যে কোনো মহিলার জন্য গর্ভধারণ জীবনের বড় একটি ঘটনা। সেই সাথে এটি মানসিক চাপেরও কারণ। গর্ভাবস্থায় একটি জটিল সমস্যা হল ডায়াবেটিস দেখা দেওয়া। আবার অনেকে গর্ভধারণের আগেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। যেটাই হোক না কেন গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে মা ও শিশু উভয়ই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, অন্তত দশ শতাংশ নারীর গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থাকে।

in pregnancy with diabetes

গর্ভাবস্থায় রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তা না হলে মা এবং বাচ্চা দুজনের নানারকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি বাচ্চার মৃত্যুরও সম্ভাবনা থাকে। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে ভ্রূণের তৈরি, বেড়ে ওঠার জন্য প্লাসেন্টা বিভিন্ন রকমের হরমোন তৈরি করে, যার জন্য গ্লুকোজও বেশি মাত্রায় তৈরি হয়। এই গ্লুকোজের সঠিক ব্যবহারের জন্য মায়ের শরীরে ইনসুলিনও বেশি পরিমাণে তৈরি হয়। হঠাৎ এই পরিবর্তনের ফলে মায়ের শরীর যথেষ্ট ইনসুলিন রিলিজ করতে পারে না, এতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলাফল স্বরূপ দেখা দেয় গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের কোন নির্দিষ্ট লক্ষণ নেই। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত তৃষ্ণা পাওয়া, বার বার প্রস্রাব হওয়া, অস্বাভাবিক ক্লান্তি, বার বার যোনিমুখে ইস্ট ইনফেকশন বা থ্রাশ হওয়ার মত লক্ষণগুলো দেখা দেয়। বেশিরভাগই গর্ভবতী নারীর মধ্যেই এই লক্ষণগুলো দেখা যায়। তাই গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস হয়েছে কি না নিশ্চিত হতে রুটিন ব্লাড গ্লুকোজ টেস্ট করাতে হবে। গর্ভাবস্থায় সাধারণত তিন ধরনের ডায়াবেটিস হতে দেখা যায়।

  • রোগী আগে থেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ইনসুলিন নির্ভর। এর মানে হল তাঁর শরীরে পেনক্রিয়েজ হয়তো ইনসুলিন উৎপাদন করে না তাই ইনসুলিন দিয়েই চিকিৎসা করতে হয়।
  • রোগী সাধারণত মোটা হয় এবং পেনক্রিয়েজের মাধ্যমে ইনসুলিন তৈরি হলেও রক্তে ইনসুলিনের চাহিদা মেটায় না। তাঁদের রক্তে শর্করার আধিক্য থাকে।
  • সাধারণত রোগীর ডায়াবেটিস থাকে না। কিন্তু গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়। একে বলা হয় জেসটেশনাল ডায়াবেটিস। ডেলিভারির পর এটি থাকে না কিন্তু পরবর্তী গর্ভধারণের সময় ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস দেখা দিলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। বাচ্চার আকার বড় হয়ে যায়, মায়ের রক্তচাপ এবং মায়ের প্রি-এক্লাম্পশিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সময়ের আগে প্রসব শুরু এবং মৃত সন্তান প্রসবের ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেক। বাচ্চারও রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাওয়া, জন্ডিস ও নানা রকমের সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া এসব বাচ্চার ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা থাকে।

তাই গর্ভধারণের আগেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করে ফিট থাকা গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস এড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায়। অতিরিক্ত ওজন এবং ত্রিশ বছর বয়সের পর বাচ্চা নেয়া ঝুঁকি বাড়ায়। গর্ভধারণের পরিকল্পনা করলে এসব বিষয়ে মনোযোগ দিন সবার আগে। মনে রাখবেন পরিবারে কারো টাইপ টু ডায়াবেটিস থাকলে গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি থাকে বেশি।

গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর ডায়েট আর ব্যায়ামই যথেষ্ট। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। গর্ভের সন্তান আর মায়ের পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত এবং গর্ভাবস্থায় সঠিক ওজন বজায় রাখতে হবে। ইনসুলিন ইনজেকশনের প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন নিয়মিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নিয়মিত চেক-আপের মাধ্যমে মায়ের রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা।

গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সঠিক জীবন যাপন করুন। নিজে সুস্থ থাকুন। গর্ভের শিশুকেও সুস্থ রাখুন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

ডায়াবেটিকস রোগীর খাবার যা হওয়া উচিত

ডায়াবেটিস হতে পারে নানা কারণে

নতুন মায়ের যত্ন

প্রেগন্যান্ট হলে কসমেটিক্স ব্যবহারে সর্তক থাকুন

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.