স্বপ্নযাত্রায় দুঃস্বপ্নের শুরু

জয়ের ভিতটা গড়ে দিয়েছিলেন বোলাররা। স্পিন জাদুতে স্কটল্যান্ডকে ১৪০ রানে বেঁধে ফেলেন সাকিব-মেহেদিরা। কিন্তু দুই ওপেনারের দায়িত্বহীনতা এবং মিডল অর্ডারের প্রস্তর যুগের ব্যাটিং ম্যাচে ডোবাল বাংলাদেশকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বড়সড় ধাক্কা খেল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।

ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন এই গ্রিভস

আজ ওমানের মাস্কাটে স্কটল্যান্ডের কাছে টাইগাররা হারল ছয় রানে। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে নয় উইকেটে ১৪০ রানের মাঝারি মানের পুঁজি গড়ে স্কটিশরা। জবাব দিতে নেমে সাত উইকেটে ১৩৪ রান তুলতে সক্ষম হয় টাইগাররা। কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার স্কটিশদের কাছে হারল বাংলাদেশ। প্রথমবার ২০১২ সালে এই দলটার কাছে ৩৪ রানে হেরেছিল টাইগাররা।

সহজ লক্ষ্য শুরুতেই কঠিন করে দিয়ে যান দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও লিটন দাস। প্রথমজন ফিরেছেন দ্বিতীয় ওভারে; পরেরজন চতুর্থ ওভারে। দুজনই আউট হন সমান পাঁচ রানে। শুরুর জোড়া ধাক্কা সামলে উঠতে লড়াই চালিয়ে যান সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। দুজন ভালোই করছিলেন।

উইকেটের লাগাম টানতে ধীরেসুস্থে ব্যাটিং করেন তারা। কিন্তু আস্কিং রেটের চাপে আউট হয়ে গেলেন সাকিব। দ্বাদশ ওভারের শুরুতেই আউট হন টাইগার অলরাউন্ডার। ২৮ বলে ২০ রানে আউট হন সাকিব। তার বিদায়ে ভাঙে ৪৭ রানের জুটি। একটু পর সাজঘরের পথ ধরলেন মুশফিকও। ৩৬ বলে ৩৮ রান করেন তিনি।

সাকিব-মুশির আউটে ম্যাচ থেকে এক প্রকার ছিটকে যায় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ হোসেন ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করেন। কিন্তু লড়াইয়ে ফেরাতে পারলেন না দলকে। ২২ বলে ২৩ রান করেন টাইগার অধিনায়ক। ১২ বলে ১৮ রানে ফেরেন আফিফ।

শেষ দিকে মেহেদি পাঁচ বলে ১৩ রানের যে অজেয় ইনিংসটা খেললেন তা কেবল হারের ব্যবধান কমিয়েছে মাত্র। বাংলাদেশের পতন হওয়া সাত উইকেটের তিনটি নিয়েছেন ব্রেডলি হুইল। দুটি শিকার ক্রিস গ্রেভেসের। অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স গ্রেভেসকে এনে দিয়েছে ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি।

এর আগে ব্যাট করতে নামা স্কটল্যান্ডকে চেপে ধরেন টাইগার বোলাররা। তৃতীয় ওভারে প্রতিপক্ষের দলীয় পাঁচ রানে প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। ওপেনার কাইল কোয়েটজারের স্টাম্প ওড়ান পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। সাত বল খরচ করা কোয়েটজার ফেরেন রানের খাতা না খুলেই।

ম্যাথু ক্রসকে নিয়ে ধাক্কাটা প্রায় সামলে ওঠেন স্কটল্যান্ড জর্জ মুন্সি। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তারা যোগ করেন ৪০ রান। দুজনকেই ফেরান শেখ মেহেদি হাসান। ২৩ বলে ২৯ রানে ফেরেন মুন্সি। ক্রস আউট হন ১৭ বলে ১১ রানে। মেহেদির ব্রেক থ্রুর পরই ধসে পড়ে স্কটল্যান্ডের টপ অর্ডার।

সাকিব ও মেহেদির দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৫৩ রানের মধ্যে তাদের ছয় উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। পরে উইকেটের লাগাম টেনে ধরেন ক্রিস গ্রেভেস ও মার্ক ওয়াট। ঝড় তোলেন দুজনই। সপ্তম উইকেট জুটিতে দুজন মিলে করেন ৫১ রান। ২৮ বলে ৪৫ রানে বিদায় নেন গ্রেভেস। ১৭ বলে ২২ রানে ফেরেন ওয়াট।

বাংলাদেশের শেষের বোলিংটা সুবিধার হয়নি। শেষ তিন ওভারে ৩৬ রান তুলেছে স্কটল্যান্ড। চার ওভারে ১৯ রানে তিন উইকেট নেন মেহেদি। সমান ওভারে দুই রান কম দিয়ে একটি উইকেট কম নেন সাকিব। মুস্তাফিজুর রহমান দুই উইকেট নিলেও রান দিয়েছেন ৩২। একটি মেডেনও নেন ফিজ।

এ ছাড়া ৩০ রানে এক উইকেট নিয়েছেন সাইফুদ্দিন। তিন ওভারে ২৮ রান দেওয়া তাসকিন আহমেদের শিকার একটি। বোলারদের মধ্যে কেবল আফিফ হোসেন উইকেট পাননি। এক ওভারে ১০ রান দিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে বোলিংটা খারাপ হয়নি টাইগারদের।

কিন্তু দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ের মাসুল দিতে হলো। দুঃস্বপ্নের এই হারে সুপার টুয়েলভে যাওয়ার পথটা কঠিন হয়ে গেল বাংলাদেশের জন্য। আর এগিয়ে থাকল স্কটল্যান্ড।