যে কারণে এক টেস্টে ২০ জনের দল

হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ দল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্বিপাকে পড়া দলটা সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর মাঝে জাতীয় দলের নির্বাচকদের মুন্ডুপাত চলছে সমান তালে। দলকে ছন্দে ফেরাতে সব চেষ্টাই করছেন তারা। কিন্তু ফল আসছে না। সর্বশেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের জন্য ২০ জনের দল ঘোষণা করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন নির্বাচকরা।

এক টেস্টে ২০ জনের দল

ঘরের মাঠে টেস্ট, তাও ২০ জনের দল! সবার মুখে মুখে একই প্রশ্ন, কেন এত বড় দল ঘোষণা করা হলো? নির্বাচকরাও হাস্যরসের পাত্র হয়ে গেছেন এমন দল দিয়ে। তাছাড়া হুট করে নাঈম শেখকে টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্ত করায় সমালোচনা বেড়েছে। কারণ বাঁহাতি এ ওপেনারের ব্যাটিং টি-২০ তেই প্রশ্ন বিদ্ধ। ছোট ফরম্যাটে তার শ্লথ গতির ব্যাটিং দৃষ্টিকটুই বটে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি আরও বেশি আনাড়ি। মাত্র ৬টি ম্যাচ খেলেছেন লংগার ভার্সনে। ১৬.৬৩ গড়ে একটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ১৮৩ রান করেছেন। নিজের সর্বশেষ ম্যাচেও দুই ইনিংসে জোড়া শূন্য রয়েছে নাঈমের।

প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর কাছেই জানা গেল, সব প্রশ্নের উত্তর। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের পরপরই নিউজিল্যান্ড চলে যাবে বাংলাদেশ দল। আগামী ৯ ডিসেম্বর দুপুরে উড়াল দিবেন ক্রিকেটাররা। দুই টেস্ট খেলতে ১৭ জনের দল যাবে। প্রথম টেস্ট মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে, দ্বিতীয় টেস্ট ক্রাইস্টচার্চে।

এক টেস্টে ২০ জনের দল

অতীতের মতোই এই সিরিজটা হবে বায়ো-বাবলে। নিউজিল্যান্ড গিয়েই দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে ক্রিকেটারদের। তাই এখনই সফরের দলে থাকতে পারেন, এমন সম্ভাব্য ক্রিকেটারদের বায়ো-বাবলে আনা হয়েছে। বাবল থেকে বাবলে ট্রান্সফার হবেন ক্রিকেটাররা। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণে সতর্কতা বেড়ে গেছে আগের চেয়ে বেশি।

পুরো দেশ শুধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের দিকে তাকিয়ে থাকলেও নির্বাচকদের সেই সুযোগ নেই। তাদেরকে ভবিষ্যতের দিকেও তাকাতে হচ্ছে। শুধু কি ২০ জন, টেস্ট দলের বাইরে থাকা শরীফুল ইসলামও টিম হোটেলেই আছেন। গ্রোয়েন ইনজুরিতে পড়া এই পেসারের পুনবার্সন চলছে দলের সঙ্গে থেকেই। নিউজিল্যান্ড সফরকে মাথায় রেখেই বড় দল ঘোষণা করতে হয়েছে।

এত বড় দল ঘোষণার কারণ জানতে চাইলে বুধবার প্রধান নির্বাচক নান্নু বলেছেন, ‘এক টেস্টের জন্য, তাও ঘরের মাটিতে খেলা, এখানে ২০ জন লাগে না, এটা তো সবাই বোঝে। কিন্তু না জেনেই নানামুখী কথা হচ্ছে। আমাদেরকে পরিকল্পনা করতে হয়, সামনের দিকে তাকাতে হয়। এই টেস্টের পরপরই দল চলে যাবে নিউজিল্যান্ড। সেখানে দুটি টেস্ট খেলবে। আপনারা জানেন, নিউজিল্যান্ড সফরে সবাইকে বায়ো-বাবলে থাকতে হয়। ওখানে কোয়ারেন্টাইনও আছে। এখন যারা যাবে তাদেরকে তো বাইরে রেখে অনুশীলন করানো সম্ভব নয়। আমরা তো শরীফুলকেও টিম হোটেলে রেখেছি, ও টেস্ট দলে নেই। ওদেরকে তো করোনমুক্ত এবং ফিট রাখতে হবে। নিউজিল্যান্ডে যারা যেতে পারে, তাদেরকে বায়ো-বাবলে আনা হয়েছে। এ কারণেই দলটা বড় করা হয়েছে।’

নাঈম শেখের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের বাজে পরিসংখ্যান নির্বাচকদের জানা আছে। তারপরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় তাকে ডাকা হয়েছে। তামিম না থাকায় ওপেনিংটা নড়বড়ে। তরুণরা গতিময় পেস বোলিং খেলতে হিমশিম খাচ্ছেন। ৩২ টি-২০ খেলা নাঈম শেখ এ জায়গায় অভিজ্ঞ। এমন বোলিং খেলার অভিজ্ঞতা আছে তার। যা কাজে লাগাতে চাইছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

নান্নু বলেছেন, ‘দেখুন নাঈম লংগার ভার্সন কম খেলে এটা ঠিক। কিন্তু ও দলের সঙ্গেই আছে। দ্রুতগতির ফাস্ট বোলিং খেলার অভিজ্ঞতা আছে। পাকিস্তানের পেসাররা সবাই জোরে বল করে। ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পার্থক্য অনেক। তাই বাইরে থেকে কাউকে না এনে নাঈমকে আনা হয়েছে, ও দলের সঙ্গেই প্রস্তুত হয়েছে।’

দ্বিতীয় টেস্টের বাংলাদেশ দল: মুমিনুল হক (অধিনায়ক), সাদমান ইসলাম, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস, ইয়াসির আলি রাব্বি, নুরুল হাসান সোহান, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন চৌধুরী, আবু জায়েদ রাহী, নাঈম হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়, রেজাউর রহমান রাজা, খালেদ আহমেদ, শহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ নাইম শেখ।