আপনি পড়ছেন

‘‘...আমার সাথে তোমাদের ওয়াদা পূর্ণ করো, আমিও তোমাদের সাথে আমার ওয়াদা পূর্ণ করবো’’ (সূরা বাকারাঃ ২:৪০)। এ আয়াতখানা পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ৫ম রুকুর ১ম আয়াতের অংশবিশেষ। এ আয়াত হতে দীর্ঘ ১০ রুকু-ব্যাপী বনী-ইসরাঈল জাতির বর্ণনা এসেছে।

the holy quaran studyইহা (আল কুরআন) সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই (বাকারা-২), ফাইল ছবি

সুরা বাকারার ৫-১৪ রুকু বনী ইসরাঈলিদের জাতীয় ইতিহাস ও চরিত্রের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য নিম্নরূপ-

প্রথমত: আহলে কিতাব জাতি হিসেবে শেষ নবীর পরিচয় নিশ্চিতভাবে জানা সত্ত্বেও নবী (সা.)-কে তারা অস্বীকার করেছিল। আজও করছে। তাদের আচরণের প্রতিবাদ করা হয়েছে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ইতিপূর্বে আল্লাহর হুকুম লংঘন ও নবীদের নাফরমানী করার অপরাধে তাদের উপর বারবার আল্লাহর গজব নেমে এসেছে। তারা সংশোধিত না হলে পুনরায় তাদের একই পরিণতি ঘটবে। একই সাথে তাদের নবী (সা.) এর দাওয়াত কবুল করে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

দ্বিতীয়ত: সুরা বাকারার শুরুতেই মানব জাতির পরিচয় ও তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে হেদায়াত এসেছে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহর দৃষ্টিতে মানুষ মুমিন-মুত্তাকী, কাফের ও মুনাফিক এই ৩ ভাগে বিভক্ত। এদের পরিচয় ও পরিণাম ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রথম দুই রুকুতে এই হিদায়াতের পর ৩য় ও ৪র্থ রুকুতে মানুষের দায়িত্ব-কর্তব্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে। মানুষ আল্লাহর বান্দা ও খলীফা। বান্দা হিসেবে সার্বিক জীবনে সে আল্লাহর অনুগত হয়ে জীবনযাপন করব। এটাই ইবাদাত। এবং আল্লাহর খলীফা হিসেবে সে তার পারিপার্শ্বিক জগতটা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা’লার বিধিবিধান অনুযায়ী পরিচালনা করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। এই দায়িত্ব কর্তব্য পালনের হিদায়াতের জন্যই আল্লাহ কিতাব নাযিল করেছেন। নবী প্রেরণ করেছেন।

শেষ কিতাব আল-কুরআন, শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)। আল্লাহর এই দায়িত্ব-কর্তব্য ইতিপূর্বে বনী ইসরাঈল জাতির উপর ন্যস্ত ছিল। তাদের মধ্যে অসংখ্য নবী রসুল এসেছে। ৪ খানা বৃহৎ কিতাবের ৩টিই তাদের উপর নাযিল হয়েছে। কিন্তু তারা বারবার পথ হারিয়েছে। হিদায়াতবিমুখ জীবন পছন্দ করেছে। এর পরিণামে তাদের জাতীয় জীবনে বারবার বিপর্যয় নেমে এসেছে। তাদের এই ইতিহাস থেকে উদাহরণ তুলে ধরে শেষ নবী (সা.) এর উম্মত অর্থাৎ আমাদের হিদায়াত দেওয়া হয়েছে যে, তাদের মতো আচরণ করলে আমাদেরও একই পরিণাম ভোগ করতে হবে।

