আপনি পড়ছেন

আর্কটিক অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন নিয়ে বিস্তর প্রচারণায় ব্যস্ত ''আর্কটিক কাউন্সিল' এর বর্তমান চেয়ার (২০২১-২৩) রাশিয়া। সভাপতিত্বকে স্মরণীয় করতে অঞ্চলটির সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি, পরিবেশগত ভারসাম্যতা, সুষম দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করতে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া।

vladimir putin and xi jinpingপুতিন এবং শি জিনপিং

আর্কটিক কাউন্সিলর বর্তমান পূর্ণ সদস্যা ৮টি দেশ। কানাডা, ডেনমার্ক (গ্রিনল্যান্ড ও ফারো দ্বীপপুঞ্জ), ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, রাশিয়া, সুইডেন ও যুক্তরাষ্ট্র (আলাস্কা)। এ ছাড়া পর্যবেক্ষক হিসেবে রয়েছে ছয়টি রাষ্ট্র- চীন, ভারত, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর। বেইজিংয়ের সঙ্গে মস্কোর কৌশলগত সম্পর্ক থাকলেও রাশিয়া চাইছে না চীনের মতো আগ্রাসী একটি রাষ্ট্র আর্কটিক অঞ্চলের এই জোটের পূর্ণ সদস্য হোক। কারণ চীনের আধিপত্যবাদী কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে অঞ্চলটির জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে বলে ধারণা রাশিয়ার। আর সেই শঙ্কারও যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ রয়েছে।

২০১৮ সালে চীন নিজেকে 'সুমেরু অঞ্চলের নিকটবর্তী রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা করে। তারও অনেক আগে নব্বইর দশক থেকেই আর্কটিক নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বেইজিং। সেখানকার খনিজ শিল্প ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করেছে তারা। দেশটি এখন সেখানে একটি নিউক্লিয়ার-পাওয়ার্ড আইসব্রেকার উন্নয়নের পরিকল্পনা করছে। সবচেয়ে বড় কথা সুমেরু অঞ্চলে ‘পোলার সিল্ক রোড’ নির্মাণের পরিকল্পনাও প্রকাশ করেছে দেশটি। সাদা চোখে এসব বিষয় অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত মনে হলেও আদতে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার জন্য উদ্বেগের কারণ।

আর্কটিক অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলে পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিলেও সেখানে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্ভাবনা খুঁজছে চীন। কারণ পৃথিবীর অনাবিষ্কৃত তেলসম্পদের ১৩ শতাংশই রয়েছে আর্কটিক অঞ্চলে। শুধু তাই নয় সেখানে প্রাকৃতিক গ্যাসের ৩০ শতাংশ লুকিয়ে আছে বরফের নিচে। লৌহ আকরিক, তামা, দস্তায় সমৃদ্ধ এ অঞ্চল। রয়েছে প্লাটিনাম, সোনা, রূপার মতো মূল্যবান ধাতুও। এসব কারণেই সেখানে নিউক্লিয়ার-পাওয়ার্ড আইসব্রেকার উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বেইজিং।

ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ভূরাজনীতি বিষয়ক অধ্যাপক ক্লাউস ডডস মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা দেশগুলোর যে দুশ্চিন্তা দেখতে পাচ্ছি, তার মূল কারণ উন্মুক্ত হতে থাকা নতুন জলপথ। আগে আর্কটিক অঞ্চলের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যই এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অন্যন্য করে রেখেছিল। কিন্তু বরফ গলে এখন যদি উত্তর মেরু বিশ্বের আর দশটা সাগরের মতোই হয়ে যায় তাহলে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা থেকে উদ্ভূত সুরক্ষা ব্যবস্থাটি আর কার্যকর থাকবে না।’

আর সেই সুযোগকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করতে অঞ্চল্টিতে নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড আইসব্রেকার উন্নয়ন করতে যাচ্ছে চীন। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বরফ কেটে চলাচল করতে পারবে চীনের সামুদ্রিক জাহাজগুলো। ফলে, হাজার বছর ধরে প্রকৃতি এই অঞ্চলের দেশগুলোকে যে নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে রেখেছিলো তা ভেঙে ফেলবে বেইজিং। আর তাই অঞ্চলটির অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসেবে চীনের কর্মকাণ্ড হ্রাস করতে দেশটিকে পূর্ণ সদস্যপদের মর্যাদা দিতে নারাজ মস্কো।

অথচ দেশ দুটির মধ্যে আপাত সুসম্পর্ক দেখা গেলেও তার পেছনে রয়েছে কূটনৈতিক চাল। কারণ, ওয়াশিংটন এবং ইউরোপে তার ঘনিষ্ঠ মিত্ররা রাশিয়ার ওপর যেসব অবরোধ আরোপ করেছে, তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চীনের মতো শক্তিশালী অর্থনীতির দেশের সঙ্গে মৈত্রী গড়ে তুলেছে রাশিয়া। অন্যদিকে চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে চাপ সৃষ্টি করেছে এবং পূর্ব চীন সাগরের সেনকাকু দ্বীপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশ জাপান বেইজিংকে যে চাপের মধ্যে রেখেছে, তা থেকে বাঁচতে চীন বৃহৎ সামরিক শক্তির দেশ রাশিয়াকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। তবে চীনের কর্মকাণ্ডের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে রাশিয়া।

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় চীন যে আধিপত্য বিস্তারের পরিকল্পনা করেছে, সে বিষয়ে মস্কো সজাগ দৃষ্টি রেখেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়া চীনের বিআরআই প্রকল্পের অবকাঠামো ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে কারিগরি সহায়তা দেবে বলে ঠিক হয়ে আছে। সেই মতো চুক্তিও হয়েছে। কিন্তু চুক্তির বাইরে চীন এই প্রকল্পের সুযোগ নিয়ে রাশিয়ার আধিপত্য থাকা এলাকায় খবরদারি করার সুযোগ পেয়ে যাবে কি না, সে বিষয়ে মস্কো সজাগ দৃষ্টি রেখেছে। বিশেষত, দূরপ্রাচ্যে চীনের বিনিয়োগ বাড়ানোকে মোটেও ভালোভাবে নিচ্ছে না রাশিয়া। কারণ, এর ফলে আর্কটিক অঞ্চল রাশিয়ার হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

চলতি বছরের ২৬ মে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক মতামতধর্মী কলামে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চীন রাশিয়ার অভ্যন্তরেও দখলদারিত্ব চালিয়েছে। সাইবেরিয়ার ইহুদিদের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল যেটি চীনের হেইলংজিয়াং প্রদেশের কাছাকাছি অবস্থিত সেখানকার অন্তত ৮০ শতাংশ ভূমির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে চীন। শুধু তাই নয়, অনেক চাইনিজ দাবি করে যে, ১৯৫৮-৬০ সালে চুক্তির ফলে রাশিয়া সাইবেরিয়ার যে সকল অংশে মালিকানা পায়, বৈকাল হ্রদের আশপাশের সেই এলাকা বেইজিংকে পুনরায় বুঝিয়ে দিতে হবে। ফলে সেই অঞ্চলের বাসিন্দারা শঙ্কিত যে, ভবিষ্যতে চীন সাইবেরিয়া দখলের চেষ্টা চালাবে৷ ফলে রাশিয়া কোনভাবেই চায় না যে, চীন আর্কটিক কাউন্সিলর সদস্যপদ পাক এবং এই অঞ্চলে খবরদারি করুক।

লেখক: শঙ্কর কুমার

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.