এক-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রশ্ন এবং ইসরায়েলের ভয়
- Details
- by ভিন্নমত
ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান কী- এই প্রশ্নের উত্তরে নানা মত রয়েছে। দখলকৃত ফিলিস্তিনে বসবাসরত জনগণ আর অভিবাসী ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর একেকটি পক্ষ একেক রকম সমাধান চায়। দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলও ভীষণ পটু। ফিলিস্তিনি জনমতকে বিভক্ত করে ক্রমশ দখল পাকাপোক্ত করে চলেছে ইসরায়েল। দেশটি একদিকে গাজা উপত্যকায় হামাসকে দিনদিন শক্তিশালী হবার সুযোগ দিচ্ছে, আবার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকেও নানাভাবে শক্তি জুগিয়ে চলেছে। এর মাধ্যমে ইসরায়েল প্রকারান্তরে ফিলিস্তিনের দুটি পক্ষের ঐক্য ঠেকিয়ে চলেছে।
উপরন্ত দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের মোহে ভুলিয়ে ইসরায়েল যেমন বাস্তবসম্মত সমাধান বিলম্বিত করছে তেমনি নিজেদের দখল-নিপীড়নের যুক্তি তৈরি করছে। ইসরায়েলিদের এ কৌশল কাজ দিয়েছে। কারণ তারা বলার সুযোগ পাচ্ছে যে তারা একটি ‘বিরোধপূর্ণ’ ভূমি নিয়ে আলোচনা করছে, এমন ভূমি যার ইতিহাসও জটিল।
অসলো চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের এক ধরনের স্বায়ত্ত্বশাসন দিয়ে ইসরায়েল কার্যত নিজের বর্ণবাদী আচরণের সমালোচনাকে পাশ কাটিয়েছে। এটা ঠিক যে ফিলিস্তিনিরা সম্ভাবনারহিত ও অবরুদ্ধ কিছু এলাকায় স্বায়ত্ত্বশাসন ভোগ করছে। পাশাপাশি, সত্যিকারের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং নিজেদের জীবন-জীবিকাকে প্রভাবিত করে যেসব নীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো সুযোগ ফিলিস্তিনিদের না থাকলেও বলা হচ্ছে যে তারা নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে পারছে।
এই ছলচাতুরির আড়ালে ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ইহুদীদের এনে ওই ভূমিতে বসতি স্থাপন অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল, যদিও তারা ফিলিস্তিনিদের সমানাধিকার দিচ্ছে না। এছাড়া ফিলিস্তিনিদের উপর জাতিগত শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রয়েছেই। ৫০ দশকের কথিত জনমিতিক যুদ্ধের মতো একই কৌশলে বাড়িঘর থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, তাদের বসতি ও বসবাসের সুযোগ রদ করা হচ্ছে।
এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কোনো সমাধান যদি আদৌ আসে ততদিনে ফিলিস্তিনি জনসংখ্যা অনেক হ্রাস পাবে, এমনকি তারা নিজ দেশেই সংখ্যালঘু হয়ে পড়তে পারে। ইসরায়েলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রেও এটা সত্য। সব নাগরিকের সমানাধিকার ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে নিজেকে দাবি করলেও ইসরায়েল ২০১৮ সালে ‘জাতিরাষ্ট্র আইন’ নামে যে বিতর্কিত আইন পাশ করেছে তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে কেবলমাত্র ইহুদীদের জন্য হবে এই রাষ্ট্র। ইসরায়েল যে একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র, সেটা এমন আইনগুলোর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। কথিত ‘জাতিরাষ্ট্র আইনের’ মতো আরেকটি আইন হলো ‘প্রত্যাবর্তনের অধিকার আইন’, যদিও সেটা শুধু ইহুদীদের জন্য। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ইহুদীরা ইসরায়েলকে নিজেদের রাষ্ট্র দাবি করতে পারলেও নিজেদের ভূমিতে ফিরে আসার আইনী অধিকার ফিলিস্তিনিদের নেই। একইভাবে ‘নাগরিকত্ব আইন’ বলছে, ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি নাগরিকরা পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা অথবা অভিবাসী ফিলিস্তিনিদের মধ্য থেকে কাউকে বিয়ে করলে নিজ স্ত্রী অথবা স্বামীকে নিয়ে ইসরায়েলে বসবাসের জন্য নিতে পারবেন না।