তৃতীয়ত: নবী (সা.) এর নেতৃত্বে মদীনায় যখন ইসলামী সমাজ গড়ার কাজ শুরু হয় তখন মদীনার ইহুদীরা ইসলামকে প্রতিহত করার জন্য সর্বমুখী চক্রান্ত শুরু করে দিল। তারা ধার্মিক, বুজুর্গ ও নেকপরস্ত হওয়ার ভান করতো। একইসাথে নবী (সা.), তার পরিবার ও মুসলামানদের বিরুদ্ধে অপবাদ রটানো ও বিরূপ প্রচারণা চালানো; রসুলুল্লাহ (সা.) ও মুসলিম নেতৃবৃন্দকে হত্যার প্রচেষ্টা; ইসলাম ও ইসলামী শরীয়াতের বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো; আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলামবিরোধী জোট ও দারুল ইসলাম- মদীনার উপরে হামলায় তাদের উদ্বুদ্ধ ও সহযোগিতা করা- ইত্যকার সমস্ত ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে মদীনার মুনাফিকদের নিয়ে তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করতো।

আজও তাদের এহেন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। উপায়-উপকরণ ও পদ্ধতি আরো শক্তিশালী হয়েছে। তাদের ভাল-মানুষির মুখোশ উন্মোচন করে তৎকালীন ও অনাগত মুসলমানদের সতর্ক করা হয়েছে। সব যামানায় মুসলমানদের অত্যন্ত সতর্কতার সাথে খোলা মন নিয়ে আল-কুরআনের হেদায়াতের আলোকে এসব চক্রান্তকে উপলব্ধি করতে এবং এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এই আলোচনার শেষে সুরা বাকারার ১৪তম রুকুর শেষ দুই আয়াতে ইহুদি-নাসারাদের আনুগত্য করতে ও তাদের চিন্তাধারা ও মতবাদ অনুসরণ করতে মুসলমানদের কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে-

"ইহুদী ও খ্রিস্টানরা তোমার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর। বল ‘আল্লাহর হেদায়াতই প্রকৃত পথনির্দেশ।' জ্ঞানপ্রাপ্তির পর তুমি যদি তাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করো তবে আল্লাহর বিপক্ষে তোমার কোনো অভিভাবক থাকবে না এবং কোনো সাহায্যকারীও থাকবে না।” (সুরা বাকারা ২ : ১২০)

আহলে কিতাবীদের বিভ্রান্ত মত-পথ বর্জন করে আল-কুরআনকে যথাযথভাবে অধ্যয়ন ও অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—

"যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি তাদের মধ্যে যারা তা যথাযথভাবে তিলাওয়াত করে (অর্থাৎ তা বুঝে, হৃদয়ঙ্গম করে ও অনুসরণ করে) তারাই এতে বিশ্বাস করে। আর যারা তা প্রত্যাখ্যান করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।” (বাকারা ২ :১২১)

চতুর্থত: সুরা বাকারা ও কুরআন মাজীদের অন্যত্র বনী-ইসরাঈলীদের দীর্ঘ আলোচনা হতে আমরা আল- কুরআনের ইতিহাস দর্শন সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা পাই। আল-কুরআনে কেবল কোনো ঘটনা বা কোনো জাতির ইতিহাস বর্ণনা বা কারো কেবল সমালোচনা করার জন্যই ইতিহাসের আলোচনা আসেনি। বরং এর দ্বারা সমকালীন ও পরবর্তী সময়ের মানুষের বিশেষ করে মুসলমানদের বাস্তব হেদায়াত দান করা হয়েছে—

“আমি ইহা তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীদের শিক্ষাগ্রহণের জন্য দৃষ্টান্ত ও মুত্তাকীদের জন্য উপদেশস্বরূপ করেছি।’’ (বাকারা ২ :৬৬)

কুরআন মজীদের অন্যত্র বলা হয়েছে:

"রসুলদের এইসব বৃত্তান্ত আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি যা দিয়ে আমি তোমার অন্তরকে দৃঢ় করি, এর মাধ্যমে তোমার নিকট এসেছে সত্য এবং মুমিনদের জন্য এসেছে উপদেশ ও সাবধানবাণী।" (সুরা হুদ ১১ :১২০)

তাই আল-কুরআনে উল্লেখিত ঐতিহাসিক আলোচনাগুলি অধ্যয়ন করার সময় এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে এবং নিজ নিজ যুগ, সময়, জাতি ও ব্যক্তিদের পরিচয় বুঝে নিতে এবং তাদের বিষয়ে হেদায়াত খুঁজে নিতে হবে।

