যে বিজ্ঞানীকে বহিষ্কারের খেসারত এখনো দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র!
- Details
- by বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
চীনের ক্ষেপণাস্ত্র এবং মহাকাশ কর্মসূচির জনক মনে করা হয় ‘মানুষের বিজ্ঞানী’ চেন সুচেনকে। দেশটির জাতীয় এই বীরের প্রচেষ্টায় প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানোর রকেট এবং পারমাণবিক অস্ত্র বহনের ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ভাবিত হয়েছে।
১৯১১ সালে জন্ম নেওয়া চেন সুচেন বেড়ে উঠেন চীনের সর্বশেষ রাজতন্ত্রের ভঙ্গুর দশার মধ্যে। তার বাবা দীর্ঘদিন জাপানে কাজ করে দেশে ফিরে জাতীয় শিক্ষাক্রম তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রাখেন, মাও ছিলেন উচ্চশিক্ষিত। সাংহাইয়ের জাও টং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পরীক্ষায় প্রথম হলে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, এমআইটিতে বৃত্তি পান চেন।
১৯৩৫ সালে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে যান, এমআইটি শেষ করে ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, ক্যালটেকে একজন গবেষক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে বিখ্যাত অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার থিওডর ভন কারমানের অধীনে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক মালিনাকে সহকর্মী হিসেবে পান তিনি।
মেধাবী উদ্ভাবকদের সুইসাইড স্কোয়াডের অন্যতম সদস্য ছিলেন মালিনা, তারা ক্যালটেকের ক্যাম্পাসে একটি রকেট তৈরির চেষ্টা করছিলেন। এই গ্রুপের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে অংকের একটি জটিল সমস্যা নিয়ে আলাপ হয় চেনের। এরপর তাদের গ্রুপের সদস্য হন এবং রকেট গবেষণায় ভূমিকা রাখতে শুরু করে দেন তিনি।
রকেট বিজ্ঞানকে তখন ‘পাগলাটে ও কল্পনা প্রেমীদের বিষয়’ হিসেবে দেখা হতো। সে সময় সুনাম হারানোর ভয়ে বিখ্যাত প্রকৌশলীরা এতে জড়াতে চাইতেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়। সুইসাইড স্কোয়াডকে যুদ্ধবিমানের ডানায় জেট ইঞ্জিন লাগানোর গবেষণায় অর্থ দেয় মার্কিন সেনাবাহিনী।
সামরিক তহবিলে ক্যালটেকের রকেট বিজ্ঞানী থিওডর ভন কারমানের নেতৃত্বে জেট প্রপালশান ল্যাব, জেপিএল প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৪৩ সালে। ওই প্রকল্পের মূলে ছিলেন চেন সুচেন ও ফ্রাঙ্ক মালিনা। সে সময় চীন মিত্র থাকায় মার্কিন মহাকাশ বিজ্ঞান প্রকল্পে চেনকে নিয়ে সন্দেহ-সংশয় ছিল না।
এমনকি গোপন অস্ত্র গবেষণার কাজেরও অনুমতি পেয়ে যান চেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান পরামর্শ বোর্ডের সদস্যও হয়ে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ নাগাদ জেট প্রযুক্তির ব্যবহারে দ্রুত প্রক্ষেপণের বিশ্বসেরা বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেন তিনি। থিওডর ভন কারমানের সঙ্গে তাকেও একটি মিশনের জন্য জার্মানিতে পাঠানো হয়।
নাৎসি প্রকৌশলী ও রকেট বিজ্ঞানী ওয়ার্নার ফন ব্রাউনের কাছ থেকে এই প্রযুক্তি সম্পর্কে জার্মানির দক্ষতা জানার চেষ্টা করেন তারা। মাও সে তুং ১৯৪৯ সালে চীনে কম্যুনিস্ট শাসনের ঘোষণা দিলে যুক্তরাষ্ট্রে বিপাকে পড়তে শুরু করেন চেন। নতুন চীনকে নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় জেপিএলের একটি গুপ্তচর চক্র থাকার গুঞ্জন উঠে।
মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই-কে সন্দেহভাজন কয়েকজনের নাম দেওয়া হয়, তারা সবাই চীনা ও ইহুদি ছিলেন। শীতল যুদ্ধ শুরু হলে চেন ও ফ্রাঙ্ক মালিনাসহ কয়েকজন বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে ‘কম্যুনিস্ট’ এবং দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে শনাক্ত করে সংস্থাটি।
যুক্তরাষ্ট্রে বসে চীনের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করার কোনো প্রমাণ না থাকার পরেও চেনকে গৃহবন্দী করা হয়, জেপিএলের অনুমতি বাতিল হয়। সরকারের কাছে চেনকে নিরপরাধ উল্লেখ করে চিঠি লেখেন থিওডর ফন কারমান, তাতেও কাজ হয়নি। ৫ বছর গৃহবন্দী রেখে ১৯৫৫ সালে তাকে চীনে বহিষ্কার করা হয়।
স্ত্রী ও যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া দুই সন্তানকে নিয়ে জাহাজে উঠার আগে চেন বলেন, কোনোদিন যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখবেন না তিনি। নায়কের মর্যাদা নিয়ে মাতৃভূমি চীনে ফিরে যান চেন। ১৯৫৮ সালে চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য হন এবং মহাকাশ প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ শুরু করেন।
চীনের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি গড়ে তোলার পাশাপাশি কয়েক দশক ধরে নতুন বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ দেন চেন। এমনকি তার আবিষ্কৃত সিল্ক-ওয়ার্ম ক্ষেপণাস্ত্র ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। ২০১৬ সালে ইয়েমেনের হুথিরা চীনা এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ ইউএসএস মেসনে আঘাত হানে।
এভাবেই সুপরিচিত এই বিজ্ঞানীকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র তকমা দিয়ে তার অবদান থেকে তাকে বঞ্চিত করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে শেষ পর্যন্ত শত্রুর হাতে মোক্ষম হাতিয়ার তুলে দেওয়ার জন্যও আফসোস করতে হচ্ছে ওয়াশিংটনকে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.