অবজ্ঞা করে তালিকায় বার্সেলোনাকে রাখলেন না মেসি!

যে বার্সেলোনায় খেলে তিনি আজকের মেসি হয়েছেন, সেই বার্সেলোনার নামটাই ভুলে গেলেন লিওনেল মেসি? নাকি স্বেচ্ছায় স্রেফ অবজ্ঞা করেই বার্সেলোনার নামটা নিজের তৈরি তালিকায় রাখলেন না তিনি! কারণ যেটাই হোক, নিজের তৈরি এবারের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফেভারিটদের তালিকায় বার্সেলোনার নামটা অন্তর্ভুক্ত করেননি।

লিওনেল মেসি

সম্প্রতি ব্যালন ডি’অর প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের বিশ্বখ্যাত ফুটবল সামযিকী ফ্রান্স ফুটবলকে দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মেসি। সেখানে অন্য অনেক বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি মেসিকে এই প্রশ্নটিও করেছিল ফ্রান্স ফুটবল। প্রশ্নটি ছিল- এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফেভারিট কোন কোন দল? উত্তরে ৭টি ক্লাবের নাম বলেছেন মেসি। কিন্তু ভুল করেও নিজের সদ্য সাবেক ক্লাব বার্সেলোনার নামটি বলেননি!

মেসিকে সঙ্গে নিয়েই গত ১৫ বছরে ৪ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছে বার্সেলোনা। সেই বার্সেলোনার ফেভারিট তালিকায় না থাকাটা বিস্ময়করই। মেসির তালিকায় না থাকা আরও বেশি বিস্ময়কর।

বার্সেলোনার লোগো

কারণ, মেসি যে আজকের মেসি হয়ে উঠেছেন, তার পেছনে বার্সেলোনার ভূমিকা অনেক। তিনি নিজে যেমন পায়ের মোহনীয় জাদুতে একের পর এক শিরোপা জিতিয়ে বার্সেলোনাকে সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তেমনি তার নিজের আকাশে ওঠার পেছনেও ক্লাব বার্সেলোনার ভূমিকা বিশাল। তাছাড়া যে কোনো টুর্নামেন্টই হোক, বার্সেলোনা বরাবরই ফেভারিট। গত দেড় যুগে ভুল করেও কেউ বার্সাকে ফেভারিট তালিকা থেকে বাদ দেয়ার সাহস দেখাতে পারেননি!

এবারের চিত্রটা অবশ্য পুরোপুরি ভিন্ন। একের পর এক অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে হারিয়ে গত কয়েক মৌসুম ধরেই বার্সেলোনা তাদের সর্বজয়ী রূপ হারিয়েছে। তারপরও বার্সেলোনার আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলছিলেন যিনি, এবার সেই মেসিও বার্সেলোনা ছেড়ে যোগ দিয়েছেন ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে। মেসির পাশাপাশি ফরাসি ফরোয়ার্ড গ্রিজমানও বার্সা ছেড়ে আবার ফিরে গেছেন অ্যাটলেতিকো মাদ্রিদে। লুইস সুয়ারেজকে তো বার্সা ছেড়ে দিয়েছে আগের মৌসুমেই।

আক্রমণভাগের প্রধান তিন খেলোয়াড়কে হারিয়ে বার্সেলোনার অবস্থা এখন শোচনীয়। গোল করার লোকই নেই! ফল, বার্সেলোনার মাঠের পারফরম্যান্স ভয়াবহ রকমের বাজে! চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে বসেছে বার্সেলোনা। ফলে তাদের গ্রুপপর্ব পার হওয়া নিয়েই দেখা দিয়েছে সংশয়। দলের করুণ চেহারার দিকে তাকিয়ে বার্সেলোনার হেড কোচ রোনাল্ড কোম্যান সমর্থকদের সতর্ক করে বলেছেন, এই দলের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা আশাটা করাটা হবে বাড়াবাড়ি।