বনী-ঈসরাইল জাতির প্রতি আল্লাহর নেয়ামত

আল্লাহ তা’লা বলেন, "আমি তো বনী-ঈসরাইলকে কিতাব, কর্তৃত্ব ও নবুয়ত দান করেছিলাম এবং তাদেরকে উত্তম রিযিক দিয়েছিলাম এবং দিয়েছিলাম শ্রেষ্ঠত্ব বিশ্বজগতের উপর।" (সুরা জাসিয়া ৪৫ :১৬)

বস্তুত তারাই ছিল সে সময়ের আল্লাহর হিদায়াতপ্রাপ্ত জাতি। কিতাব ও নবুয়তের উত্তরাধিকারী এবং বিশ্বজগতের উপর নেতৃত্বে আসীন। আল্লাহর এই নিয়ামত শর্তহীন ছিল না:

“আমি তোমাদের সাথে আছি; তোমরা যদি সালাত কায়েম করো, যাকাত দাও, আমার রসুলগণে ঈমাণ আন ও তাদেরকে সম্মান করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও তবে আমি তোমাদের পাপ অবশ্যই মোচন করবো এবং তোমাদেরকে দাখিল করবো জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। এরপরও কেউ কুফরি করলে সে তো সরল পথ হারাবে।" (সুরা মায়িদা ৫ :১২)

কিন্তু বনী-ইসরাঈল আল্লাহর সাথে করা ওয়াদাগুলো ভঙ্গ করলো। ফলে—

“তাদের ওয়াদা ভঙ্গের জন্য আমি তাদের অভিশপ্ত করেছি ও তাদের হৃদয় কঠিন করে দিয়েছি” (সুরা মায়িদা ৫:১৩)

“তারা মনে করেছিল তাদের কোনো শাস্তি হবে না ফলে তারা অন্ধ ও বধির হয়ে গিয়েছিল।" (সুরা মায়িদা ৫:৭১)

শেষ নবী (সা.) এর নবুয়ত প্রাপ্তির পর বনী-ইসরাঈলকে সংশোধনের শেষ সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা তা গ্রহণ না করে সত্য প্রত্যাখ্যানের ধারা অব্যাহত রাখে। ফলে তারা কিতাব ও নবুয়তের উত্তরাধিকার ও বিশ্বনেতৃত্ব থেকে অপসারিত হয়। উম্মতে মুহাম্মদীর উপর তা অর্পণ করা হয়।

আল্লাহর প্রতি ওয়াদাবদ্ধ আমরাও

মানবজাতি আল্লাহর প্রতি ওয়াদায় আবদ্ধ দুভাবে-

প্রথমত: রুহের জগতে। যখন মানবসৃষ্টির প্রারম্ভে সমস্ত মানবাত্মাকে একত্রিত করে আল্লাহ তা'লা তাদের জিজ্ঞাসা করেন—

“আমি কি তোমাদের রব নই?”
আমরা সকলেই স্বীকৃতি দিয়েছি-
"হ্যাঁ অবশ্যই আমরা সাক্ষী থাকলাম"
(সুরা আরাফ ৭:১৭২)

বস্তুত এই অঙ্গীকারের জন্যই প্রতিটি মানুষ তার নিজের মধ্যে একজন প্রভুকে মেনে চলার প্রবল চাহিদা অনুভব করে। সত্যানুসন্ধী মানুষকে আল্লাহ তার পথ দেখান (আনকাবুত ২৯:৬৯)। এ উদাহরণ আমরা সব যামানায় সব জাতির মধ্যে দেখতে পাই। রসুল (সা.)-এর সাহাবিদের (রা.) থেকে শুরু করে আজ অবধি। যে-ই সত্য প্রভুকে খোঁজার চেষ্টা করেছে সে-ই তাঁর হেদায়াত লাভ করেছে। আর যারা দুনিয়ার নগদ স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে তাদের সামনেও সত্যকে উদ্ভাসিত করা হয়েছিল। কিন্তু তারা আত্মপ্রতারিত হয়ে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অপর কাউকে বা কিছুকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছেন। কেউ ফিরআউনের মতো ক্ষমতাকে, কেউ ফিরআউন বা তার মতো ক্ষমতার অধিকারীদের, কেউ কারুনের মতো ধন-সম্পদকে, কেউ নিজের নফসকে (ফুরকান ২৫:৪৩) আবার কেউবা পাদ্রী-পুরোহিত ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে (তাওবা ৯:৩১)।

