আপনি পড়ছেন

রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের অফুরন্ত সুযোগ নিয়ে দরজায় হাজির পবিত্র রমজান। শনিবার, ২ এপ্রিল, বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরি সনের চাঁদ দেখা গেছে। রোববার থেকে শুরু হচ্ছে মহিমান্বিত এই মাস। টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের পক্ষ থেকে সব পাঠক, শুভাকঙ্ক্ষী তথা দেশবাসীর প্রতি রইল মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।

ramadan 2022 welcomeফাইল ছবি

আল্লাহ সুবহানুওয়া তা’য়ালা তাঁর পবিত্র কালামে বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য— যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৩।

অর্থাৎ এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ পাক মুমিনদের জন্য রোজা ফরজ করেছেন। এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়, যা নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা দরকার। আয়াতে বলা হচ্ছে, রোজা ঈমানদারদের জন্য ফরজ। তার মানে যারা বুঝে-শুনে কালেমা তাইয়্যেবা তথা লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সা.)— অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা, বিধানদাতা একমাত্র আল্লাহ এবং যা কিছু করব তা একমাত্র মুহাম্মাদ (সা.) এর দেখানো ও শেখানো পথে করব— মেনে নিয়েছেন, তাদের জন্য রোজা। তারাই রোজার ফায়দা পাবেন। কারণ ঈমান ঠিক না থাকলে শুধু রোজা নয়, অন্য যেকোনো ইবাদতের বিনিময় পাওয়া যাবে না।

তাই কোনো ইবাদত করার আগে ঈমান ঠিক করতে হবে। অর্থাৎ শিরক ও বিদআত মুক্ত ঈমান আনতে হবে। যেমন- অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও নানা প্রক্রিয়ায় রোজা পালন করেন, কিংবা অন্যান্য ভালো কাজ করেন। তাই বলে কি তারা আল্লাহর কাছে এর বিনিময় দাবি করতে পারবেন? না পারবেন না। কারণ আল্লাহ বলেছেন, ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম বা জীবন ব্যবস্থা তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। সুরা আলে-ইমরান: আয়াত ১৯।

এরপর বলা হচ্ছে, রোজা ফরজ করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা ঈমানের দাবিদার, তাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের অবশ্যই এই বিধান পালন করতে হবে। মন চাইল রোজা করলাম, মন চাইল না রোজা করলাম না— বিষয়টা এমন নয়। অথচ দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের সমাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটাই ঘটছে। কেউ কেউ প্রথম ও শেষের রোজাটা করছি, আবার কেউ ৫, ৭ বা ১০টা রোজা করছি। এ রকম যার মন যা চায় অথবা নিজে যা বুঝি সেটাই করছি। অথচ এর সঙ্গে কুরআন ও সুন্নাহ তথা হাদীসের কোনো সম্পর্ক নেই।

আয়াতে আরেকটি বিষয় বলা হয়েছে যে, এই রোজার বিধান শুধু উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য নয়। বরং পূর্ববর্তী জাতিগুলোর জন্যও রোজার বিধান ছিল। তবে একেক জাতির রোজা পালনের ধরন একেক রকম ছিল। যেমন- যে জাতি বেশি কথা বলতো, তাদের কথা বলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। আবার যুদ্ধবাজ জাতির জন্য রোজা রেখে খাপ থেকে তলোয়ার বের করা নিষেধ ছিল। অর্থাৎ যে জাতির যে সমস্যাটি প্রকট, সেটিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হয়েছে।

উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রধান সমস্যা পানাহার ও কামাচার। এ জন্যই আমাদের রোজায় এই দুটি বিষয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। রোজা রেখে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অর্থাৎ সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বৈধ তথা হালাল খাবার ও স্ত্রীও নিষিদ্ধ। এখান থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, রোজা হল আল্লাহর হুকুম মানার প্রশিক্ষণ। এক মাসের এই দীর্ঘ প্রশিক্ষণ নিয়ে মানুষ যাতে বাকি ১১ মাস আল্লাহর বিধানের ওপর কায়েম থাকতে পারে, সেজন্যই প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে আসে এই মাস।

সবশেষ যে বিষয়টি আল্লাহ বলেছেন, সেটি হলো রোজার উদ্দেশ্য। আল্লাহ বলেছেন, রোজার বিধান তাকওয়া অর্জনের জন্য। তাকওয়া একটি গুণ, যার মাধ্যমে বান্দার মধ্যে আল্লাহর ভয় তৈরি হয়। আর এই গুণ অর্জনের মাধ্যমে সে হয়ে উঠে মুত্তাকি। যেমন- রোজা রেখে কেউ অতি গোপনেও এক ঢোক পানি পান করেছে, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ সে জানে, আমি যদি পানির মধ্যে ডুব দিয়েও পানি পান করি, তাহলেও আল্লাহ সেটা দেখবেন। তাই পানি পান করা থেকে বিরত থাকে। এটাই তাকওয়া।

রমজান এই তাকওয়ার প্রশিক্ষণ দিতে আসে। কিন্তু আমরা কি পারছি সেই মূল্যবান গুণ অর্জন করতে? একটু গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার। রোজা রেখে হয়তো পানি পান করি না, কিন্তু আল্লাহর অন্যান্য হুকুমগুলো কি মানতে পারছি? তাঁর নিষেধগুলো কি বর্জন করতে পারছি? মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা কাজ তথা শরীয়তের দৃষ্টিতে মূল্যহীন কাজ, অফিসে ফাঁকি দেওয়া, শিক্ষার্থীদের না পড়িয়ে কোচিংয়ে ভাগানো, ওজনে কম দেওয়া, সুদ-ঘুষ বর্জন, পণ্য মজুত করে দাম বাড়ানো, অন্যকে ঠকানো, হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীকে যেতে বাধ্য করা, মানুষের হক নষ্ট করা ইত্যাদি ছাড়তে পারছি কি না— চিন্তা করে দেখা দরকার।

তা না হলে রোজা আসবে রোজা যাবে, আমরাও বছরের পর বছর রোজা রাখব, কিন্তু রোজার যে ফায়দা সেটা হাসিল হবে না। এক্ষেত্রে জ্ঞান অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। এই রমজান মাসেই আল্লাহ নাজিল করেছেন মানবজাতির মুক্তি ও সকল সমস্যার সমাধান পবিত্র কুরআন। এই মাসে সেই কুরআন বেশি বেশি করে ও বুঝে বুঝে অধ্যয়ন করার পাশাপাশি তা আমলে আনতে হবে। পাশাপাশি জানতে হবে হাদীস তথা রসুলের সুন্নাহও। আল্লাহ সুবহানুওয়া তা’য়ালা আমাদের সঠিকভাবে তাঁর দ্বীন বোঝার ও সেই মাফিক আমল করার তওফিক দিন, আমীন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.