এমন দিনে আশরাফুলকে মনে পড়ে

সময়ের পালাক্রমে আরও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সাক্ষী হয়েছে ক্রিকটে বিশ্ব। গোটা ক্রিকেট দুনিয়ার ভক্তদের মাঝে চলছে টানটান উত্তেজনা। চায়ের দোকান, অফিস, কিংবা নিজ বাড়ি, সব জায়গায় এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ব্যাট-বলের ময়দানি লড়াই। সেখানে ম্যাচ যদি হয় বাংলাদেশের তাহলে তো কথাই নেই। সব কাজ ফেলে রেখে টিভি পর্দায় ঢুঁ মারার পরিকল্পনা করছে টাইগার ভক্তরা। তবে এখনও একটা জায়গায় স্পষ্ট হাহাকার আছে তাদের মনে। আছে অতীত হাতড়ানোর গভীরতা। যার বেশিরভাগ জায়গাজুড়েই থাকবে মোহাম্মদ আশরাফুলের নাম।

সবশেষ ২০১৩ সালে বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন আশরাফুল

ব্যাবসা কিংবা সময়ের চাহিদা যেকোন খাতিরেই হোক, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা এখন বেশ জনপ্রিয়। সময় কম লাগার পাশাপাশি দারুণভাবে বিনোদিত হওয়ার সুযোগ থাকায় সবার কাছে বিশ ওভারের ক্রিকেটের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। এজন্য বিভিন্ন দেশে নিয়মিত চলছে টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। সবার সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও চালু আছে কোটি টাকার টুর্নামেন্ট বিপিএল।

বলার অবকাশ নেই, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকদূর এগিয়ে গেছে ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড কিংবা নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলো। যেকোন লিগেই তাই এসব দেশের ক্রিকেটারদের আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হয়। এদিক দিয়ে এখনও যোজন যোজন পিছিয়ে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশকে দুটি বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন আশরাফুল

অথচ ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট শুরুর আগের ইতিহাস ঘাটলে বাংলাদেশকে যে কেউ টি-টোয়েন্টির জন্য আদর্শ দল মনে করতে বাধ্য। এজন্য স্মৃতির ডায়রি থেকে ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফিরে যেতে হবে। সেবার প্রথমবারের মতো কুড়ি ওভারের বিশ্বমঞ্চ আয়োজন করে আইসিসি। আয়োজক ছিল ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বে। এই ডানহাতি ক্রিকেটার শুধু নেতৃত্বেই নয়, দারুণ এক ইনিংস খেলে সবার মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন।

‘এ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন আশরাফুল। সৈয়দ রাসেল, আব্দুর রাজ্জাকদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পরও মারলন স্যামুয়েলস, ডোয়াইন স্মিথদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ১৬৪ রানের পুঁজি পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হয়তো সেই সাথে জয়ের স্বপ্নও হৃদয়পটে একেঁছিল তারা। কিন্তু তাদের সে স্বপ্নে কালো দাগ লাগিয়ে দেন আশরাফুল।

৮ বছর ধরে জাতীয় দলের বাইরে আছেন আশরাফুল

বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দলীয় ২৮ রানেই মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন ও তামিম ইকবালকে হারায় বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে হয়তো জয়ের কথা স্বপ্নেও কল্পনা করেনি বাংলাদেশ। ভক্তদের ভেঙে যাওয়া স্বপ্নকে জোড়া লাগান আশরাফুল। জোহানেসবার্গের নিউ ওয়ার্ডারার্স স্টেডিয়ামে ঝড় তুলেন সাবেক এই অধিনায়ক। তাতেই একবুক হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ে ক্যারিবিয়ানরা।

আশরাফুল সেদিন দেখিয়েছেন টি-টোয়েন্টি খেলা কত সহজ। ফিদেল এডওয়ার্ডস, ডোয়াইন ব্রাভো, রিভি রামপালদের একের পর এক হুক এবং পুল মেরে ২০ বলেই ফিফটি তুলে নেন। যেটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানের প্রথম অর্ধশতক। ঢাকার তারকা ক্রিকেটারের সে ঝড় শেষ পর্যন্ত থেমেছে ব্যক্তিগত ৬১ রানে। তার আগে ৭ চার এবং ৩ ছয় মারেন আশরাফুল। তার আউট হওয়ার পর আফতাব আহমেদ ও অলক কাপালির ব্যাটে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন টেস্টের সর্বকনিষ্ট সেঞ্চুরিয়ান।

ফিক্সিংজনিত কারণে ২০১৩ সালের পর থেকে জাতীয় দলের বাইরে আছেন আশরাফুল। টি-টোয়েন্টিতে ২৩টির বেশি ম্যাচ খেলা হয়নি তার। যেখানে ১৯.৬০ গড় এবং ১২৬.৪০ স্ট্রাইকরেটে সংগ্রহ করেছেন ৪৫০ রান। পরিসংখ্যান ঘাটলে বর্তমান বাংলাদেশ দলের অনেক তারকা ক্রিকেটারও আশরাফুল থেকে পিছিয়ে থাকবেন।

সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে সবশেষ ২০১০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছেন আশরাফুল। বাংলাদেশ এরপর আরও তিনটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে (চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছাড়া)। কোনবারই আশরাফুলের মতো দৃঢ়তা দেখাতে পারেনি কেউ। তাই তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসলে অজান্তেই দলের বাইরে থাকা এই ক্রিকেটারকে মনে পড়ে যায় সবার।