দ্বিতীয়ত: ঈমান আনার মাধ্যমে। কালেমা তাইয়্যেবা স্বীকার করার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা জাতি একমাত্র আল্লাহকে তার ইলাহ এবং আল্লাহ প্রেরিত নবী বা রসুলকে কবুল করে নেয়। আল্লাহকে ইলাহ মানার অর্থ হল তাঁকে নিজের একমাত্র প্রভু, সর্বময় ক্ষমতার মালিক ও সিদ্ধান্ত দানের সবোর্চ্চ ও একমাত্র সত্ত্বা হিসেবে মেনে নেওয়া। আর নবীকে কবুল করার তাৎপর্য হল- আল্লাহ তা'লাকে মানার একমাত্র আদর্শ হিসেবে তার প্রেরিত রসুলকে অনুসরণের জন্য ওয়াদা করা।

আমরা মুসলিম উম্মাহও আল্লাহর সাথে সে অঙ্গীকারে আবদ্ধ

"স্মরণ কর (স্মরণ রাখ), তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং যে অঙ্গীকারে তিনি তোমাদের আবদ্ধ করেছিলেন তা। যখন তোমরা বলেছিলে, 'শুনলাম ও আনুগত্য করলাম' আর আল্লাহকে ভয় কর; অন্তরে যা আছে সে সম্বন্ধে আল্লাহ তো খুব ভালোভাবে খবর রাখেন।" (মায়িদাহ ৫:৭)

কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে উম্মাতে মুসলিমার এই অঙ্গীকারের কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন- সুরা বাকারার ২৮৫ নম্বর আয়াতে।

এ ওয়াদার মাধ্যমে আমরা সমগ্র জীবনে আল্লাহর নির্দেশের অনুগত হয়ে চলা তথা আল কুরআনকে মেনে চলার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছি। আল কুরআনের নির্দেশ মানার একমাত্র আদর্শ হিসেবে শেষ নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহকে মেনে চলাকে নিজেদের জন্য শর্ত করে নিয়েছি।

যখন উম্মত এ ওয়াদার উপর কায়েম ছিল তখন তাদের উপর আল্লাহর নেয়ামত বর্ষিত হয়েছে অবিরাম। তারা বিশ্ব নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত ছিল প্রায় এক হাজার বছর। কিন্তু যখন আমরা ইসলামকে ত্যাগ করেছি, মানবরচিত মত-পথকে কল্যাণের উৎস মনে করেছি, স্বেচ্ছাচারী জীবনযাপন করেছি তখনই বিপর্যয় নেমে এসেছে। যেমন নেমে এসেছিল বনী- ইসরাঈলের উপর।

বদলে যাও, নয়তো বদলে দেওয়া হবে

কোনো জাতিকেই আল্লাহ তা'লা যা ইচ্ছা তাই করার OGL (Open General License) দেননি। আল্লাহ তা'লা বলেন:

"হে মুমিনগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ দ্বীন থেকে ফিরে গেলে নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং যারা তাকে ভালবাসবে; তারা মুমিনদের প্রতি কোমল এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে; তারা আল্লাহর পথে অবিরাম সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবে না; এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন এবং আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।" (সুরা মায়িদা ৫:৫৪)

বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহ আজ যে বিপর্যয়ের মুখোমুখি তার ভিত্তি এই আয়াত। মনে রাখি আল-কুরআন নাযিল হওয়ার পরে যা কিছু ঘটেছে এবং ঘটবে তার সবের বর্ণনা আল্লাহ পাক তাঁর এই কিতাবে মওজুদ রেখেছেন। যেন আমরা করণীয় বুঝতে পারি। পথ হারালে পথ চিনে ফিরতে পারি।

আল্লাহপাক কুরআন দিয়েই আমাদের পথ দেখিয়েছেন। ইসলাম দিয়েই বিশ্বের বুকে আমাদের সম্মানিত করেছেন। নবীর আদর্শের মধ্যেই আমাদের জন্য কল্যাণময় ব্যবস্থা রেখেছেন।

