হারের পেছনে মোটাদাগে তিন কারণ
- Details
- by খেলাধুলা প্রতিবেদক
টানা হারের মিছিলে যেন মরুপ্রায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্তর। তৃষিত হৃদয় স্বস্তির আবহ পেল না ঘরের মাঠেও। পাকিস্তানের বিপক্ষে শুক্রবার প্রথম টি-২০ তে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ অব্দি জয়ের সমীকরণ মেলাতে পারেনি টাইগাররা। ৪ উইকেটের হার নিয়েই মাঠ ছাড়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
বিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানকে আটকাতে মোস্তাফিজকে মাহমুদউল্লাহর পরামর্শ
ম্যাচের বেশ কিছু বিষয় সবার নজরেই পড়েছে। মাঠের বাইরে থেকে যেগুলোকে হারের নিয়ামক মনে হয়েছে। যদিও মাঠের ভেতরে থেকে তাৎক্ষণিক যেটা সঠিক মনে হয়, সেটাই করেন ক্রিকেটাররা। সেখানে অনেক সময় সিদ্ধান্তগুলো বিপক্ষে যায়, আবার কাজে লেগে যায়। তবে কিছুটা বুদ্ধি দীপ্ততা তাদের কাছে আশা করাটা ভুল নয়।
যেটা শুক্রবার সন্ধ্যায় দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তার নেতৃত্বের গলদ, লাগামহীন ডেথ বোলিং এবং টপঅর্ডারের নাজুক পরিস্থিতিই প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের পরাজয়কে ত্বরান্বিত করেছে।
নড়বড়ে টপঅর্ডার
বিশ্বকাপের আগে থেকেই টপঅর্ডারে ব্যর্থতার মিছিল চলছে। তামিম ইকবালহীন ওপেনিং জুটি পারছে না দলকে টেনে নিয়ে যেতে। বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সের পর লিটন দাস, সৌম্য সরকারকেও ছেঁটে ফেলা হয়েছে। তাদের নৈরাশ্য ভুলতে ভরসা করা হয়েছে নাঈম শেখ, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তদের উপর।
আজ তারা তিনজনই প্রমাণ করলেন, বাংলাদেশের টপঅর্ডার আসলে দুধ-ভাত হয়ে পড়েছে। বিশ্বকাপের ভূত চেপে বসা ব্যাটিং লাইনে ১৫ রানে নেই ৩ উইকেট। নাঈম শেখ-সাইফ হাসানের ব্যাটিং ছিল দৃষ্টিকটু। তাদের পা চলে না উইকেটে গেলে।
নাঈম জায়গায় দাঁড়িয়ে বাইরের বল তাড়া করে উইকেট কিপারকে ক্যাচ দিয়েছেন। ১ রান করেছেন তিনি ৩ বলে। সাইফ যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, ততক্ষণই যেন থরহরি কম্পমান অবস্থা। শেষতক অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল ঠেকাতে এগিয়ে যান। বল চলে যায় প্রথম স্লিপে। ৮ বলে ১ রান করেন সাইফ।
এমন কুৎসিত টেকনিক নিয়ে কেউ জাতীয় দলে তথা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারে, তা ভাবতেই মরমে মরমে হজম হয়ে যাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। টেস্ট অভিষেকেও পাকিস্তানের বিপক্ষে শূন্য রানে ফিরেছিলেন সাইফ। শান্ত ওয়ান ডাউনে নেমে ১৪ বলে ৭ রান করেছেন। ওয়াসিম জুনিয়রকে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন তিনি।
ডেথ ওভারে উদারহস্ত বোলিং
বিশ্বকাপে আইসিসি সহযোগী দেশগুলোর বিরুদ্ধেও ডেথ ওভারে রান আটকাতে পারেনি বাংলাদেশ। আজ মিরপুরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও একই চিত্র দেখা গেল। ১০ ওভারে ৪ উইকেটে ৪০ রান করেছিল বাংলাদেশ। পরের ৫৬ বলেই ৯২ রান তুললো পাকিস্তান ২ উইকেট হারিয়ে। মুস্তাফিজের মতো বোলার নির্ভরতার জায়গায় এলোমেলো বোলিংয়ে রান দিলেন।