জেরুজালেম পোস্টে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইসরায়েল রাষ্ট্রের সূচনার সময় থেকে আরব নাগরিকরা শিক্ষাক্ষেত্রে নগ্ন, প্রাতিষ্ঠানিকীকৃত অসাম্যের শিকার হয়েছে। বৈষম্যের এক ত্রিভূজ গড়ে তোলা হয়েছে যেখানে বাজেট বরাদ্দ অসম, রাষ্ট্রব্যবস্থার উঁচুস্তরে প্রতিনিধিত্ব অসম এবং শিক্ষা কার্যক্রমেও রয়েছে অসাম্য।
এসব আইন ও তার পেছনের চিন্তার সারমর্ম হলো এমন পরিস্থিতি জারি রাখা যেখানে ইসরায়েল যে ধরনের সমাধানই চাক না কেন, ফিলিস্তিনিদের সমানাধিকার থাকবে না। ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইলাদ শাকেত তো কিছুদিন আগে বলেই দিয়েছেন- কোনো সমাধান নেই, আমাদেরকে সংঘাত ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
সারাবিশ্বে যখন সবার জন্য সমানাধিকারের দাবি সরব হচ্ছে তখন ফিলিস্তিনিদেরও ‘এক রাষ্ট্র ব্যবস্থা’ কেন্দ্র করে সমানাধিকারের দাবিতে ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। ‘এক রাষ্ট্র ব্যবস্থা’ যে কারণে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তেমন সমর্থন অর্জন করেনি তার অন্যতম হলো আত্মপরিচয় হারানোর শঙ্কা। ফিলিস্তিনিরা মনে করছে, ইসরায়েল রাষ্ট্রের অধীনে সমাধান চাইলে একপর্যায়ে তাদের জাতিগত পরিচয়টাই হারিয়ে যাবে। প্যালেস্টাইনিয়ান সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ-এর সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিরা এমন রাষ্ট্র চান যার কেন্দ্রে থাকবে তাদের জাতিগত পরিচয়। জরিপে ৩৯ শতাংশ উত্তরদাতা দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে মত দিয়েছেন। এক-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে মতপ্রকাশ করেছেন ২০ শতাংশ উত্তরদাতা।
ফিলিস্তিনিদের সব পক্ষ যদি এক-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রশ্নে একমত হয় তাহলে ইসরায়েল বুঝবে যে তাদের খেলা শেষ। এখনো পর্যন্ত ইসরায়েল নিজেকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে বলছে যে ফিলিস্তিনিরাও স্বায়ত্ত্বশাসন ভোগ করছে এবং ফিলিস্তিনের সীমানা নিয়েই ‘আলোচনা চলমান রয়েছে’। সত্যি কথা হলো, কোনো ধরনের সমতাভিত্তিক ও ন্যায্য সমাধানের মতলব ইসরায়েলের নেই। পশ্চিমা দেশগুলোতে ইসরায়েলি লবির প্রভাব এবং কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের আব্রাহাত চুক্তি ন্যায্য সমাধানের পথে দেশটিকে টেনে আনা আরও দুরূহনকরে তুলেছে।
এক-রাষ্ট্র-ভিত্তিক সমাধানকে ইসরায়েল ভয় পায়। ফিলিস্তিনিরা যদি ‘এক-রাষ্ট্রভিত্তিক’ সমাধানের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধভাবে সরব হয় তাহলে ইসরায়েল কঠিন সংকটে পড়বে। এক-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান হলে ইসরায়েলকে দখলকৃত ভূখণ্ডের সব ফিলিস্তিনিকে সমান অধিকার দিতে হবে এবং সেটা করতে না পারলে তার কথিত ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের’ তকমা খসে পড়বে।
লেখক: Nizar Milbes
অনুবাদ করেছেন: সাইদ হাসান
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.