দুবাইয়ে হলুদ উৎসব

চ্যালেঞ্জটা কঠিন। লক্ষ্য ১৭৩ রানের। কঠিন লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে গেল হেসেখেলে। টপ অর্ডারের দৃঢ়তায় অজিরা পৌঁছে গেল স্বপ্নের ঠিকানায়। আজ দুবাইতে ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে আট উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া জিতল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা। উৎসবের রঙ হয়ে উঠল হলুদ।

ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ

লক্ষ্যটা প্রায় নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল। মিচেল স্টার্কদের পিটিয়ে তুলোধুনো করে নির্ধারিত ওভারে চার উইকেটে ১৭২ রানের শক্তিশালী সংগ্রহ তোলে নিউজিল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে সাত বল ও আট উইকেট হাতে রেখে দারুণ জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। এ নিয়ে তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনালে হারল কিউইরা।

রান তাড়ার কাজটা সহজ করে দিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। যদিও শুরুটা ভালো ছিল না। তৃতীয় ওভারে দলীয় ১৫ রানে অস্ট্রেলিয়া হারায় অধিনায়ক ও ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চের উইকেট। সাত বলে পাঁচ রানে বোল্টের শিকার হয়ে ফেরেন ফিঞ্চ। শুরুর ধাক্কা ভালোভাবেই সামলে ওঠে অস্ট্রেলিয়া।

কেন উইলিয়ামসনের ঝড় কাজে আসলো না

ওয়ার্নার ও মার্শ দুজনের ব্যাটেই ওঠে তাসমান ঝড়। সেই ঝড়ে এলোমেলো নিউজিল্যান্ডের বোলিং লাইন। ওভার প্রতি প্রায় নয় রান করে তোলেন তারা। ১৩তম ওভারের শুরুতে দলীয় ১০৭ রানে ওয়ার্নার-মার্শকে বিচ্ছিন্ন করেন বোল্ট। বাঁ-হাতি ওপেনারের স্টাম্প ওড়ান বোল্ট। ৩৮ বলে চারটি চার ও তিন ছক্কায় ৫৩ রানে ফেরেন ওয়ার্নার।

মার্শকে আর ফেরানো গেল না। ৫০ বলে ৭৭ রানে অজেয় থাকলেন তিনি। ছয় চার ও চার ছক্কায় ম্যাচজয়ী ইনিংসটি সাজান মার্শ। ইনিংস খেলার পথে তাকে যোগ্য সঙ্গটাই দিয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ১৮ বলে ২৮ রানে অপরাজিত থাকলেন এই অলরাউন্ডার। তাতেই হলো চক্রপূরণ। পাঁচটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের পর টি-টোয়েন্টিতেও ধরা দিল সাফল্য। আর নিউজিল্যান্ডের জন্য ফাইনাল হয়ে উঠল এক দুঃখের নাম।

লড়াইয়ের আগেই একবার হেরে বসেছে নিউজিল্যান্ড। টস হেরে ব্যাট করতে নামা কিউইদের শুরুটাও ভালো হয়নি। ছয় ওভারে এক উইকেটের বিনিময়ে নিউজিল্যান্ড তোলে ৩২ রান। এবারের বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে এটাই কিউইদের সর্বনিম্ন সংগ্রহ। চতুর্থ ওভারে দলীয় ২৮ রানে ফেরেন ওপেনার ডারিল মিচেল। আট বলে ১১ রান করেন তিনি।

উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ধীরগতিতে ব্যাট করতে থাকেন মার্টিন গাপটিল ও উইলিয়ামসন। ১০ ওভারে ৫৭ রান তোলেন তারা। এরপরই তাণ্ডব শুরু উইলিয়ামসনের। মিচেল স্টার্কদের বেধরক পেটান তিনি। বিরতির আগে ১৯ বলে ১৮ রান ছিল নিউজিল্যান্ড অধিনায়কের। বিরতির পরের ২৯ বলে ৬৭ রানের টর্নেডো ওঠে উইলিয়ামসনের ব্যাটে।

শতকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন। কিন্তু ৪৮ বলে ৮৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে আউট হন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটা তার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তবে ফাইনালে কোনো ব্যাটার বা অধিনায়কের এটাই সর্বোচ্চ সংগ্রহ। দুর্দান্ত ইনিংসটা উইলিয়ামসন সাজিয়েছেন ১০টি চার ও তিন ছক্কায়। কিন্তু বৃথা গেল ইনিংসটা।

৩৫ বলে তিন চারে ২৮ রানে ফেরেন গাপটিল। ১৭ বলে একটি করে চার-ছক্কায় ১৮ রানে আউট হন গ্লেন ফিলিপস। এ ছাড়া জিমি নিশাম সাত বলে ১৩ এবং টিম সিফার্ট ছয় বলে আট রানে অপরাজিত থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল জস হ্যাজলউড চার ওভারে ১৬ রানে নেন তিন উইকেট।

অন্য উইকেটটা নিয়েছেন অ্যাডাম জাম্পা। তবে নিউজিল্যান্ডের আসল ঝড়টা গেছে স্টার্কের ওপর দিয়ে। চার ওভারে ৬০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন এই পেসার। বোলাররা নিউজিল্যান্ডকে অল্পতে আটকাতে পারেনি। ওয়ার্নার-মার্শ ঝড় আড়াল করে দিয়েছে বোলারদের ব্যর্থতা।