শেষ ১৮ বলে ৩২ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। চেপে ধরার মোক্ষম সময় ছিল। যেখানে আঁটোসাঁটো বোলিং ম্যাচটার গতিপথ বদলে দিতে পারতো। কিন্তু ১৮তম ওভারে এসে মুস্তাফিজ পথ হারালেন। দুটি চার ও এক ছক্কায় দিলেন ১৫ রান। শাদাব, নাওয়াজের প্রহারে নড়ে গেলেন। চাপের বাঁধন খুলে যায়। অথচ আগের ৩ ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়েছিলেন বাঁহাতি এ পেসার।
পরের ওভারে এসে অগ্রজকে অনুসরণ করলেন শরীফুল। দুই ছক্কায় তিনি দিলেন ১৫ রান। তখনই ম্যাচ ফসকে গেল। শরীফুল যেন মুখস্ত বোলিং করলেন। রান আটকানো, কিংবা বুদ্ধি প্রয়োগের চেষ্টাও দেখা গেল না। থ্রি কোয়ার্টার লেন্থ থেকে বল শুধু ব্যাটসম্যানের বুকে তুললেন। শাদাব-নাওয়াজরা ছক্কা হাঁকালেন। ডেথ ওভারে এমন নখদন্তহীন বোলিং জয়ের সহায়ক হবে না কখনোই। সঙ্গত কারণেই সবার মনে প্রশ্ন জেগেছে, ডেথ ওভারের বোলার কই বাংলাদেশের?
মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বের গলদ
অধিনায়ক হিসেবে মাহমুদউল্লাহর সিদ্ধান্তও বুমেরাং হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। ম্যাচে তার সিদ্ধান্ত যে ব্যবধান গড়েছে, তা খুবই স্পষ্ট। রান তাড়া করতে নেমে ২৪ রানে ৪ উইকেট নেই পাকিস্তানের। চাপের এমন অগ্নিগর্ভ থেকে পাকিস্তানকে বের হতে দিয়েছে মাহমুদউল্লাহর সিদ্ধান্ত।
একাদশে লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব আছেন, তা যেন বেমালুম ভুলেই গেছেন অধিনায়ক। সপ্তম ওভারেই তাকে বোলিংয়ে আনা যেত। যেখানে চাপে থাকা পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা বিপ্লবকে তেড়ে খেলতে যেতেন না হয়তো। আর লেগ স্পিনার বলেই তাকে আক্রমণ করতে গিয়ে উল্টো উইকেট যেতে পারতো। এই সময়টাতে বিপ্লবের ওভারও শেষ করানো যেত। তা না করায় শেষ দিকে বোলিং লাইনের কোটাই মেলাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ।
এমনকি মাঝের ওভারগুলোতে নিজে বোলিং করলেও বিপ্লবকে আনেননি তিনি। উইকেটে দুই বাঁহাতি থাকার কারণেই নাকি এমনটা করেছেন, ম্যাচ শেষে তাই বলেছেন অধিনায়ক।
শেষ অব্দি যখন বিপ্লবের কথা মনে পড়লো মাহমুদউল্লাহর, ততক্ষণে ম্যাচ পাকিস্তানের পকেটে। লেগ স্পিনার নিয়ে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলনই যেন আজ আবারও দেখালেন টি-২০ অধিনায়ক। যেখানে বিশ্বকাপের আগেই দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল বিপ্লবকে। অন্যদিকে, লেগ স্পিনারদের যত্ন নিয়ে লালন করেছে বাকি দলগুলো। বিশ্বকাপে যার ফলও পেয়েছিল সবাই।
আজকের ম্যাচের পর সবার মনেই প্রশ্ন জেগেছে, বিপ্লবের সঙ্গে কোনো সমস্যা আছে কিনা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর? না হয় তাকে খেলানো এবং একাদশে রেখেও ব্যবহার না করার কারণ তো বোধগম্য নয় কারোই।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.