আছে। যত বয়স বাড়ে মানুষের অভিজ্ঞতা বাড়ে। সেই সাথে বাড়ে আরো অনেক কিছু হিসাব নিকাশ করার প্রবণতা, বৈষয়িক স্বার্থের প্রতি আকর্ষণ, দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল, স্বার্থান্ধতা ইত্যাদি নেতিবাচক দিক। তখন আর যৌবনের উচ্চ নৈতিকতা অনেকের মধ্যে অবশিষ্ট থাকে না। আবার অনেকের ব্যাপারে কথা হল-
“আমার মনের বয়স বিশ, আর বৃক্ষ তার ঝরা পাতার হিসেব রাখে না।”
নবী (সা.) ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত পেয়েছেন, আর ৬৩ বছর বয়সে মরুভূমির প্রচন্ড রোদ উপেক্ষা করে উটে চড়ে তবুক অভিযানে স্বশরীরে অংশ নিয়েছেন। আর সাহাবী আবু আইয়্যুব আনসারী (রা.) ৮০ বছর বয়সে কন্সটান্টিলোপল অভিযানে শরীক হয়েছেন। বৃটিশরা বলে ৫৯ বছরে বার্ধক্য শুরু হয়। আসলে বার্ধক্য শুরু মনের ক্লান্তিতে, জীবনের উচ্চতর লক্ষ্য ফুরিয়ে গেলে তা সে ১৪ তেও হতে পারে ২৫ শেও হতে পারে।
ইসলাম ও যুব সমাজ
ইসলামে যুব সমাজের শ্রেষ্ঠ আদর্শ কে? উত্তর হবে, নিঃসন্দেহে স্বয়ং রসূলুল্লাহ্ (স.)।
এরপর আসবে ৪ খলিফার নাম যারা সবাই ইসলাম কবুল করেছেন প্রায় ১০-৩৫ বছর বয়সের মধ্যে। অতঃপর আশআরে মুবাশশারার (জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ১০ জনের) বাকী ৬ জন। আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ, আরাকাম ইবনে আরাকাম, বিলাল, সালমান ফারসী, সুহাইব রুমী, খাববাব, খুবাইব, আম্মার, খালিদ বিন ওয়ালিদ, ইকরামা বিন আবু জাহল, আমর ইবনুল আস, সাঈদ ইবনে আমর জুমাহী- তালিকা কেবল দীর্ঘ করা যাবে নাম ফুরাবে না। ইসলাম যুবকদের দ্বীন। ইসলাম মানুষের মধ্যে যৌবনের প্রকৃত চেতনা সৃষ্টি করে। বৃদ্ধকেও করে দেয় যুবকদের মতো চনমনে টগবগে।
জাতিসংঘের হিসাব মতে, বিশ্বে ১৬% মানুষ যুবক (তাদের বয়সসীমা অনুযায়ী)। বাংলাদেশে ২৬.৭৫%। অর্থাৎ জনগণের প্রায় এক তৃতীয়াংশ যুব সমাজ। Pew research center-এর সমীক্ষা অনুযায়ী মুসলিম বিশ্ব বিশ্বের সবচেয়ে বেশী যুব জনগোষ্ঠীর অধিকারী।
ইসলামের ইতিহাসে আমরা যুবসমাজের ব্যাপক ইতিবাচক ভূমিকা দেখতে পাই। বস্তুত: রসূলুল্লাহর (সা.) নেতৃত্বে এই যুবকরাই পৃথিবীর ইতিহাস পরিবর্তন করে দিয়েছেন।
ইসলাম এসেছে বিশ্বকে কল্যাণের পথ দেখাতে, দুনিয়ার কল্যাণ ও আখিরাতের কল্যাণ। যুব সমাজ একটা জাতির প্রাণশক্তি। কল্যাণের পথে দ্বিধাহীন, ভয়হীন অভিযাত্রী। মুসলিম যুব সমাজকে এ দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত করতে হবে, তাদের প্রস্তুত হতে হবে। ইসলামের উপর চলার জন্য ইসলামকে জানতে হবে, ইসলামী চরিত্র বৈশিষ্ট্য ও নৈতিকতা ধারণ করতে হবে। নিজের পারিপার্শ্বিক জীবন ও জগৎ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। চরিত্র বিধ্বংসী আকীদা বিশ্বাস, আমল-আখলাক, কার্যক্রমগুলি বর্জন করতে হবে।
রমজান আর সবার মতো যুব সমাজের সামনে আত্মপরিচর্যার ও আত্ম-উন্নয়নের সুযোগ নিয়ে এসেছে। আমাদের নিজেদের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে যুব সমাজকে দ্বীনের দিকে অগ্রসর করা এবং তাদের এদিকে গাইড করা জরুরি। সকলের সম্মিলিত প্রয়াশ ছাড়া কোনো কল্যাণময় কাজই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ্ তা’লা সকলকে বুঝ ও তাওফীক দান করুন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.