মতামত: বাংলাদেশে কূটনৈতিক যুদ্ধে জিততে প্রপাগাণ্ডা চালাচ্ছে পাকিস্তান
- Details
- by ভিন্নমত
পাকিস্তানি পরমাণু বিজ্ঞানী পারভেজ আমিরালি হুদভয় একটি নিবন্ধে লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তান অসহায় আত্মসমর্পণ করলেও অনেক পাকিস্তানি ভেবেছিল তখনো ‘দ্বি-জাতি তত্ত্ব’ কাজ করবে। অধিকাংশ পাকিস্তানিই ভেবেছিল- বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে টিকবে না এবং পুনরায় পাকিস্তানের সঙ্গে একত্রীত হতে অনুরোধ করবে।’ কিন্তু পাকিস্তানের সেই দিবাস্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়নি। উল্টো বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে আর্থ-সামাজিক সবগুলো খাতেই পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।
বৈদেশিক রিজার্ভ, মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ, গড় আয়ু, সকল খাতে নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ-সহ সবগুলো সূচকেই পাকিস্তানকে বহু পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। দেশটির এই অগ্রগতি দেখে অর্থনীতিবিদরা একে পরবর্তী এশিয়ান টাইগার হিসেবে বিবেচনা করছে।
২০২১ সালের মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। যেখানে দু-দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে, ঢাকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- এ জন্য পাকিস্তানকে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। কিন্তু পাকিস্তান সে পথে হাঁটেনি।
নানা সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশে সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকার যখন যুদ্ধাপরাধের বিচার ও দোষীদের ফাঁসি কার্যকর করে। বিষয়টি নিয়ে তখন পাকিস্তানের আদালতে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করা হয়। কারণ পাকিস্তান সবসময় ১৯৭৪-এর বন্দিবিনিময়ের ত্রিপক্ষীয় চুক্তিকে উল্লেখ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঘটনা তখনই শেষ হয়ে গেছে বলে দাবি করে। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইসলামাবাদের এমন আচরণে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
পাকিস্তান একদিকে মুখে মুখে শান্তির কথা বলছে, অন্যদিকে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র মাধ্যমে কৌশলে অপতৎপরতা অব্যাহত রাখছে। অথচ ওই গোয়েন্দা সংস্থাটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বেশ জোরালো অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলদেশের মানুষের ওপর যে ভয়াবহ নৃশংসতা চালিয়েছিল তা গোপন করে ‘খেল খেল মে’ নামের মুভি তৈরি করে পাকিস্তান। শুধু তাই নয়, গত ১২ ডিসেম্বর প্রকাশ করা পাকিস্তানি সিরিজ ‘জো বিছার গ্যায়ে’তে মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃত করে পাকিস্তানি সেনাদের ধার্মিক হিসেবে দেখানো হয়।
স্বাধীনতার মাসে সাধারণ বাংলাদেশিদের অনুভূতির সঙ্গে প্রতারণা করে পাকিস্তানে আরেকটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করে যার নাম ‘পাকিস্তান: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’। ইভিলিউশন মিডিয়া প্রযোজনা ও জাভেদ জব্বারের নির্বাহী প্রযোজনায় নির্মিত তথ্যচিত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে, অতীতে কিছু বিষয় অতিমাত্রায় উপস্থাপন করা হয়েছে। আবার যেভাবে বাংলাদেশের পাকিস্তানের নির্যাতনের কথা বলা হচ্ছে তাও সঠিক নয়।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সময়ে নভেম্বর-ডিসেম্বরে পাকিস্তান ক্রিকেট দল বাংলাদেশে সফর করে। এ সময় অনুশীলনে পতাকা টাঙিয়ে দেওয়াকে জাতীয় চেতনার ওপর আঘাত হিসেবে নেয় অনেকেই। সুশীল সমাজ এ ঘটনার নিন্দা জানায়।
চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক ক্রিকেট সিরিজের তিক্ত পরাজয় ও পাকিস্তান সমর্থকদের প্রতিরোধের কথা ভুলে পাকিস্তান এখন ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় পাকিস্তান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ কনফারেন্সের দ্বিতীয় সংস্করণের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
বেশিরভাগ জাতি ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে তার গৌরবের চেয়ে দুর্যোগের সময়গুলো মনে রেখে শিক্ষা নেয়। পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের বৈশিষ্ট্য অন্যতম শিক্ষণীয় দেশটির জন্য। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ ভারত ও বাংলাদেশের যৌথবাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের কমান্ডারের আত্মসমর্পণের ঘটনায় পাকিস্তান তার অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা, এক-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড ও প্রচুর অর্থ-সম্পত্তি হারায়। কিন্তু বেশিরভাগ পাকিস্তানি সেই দিনটিকে মনে রাখা ও শিক্ষা নেওয়ার চেয়ে ভুলেই যেতে চায়।
পরাজয়ের পরপরই বিস্মিত হয়েছিল পাকিস্তান। এজন্য বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনের ঘটনা জানতো না পুরো দেশবাসী। সেজন্য পরে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে কমিশন যে বিস্তৃত প্রতিবেদন করেছিল তা আজও প্রকাশ করা হয়নি।
কমিশনের প্রতিবেদন কিছুটা প্রকাশ পায় প্রায় ৩ দশক পর। সেটা নিয়ে পাকিস্তানি মিডিয়ায় সমালোচনা শুরু হয়। হামুদুর কমিশনের রিপোর্টে, রাজনীতিবিদদের স্বার্থপর ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। যারা ব্যক্তিগত লাভের জন্য দেশের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকিতে ফেলেছিল। তারচেয়েও বেশি সমালোচনা করা হয় সেনাবাহিনীর। সে সময়ের রাষ্ট্রপতি, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও তার সহযোগীদের দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
পাকিস্তানকে বিশ্বাস করা যায় না বুঝতে পেরে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে ওআইসির বিশেষ অধিবেশনে যোগ দিতে ইসলামাবাদে ১৯ ডিসেম্বর পূর্বনির্ধারিত সফর বাতিল করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তার এ যাত্রা শেখ হাসিনার শাসনামলে গত নয় বছরে প্রথম কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর হতো।
সাম্প্রতিক সময়ে নিকটবর্তী প্রতিবেশীর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একই বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির দ্বিপাক্ষিক সফরের ঘটনা। ২০২১ এ ভারত থেকে অন্তত ১১-১২টি দ্বিপক্ষীয় সফর করা হয়। কোভিড-পরবর্তী প্রথম সফরে ১৫-১৭ ডিসেম্বর ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কেবিন্দ বাংলাদেশ সফর করেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রতিবেশী নীতিতে বাংলাদেশ একটি বিশেষ জায়গায় রয়েছে।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উন্নয়ন অংশীদারত্ব সবচেয়ে বেশি। একই সময়ে আমাদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করারও সুযোগ সবচেয়ে বেশি রয়েছে।’ ৫০ বছর আগে ভাষা, আত্মীয়তা, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক নীতির সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপন হয়েছিল, যা এখনো চলমান।
লেখক: সাজিদ ইউসুফ শাহ
কলামিস্ট, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.