মানে কোচ কোম্যান নিজেই বার্সেলোনাকে ফেভারিট তালিকায় রাখছেন না। মেসি অবশ্য একটু বিনয়ী হতেই পারতেন। যে দলটির সমর্থকদের হৃদয়ের মধ্যমণি হয়ে ছিলেন এতগুলো বছর, সেই সমর্থকদের খুশি করার জন্য হলেও নিজের তালিকায় বার্সার নামটা যোগ করতে পারতেন। কিন্তু বাস্তবতা পড়তে পেরেই হয়তো সেই বিনয়-ভদ্রতা মেসি দেখাননি।

বার্সাকে তো রাখেননি। এখন প্রশ্ন হলো, এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার দৌড়ে মেসির ‘টপ ফেভারিট’ কোন দল? কোন দল আবার? তারই বর্তমান দল পিএসজি। হ্যাঁ, টপ ফেভারিট হিসেবে নিজের বর্তমানের দলের নামটিই উচ্চারণ করেছেন রেকর্ড ৬ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী।

নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পে, মাউরো ইকার্দি, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়াদের মতো তারকা থাকতেও মেসিকে পিএসজি কিনে এনেছে এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে পাখির চোখ করে। তো ক্লাব কর্তা-সমর্থকদের সেই স্বপ্নে রঙ ছিটাতে হবে না! মেসি তাই পিএসজির নামটিই বলেছেন সবার আগে। এরপর এক এক করে বলেছেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ এবং ইন্টার মিলানের নাম।

শুধু ফেভারিট নয়, পিএসজির হাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপাই যেন দেখতে পাচ্ছেন তিনি। তবে উত্তরটা তিনি দিয়েছেন দক্ষ কূটনীতির মতো কূটনৈতিকভাবে! বলেছেন, ‘প্রত্যেকেই মনে করছে প্যারিস সেন্ট জার্মেই-ই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতবে। তবে শিরোপার দাবিদার আরও অনেক দল আছে।’ সেই দাবিদারদের নামগুলোও বলেছেন, ‘চেলসি আছে, ম্যানচেস্টার সিটি আছে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আছে, রিয়াল মাদ্রিদ আছে-যারা বরাবরই ভালো করে। এছাড়া বায়ার্ন মিউনিখ ও ইন্টার মিলানও আছে।’

এরপর যে বাক্যটা বলেছেন, সেটিই আসলে বলে দিচ্ছে বার্সেলোনাকে অবজ্ঞাই করেছেন! শেষ বাক্যে তিনি যে বলেছেন, ‘আমি ঠিক জানি না, কোনো নাম ভুলে গেলাম কিনা!’

যে ক্লাবটিকে নিজের ঘর বানিয়ে পুরো ক্যারিয়ার কাটিয়ে এলেন, সেই বার্সেলোনার নাম কি তিনি ভুলে যেতে পারেন! ও হ্যাঁ, বার্সেলোনার পাশাপাশি আরেক স্প্যানিশ দৈত্য অ্যাটলেতিকো মাদ্রিদের নামটিও নিজের ফেভারিট তালিকায় রাখেননি তিনি। রাখেননি ইতালিয়ান জায়ান্ট জুভেন্টাস, এসি মিলান এবং ২০১৮-১৯ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলের নামও।

পিএসজিকে ফেভারিট মানছেন বটে। তবে শিরোপা জিততে হলে পিএসজিকে কি করতে হবে সেটিই বাতলে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন তারকা, ‘আমাদের দলটিতে ব্যক্তিগতভাবে বেশ কয়েকজন গ্রেট খেলোয়াড় আছেন। তবে দলগতভাবে ভালো করতে হলে আমাদের একে অন্যকে আরও জানতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিরোপা জিততে হলে একটা দল হিসেবে খেলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

একটা দলকে কীভাবে দল হিসেবে একাট্টা করা যায়, মেসি খুব ভালো করেই জানেন। এখন দেখার বিষয়, বার্সেলোনায় রপ্ত করা সেই শিক্ষাটা কাজে লাগিয়ে পিএসজিকে শিরোপা জেতাতে পারেন কিনা। নিজের কথার মর্যাদা রাখতে হলেও দলকে একসুতোয় গেঁথে শিরোপা জেতাতে হবে তাকে।