স্বপ্নের জয়ে দুই দশকের ‘গিঁট’ খুলল বাংলাদেশ

ব্যাটাররা এনে দিয়েছেন রানের পাহাড়। শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে লড়াই করলেন বোলাররা। দুই বিভাগের দারুণ পারফরম্যান্সের সুবাদে দুই দশকের ‘গিঁট’ খুলল বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাঠে হারাল টাইগাররা। শুক্রবার রাতে সেঞ্চুরিয়নে প্রথম ওয়ানডেতে তামিম ইকবালের দল জিতল ৩৮ রানে।

দুই দশকের ‘গিট’ খুলল বাংলাদেশ

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সাকিব আল হাসান, লিটন দাস ও ইয়াসির আলির হাফসেঞ্চুরির ওপর ভর করে সাত উইকেটে ৩১৪ রান করে বাংলাদেশে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এই প্রথম ওয়ানডে সংস্করণে তিন শ’ ছাড়াল টাইগাররা। জবাব দিতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাত বল বাকি থাকতে ২৭৬ রানে অলআউট করেছে বাংলাদেশ।

রান তাড়া করতে নামা প্রোটিয়াদের শুরুতেই চেপে ধরে টাইগাররা। নবম ওভারে ৩৬ রানের মধ্যে তিন উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। তিনটির দুটি শিকার তাসকিন আহমেদের। অন্যটা শরিফুল ইসলামের। জানেমান মালান আউট হন চার রানে। এইডেন মার্করাম খুলতে পারেননি রানের চাকা।

দুই দশকের ‘গিট’ খুলল বাংলাদেশ

অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে নিয়ে ধাক্কাটা প্রায় সামলে ওঠেন রসি ফান ডার ডুসেন। চতুর্থ উইকেটে ৮৫ রানের ভয়ঙ্কর জুটিটা ভেঙে ব্রেক থ্রু এনে দেন শরিফুল। ৩১ রান করা বাভুমাকে বানান মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ। কিন্তু স্বস্তিতে থাকা গেল না তাতে। পঞ্চম উইকেট জুটিও জমে যায়। এবার তার সঙ্গী ডেভিড মিলার।

ডার ডুসেন হাঁটছিলেন শতকের পথে। তাসকিনের তৃতীয় শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ৯৮ বলে ৮৬ রান করেন প্রোটিয়া ব্যাটার। ৭০ রানের এই জুটি বিচ্ছিন্ন হতেই ছন্দপতন হয় স্বাগতিক শিবিরের। তাতে মূল কৃতিত্ব মেহেদি হাসান মিরাজের। পেসাররা হাত ঘোরাতে ঘোরাতে যখন ক্লান্ত তখনই দেখালেন ভেলকি।

চার উইকেট তুলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার লোয়ার অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন মিরাজ। এর মধ্য তার তিন শিকার মিলে করেন পাঁচ রান। অবস্থা বেগতিক বুঝে ঝড় তোলেন মিলার। সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। ৫৭ বলে ৭৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে বিদায় নেন তিনি। আটটি চার ও তিন ছক্কায় ইনিংস সাজান মিলার। শেষ দিকে কেশভ মহারাজ ১৬ বলে ২৩ রানে আউট হন। আর ১০ বলে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন লুঙ্গি এনগিডি।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ। যার আসল নায়ক সাকিব। মানসিক অবসাদের কারণে এই সিরিজ তো তার খেলারই কথা ছিল না। সিরিজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে যে বিতর্কে পড়েছিলেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার তা যেন মাটি চাপা দিলেন ৭৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে। এই ইনিংসই তার হাতে তুলে দেয় ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার নাম ছিল ব্যাটিং বিভাগ। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই হেসে উঠল ব্যাটারদের ব্যাট। দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল ছাড়িয়ে গেছে প্রত্যাশার সীমা। তিন শ ছাড়ানো ইনিংসে আফসোস বলতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের সেঞ্চুরি না পাওয়াটা। ফিফটি করেছেন লিটন দাস, ইয়াসির আলি ও সাকিব। আভাস নিয়ে ফিরেছেন ওপেনার তামিম। এ ছাড়া লোয়ার মিডল অর্ডারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্যামিও ইনিংসের ওপর দাঁড়িয়ে প্রোটিয়াদের কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ।

বড় রানের ভিত অবশ্য গড়ে দিয়েছেন দুই ওপেনার তামিম ও লিটন। ৯৫ রানে তামিমের বিদায়ে ভাঙে জুটি। একটু পর তার পদাঙ্ক অনুকরণ করলেন সতীর্থ ওপেনারও। দুজনই খেলেছেন সমান ৬৭ বল। অ্যান্ডিলে ফেলুখায়োর এলবির ফাঁদে পড়ে তামিম আউট হন ৪১ রানে। আর ৫০ রান করা লিটনের স্টাম্প ওড়ান কেশব মহারাজ।

দুই ওপেনারের বিদায়ের হতাশা হজম করতে না করতেই সাজঘরের পথ ধরেন নতুন ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। পরে চতুর্থ উইকেটে ইয়াসির ও সাকিব গড়েন ১১৫ রানের জুটি। দুজন ফিরেছেন পরপর দুই ওভারে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রানখরায় ভুগতে থাকা সাকিব সেঞ্চুরির আভাস দিয়ে আউট হন ৭৭ রানে।

৬৪ বলে সাতটি চার ও তিন ছক্কায় গড়া তার ইনিংস। ৪৪ বলে ৫০ রান করে ৪৩তম ওভারে বিদায় নেন ইয়াসির। ৪৪ বলের ইনিংসে চারটি চার ও দুটি ছক্কা মারেন তিনি। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৭ বলে ২৫, আফিফ হোসেন ধ্রুব ১৩ বলে ১৭ রান করেন। এ ছাড়া মেহেদী হাসান ১৩ বলে ১৯ এবং তাসকিন আহমেদ পাঁচ বলে ৭ রানে অপরাজিত থাকেন।

বাংলাদেশের পতন হওয়া উইকেটের দুটি করে নিয়েছেন মহারাজ ও মার্কো জানসেন। বাকি তিন বোলার লুঙ্গি এনগিডি, ফেলুখায়ো ও কাগিসো রাবাদা নেন একটি করে উইকেট। প্রত্যেককেই পিটিয়ে তুলোধুনো করেছেন সাকিব–লিটনরা। ব্যাটাররা জয়ের কাজটা অর্ধেক সেরেছেন। বাকি কাজটা সেরেছেন তাসিকন, মিরাজ, শরিফুলরা। সবমিলিয়ে দলীয় প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদেরই মাটিতে কোনো সংস্করণে হারাল বাংলাদেশ।