বাঁচল বাংলাদেশ বাঁচল স্বপ্ন

রীতিমতো ভয় পাইয়ে দিয়েছিল ওমান। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সহজ জয়ের পথেই হাঁটছিল স্বাগতিক শিবির। কোণঠাসা বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছিল আরো একটা অঘটন। শেষ পর্যন্ত বেঁচে গেল টাইগাররা। মাহমুদউল্লাহর দারুণ নেতৃত্বে অসাধারণ এক প্রত্যাবর্তন করল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

অনেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত আশা জাগিয়ে রাখল বাংলাদেশ

ভয়ের পর বাংলাদেশ জিতল ২৬ রানে। শ্বাসরুদ্ধকর এই জয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূলপর্বের আশা বাঁচিয়ে রাখল টাইগাররা। বৃহস্পতিবার পাপুয়া নিউগিনির মুখোমুখি হবেন রিয়াদ অ্যান্ড কোং। ওই ম্যাচে বাংলাদেশকে জিততে হবে বড় ব্যবধানে। অন্যথায় তাকিয়ে থাকতে হবে স্কটল্যান্ড-ওমান ম্যাচের দিকে।

আজ মাস্কাটের আল আমিরাত স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মাদ নাঈম শেখ ও সাকিব আল হাসান ঝড়ে লড়াইয়ের পুঁজি তুলে নেয় বাংলাদেশ। অলআউট হওয়ার আগে ১৫৩ রান করে টাইগাররা। জবাব দিতে নামা ওমান নির্ধারিত ওভারে নয় উইকেটে ১২৭ রান তুলতে সক্ষম হয়।

রান তাড়ায় ১১ ওভারে ৮১ রান করে ফেলেছিল ওমান। অধিনায়ক মাকসুদকে আউট করে ম্যাচে ফেরার আভাস দেন মেহেদি হাসান। অন্যরা বল হাতে উদার হলেও যথেষ্ঠ মিতব্যয়ী ছিলেন তিনি। কিন্তু জিসানকে ফেরালেও নির্ভার থাকা যায়নি। অন্যপ্রান্তে যে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন জতিন্দার সিং!

১৩তম ওভারের শেষ বলে তাকে ফেরান সাকিব। ওমান ওপেনারের দুর্দান্ত ক্যাচটা নেন লিটন দাস। ম্যাচ তখন পুরোপুরি বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে। টপ অর্ডারের ব্যাটারদের ফিরিয়ে স্বাগতিকদের চেপে ধরে টাইগাররা। একদিকে উইকেট আগলে রাখার চাপ অন্যদিকে আস্কিং রেটের চাপ। এই দুই চাপে ধসে পড়ে ওমানের মিডল ও লোয়ার অর্ডার।

৩৩ বলে ৪০ রানে ফেরেন জতিন্দার। কাশিপাল প্রজাপতি ১৮ বলে ২১ রানে আউট হন। জিসান সাজঘরের পথ ধরেন ব্যক্তিগত ১২ রানে। শেষ দিকে ১২ বলে ১৪ রানে অজেয় থাকেন মোহাম্মদ নাদিম। বাকিদের কেউ যেতে পারেননি দুই অংকের ঘরে। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ চার উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। তবে রান দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। চার ওভারে ৩৬।

২৮ রানে তিনটি শিকার সাকিবের। মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন এবং মেহেদি একটি করে উইকেট নিলেও সত্যিকার অর্থে এই দুজনই নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে চেপে ধরেছিলেন ওমানকে। চার ওভারে ১৬ রান দিয়েছেন সাইফুদ্দিন। সমান ওভারে ১৪ রান খরচ করেন মেহেদি। তবে অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সের সুবাদে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব।

এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ফের বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেটে বাংলাদেশ তোলে ২৯ রান। এ সময়ে বিদায় নেন ওপেনার লিটন দাস ও মেহেদি। সাত বলে ছয় রানে আউট হন লিটন। চার বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি মেহেদি। পরে সাকিবকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন নাঈম।

এই দুজনের ৮০ রানের জুটিতে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। জুটি ভাঙে সাকিবের দুর্ভাগ্যবশত রান আউটে। সিঙ্গেল নিতে গিয়ে আউট হন সাকিব। আকিব ইলিয়াসের সরাসরি থ্রোতে ভেঙে যায় স্টাম্প। ২৯ বলে ছয়টি চারে ৪২ রানে ফেরেন সাকিব।

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাজঘরে ফিরতেই আরেক দফা ছন্দপতন বাংলাদেশের। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খোয়ায় টাইগাররা। দুই উইকেটে ১০১ থেকে ১৩৮ রানের মধ্যে শেষ বাংলাদেশের আট উইকেট। তবে নিয়মিত উইকেট হারালেও রানের চাকা ঠিকই সচল রাখেন ব্যাটাররা।

১২২ রানে দলের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার নাঈম। ৫০ বলে ৬৪ রান করেন বাঁ-হাতি ওপেনার। তিনটি চার ও চারটি ছক্কায় ইনিংসটি জানিয়েছেন তিনি। শেষ দিকে ১০ বলে ১৭ রান করেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। দলের বাকি আট ব্যাটসম্যান যেতে পারেননি দুই অংকে।

বাংলাদেশকে অলআউট করতে মুখ্য ভূমিকা ওমানের দুই পেসার বিলাল খান ও ফাইয়াজ বাটের। দুজনই সমান তিনটি করে উইকেট নেন। দুটি শিকার কলিমুল্লাহর। এক উইকেট নিয়েছেন স্বাগতিক অধিনায়ক জিসান মাকসুদ। ব্যাটসম্যানরা লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছেন। বাকি কাজটা অনেক কষ্টে সারলেন বাংলাদেশের বোলাররা।