ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় বাংলাদেশের হার

দুই ওপেনার আউট হয়েছেন সেট হয়ে। পরে তাদের পথ অনুসরণ করেছেন আরো তিন ব্যাটসম্যান। ফলাফল যা হওয়ার, হয়েছে তা-ই। সব মিলিয়ে স্কোরবোর্ডে উঠেছে মাঝারি মানেরও কম রান। এই কম রান নিয়ে হয়তো প্রতিপক্ষকে কিছুটা বেশি সময় তাড়া করা যায়, কিন্তু হারানো কি আর যায়? না, যায় না।

যায় না বলেই এবার আর আফগানিস্তানকে হারাতে পারলো না বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে আফগানিস্তানের কাছে দুই উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ।

২০৮ রানের জবাব দিতে নেমে অধিনায়ক আসগর স্তানিকজাইয়ের ৫৭ এবং সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ নবির ৪৯ রানে ভর করে জয় নিশ্চিত করে আফগানিস্তান।

এর আগে বাংলাদেশের ২০৮ রান করার পথে তামিম যখন আউট হন, তখন তিনি করে ফেলেছিলেন ২০ রান। উইকেটে সেট হওয়ার জন্য নিশ্চয় যথষ্ট সময়ই পেয়েছিলেন তিনি। এরপর সৌম্যও আউট হয়েছেন ওই ২০ রান করেই। মানে উইকেটে সেট হয়ে গিয়েছিলেন তিনিও।

এই দুজনের পর মাহমুদুল্লাহ ২৫ রান করে, মুশফিক ৩৮ রান করে এবং সাকিব আউট হয়েছেন ১৭ রান করে; অর্থাৎ এই তিন ব্যাটসম্যানও বড় ইনিংস খেলার জন্য উইকেটে সেট হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে হোক আর আফগান বোলারদের কৌশলী পদক্ষেপের কারণে হোক, এই পাঁচ ব্যাটসম্যানের কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি।

অভিষিক্ত মোসাদ্দেক হোসেন তার পরিণতিবোধের দারুণ প্রমাণ রেখে ঠাণ্ডা মাথায় বড় একটা ইনিংস গড়ার পথেই এগোচ্ছিলেন বটে, কিন্তু তাকে যোগ্য সমর্থন দিবে, এমন কেউ ছিলো না। ফলে তাকে লড়তে হয় প্রায় একাই। শেষ পর্যন্ত মোসাদ্দেক অপরাজিত থাকেন ৪৫ রানে। তার ইনিংসের কল্যাণেই বাংলাদেশ কোনো মতে ২০০ ছাড়িয়ে যায়।

আফগানিস্তান হয়তো বাংলাদেশের মতো ওয়ানডে সাফল্য নেই, তাই বল তারা যে ২০৮ রানও তাড়া করতে পারবে না, এমন কথা বলা কঠিন। এই কঠিন কথাটা কেউ বলেওনি। অর্থাৎ প্রথম ইনিংস শেষেই মোটামুটি ম্যাচের ভাগ্যটা নির্ধারিত হয়েই ছিলো।

তারপরও আশার একটা প্রদীপ মিটমিট করে ঠিকই জ্বলছিলো বাংলাদেশি সমর্থকদের মনে। সেটা যতোটা না স্কোরবোর্ডের পুঁজির কারণে, তার চেয়ে অনেক বেশি আফগানিস্তানের অনভিজ্ঞতার কারণে। প্রথম ম্যাচে ওই অনভিজ্ঞতার কারণেই হাতে আট উইকেট থাকলেও তারা শেষ ১০ ওভারে ৭৭ রান নিতে পারেনি। কিন্তু বারবার কি একই ঘটনা ঘটে!

না, ঘটে না। ঘটে না বলেই এবার আর অনভিজ্ঞতার টানেলে পড়ে জয়বঞ্চিত হলো না আফগানরা। ক্রিকেটের নতুন শক্তি হয়ে উঠার পথে তারা আরো একটা ধাপ পেরোলো বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বার ওয়ানডে হারিয়ে। এর আগে ২০১৪ সালের এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে ওয়ানডেতে সামনে পেয়েই হারিয়েছিলো তারা। যা এখনো আফগানদের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত জয়।

২০৮ রানের পুঁজি নিয়েও বারবার বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছেন সাকিব আল হাসান। প্রথম ম্যাচে দারুণ দুটি ব্রেকথ্রো এনে দেয়া সাকিব আজও গুনে গুনে চারটি উইকেট নিলেন। প্রতিবারই নতুন জাগলো জয়ের আশা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশাটা আর জেগে থাকতে পারলো না। অল্প রানের দুর্বল পুঁজিই আসলে জাগতে দিলো না আশাটাকে। ব্যাটসম্যানদের নিদারুণ ব্যর্থতাই এই ম্যাচে বাংলাদশের হারের মূল কারণ।

আফগানিস্তানের এই জয় সিরিজে নিয়ে এলো সমতা। এখন পহেলা অক্টোবরের ম্যাচটি হয়ে গেলো অঘোষিত ফাইনাল। সেই ‘ফাইনালের’ আগে যদি ব্যাটসম্যানদের ঘুম না ভাঙে, তবে আফগানিস্তানের কাছে হয়তো বড় এক লজ্জাই পেতে হবে বাংলাদেশকে। তারপরের সিরিজটা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আফগানিস্তানের কাছে সিরিজ হারলে সেখানে কী হবে মাশরাফিদের?

আপনি আরো পড়তে পারেন

যে কীর্তিতে প্রথম বাংলাদেশি মোসাদ্দেক

অভিষেকেই দৃঢ়তার প্রতিমূর্তি মোসাদ্দেক

ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর বাংলাদশের সংগ্রহ ২০৮

বিপিএল নিশ্চিত হয়েছে যে সব বিদেশির

আজই কি শততম জয় পাবে বাংলাদেশ?