আমরা পথ হারালাম, স্ত্রীর কবরে তাজমহল বানালাম, শালিমার বাগানে আনন্দ ফূর্তিতে ডুবে গেলাম, শঠতা-ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা দখল করাকে নিজের জীবনের লক্ষ্য বানালাম, দ্বীন সম্পর্কে উদাসীন থেকে কেবল খেয়ে পড়ে জীবন কাটানোকে জীবনের উদ্দেশ্য করে নিলাম। ফলে নেমে এল শত শত বছরের বিজাতীয় ঔপনিবেশিক শাসন। শাসন কর্তৃত্ব তো বটেই, মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকার হারালাম। জেগে উঠার সংগ্রাম করলাম। ইসলাম ছেড়ে জাতীয়তাবাদ ও মনগড়া মতবাদের চোরাবালিতে আটকে গেলাম। মনে রাখি, ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো পথে মুক্তি আসবে না। রাজনীতি বলেন আর সংস্কৃতিই বলেন- ইসলামই আমাদের চলার পথ। মনে রাখি, আল্লাহ নিজ থেকে আমাদের ভাগ্য বদলে দেবেন না:

"আর আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজ অবস্থা পরিবর্তন করে" (সুরা রাদ ১৩: ১১)

নিজেকে বদলে ফেলার মওসুম রমাদান

উম্মতের আত্মশুদ্ধি ও আত্মোন্নয়নের লক্ষ্যে যে সব নেয়ামত মহান আল্লাহতা'লা আমাদের দিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হল রমাদান। বস্তুত রমাদান এক বিশ্ববিদ্যালয়। নিজেকে আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হিসেবে উন্নীত করার শিক্ষাকেন্দ্র।

রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন:

"ঈমান ও ইহতিসাব সহকারে যে রমাদানের রোজা রাখলো তার অতীতের সব গুনাহ খাতা আল্লাহ পাক মাফ করে দেন।" (বুখারী)

ইহতিসাব শব্দের সাধারণ অর্থ আল্লাহর নিকট সওয়াব লাভ, তাঁকে সন্তুষ্ট করা। আরো গভীরে এর তাৎপর্য- হিসাব নেওয়া, হিসাব করা, আত্মসমালোচনা করা। আত্মসমালোচনা ও আত্মযাচাই করা- আল্লাহ, আমার মহান রব যাতে সন্তুষ্ট আমি কি সেই পথে হাঁটছি? নাকি আগের মতোই আছি? আমি কি তাঁকেই সবকিছু থেকে বেশি ভালোবাসি? তাঁর হুকুম ও নির্দেশ পালনকে কি সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেই?

তাঁর দেখানো জীবন ব্যবস্থা দ্বীন-ইসলাম জানা, মানা ও তা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় আমি কতদূর অগ্রসর হলাম? নাকি রোজা চলে যাচ্ছে, আমি এখনো ইফতারের মেন্যু নিয়ে ব্যস্ত আছি? ঈদের প্রস্তুতি কতদূর তা নিয়ে ভুলে আছি জীবনের প্রকৃত লক্ষ্যকে? চিন্তা করি, ঐচ্ছিক কাজ হিসেবে নয়। এই চিন্তাটাকে রমাদানের শর্ত হিসেবে গণ্য করি। নিজেকে বদলে ফেলার সময় চলে যাচ্ছে। প্রিয় ভাই ও বোন। রমাদান চলে যাচ্ছে। সামনেই কদরের অন্বেষণ। ভাগ্যকে নতুন করে লেখার সুযোগ। সৌভাগ্যবানদের কাতারে যোগ দেওয়ার হাতছানি। চিরন্তন কল্যাণের অধিকারী হওয়ার সম্ভাবনা। হেলা ফেলা না করি। নিজেকে বদলে ফেলি-

"হে প্রশান্ত চিত্ত!
তুমি তোমার রবের দিকে ফিরে এসো
সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে
আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হও,
আর আমার জান্নাতে প্রবেশ করো"

                                               (সুরা ফাজর ৮৯: ২৭-৩০)

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.