কী বলেছিলেন হ্যাজার্ড, যে এমবাপ্পে এভাবে হেসে উঠেন

দলবদল বিষয় ও অন্যান্য ইস্যু মিলিয়ে নিশ্চিতভাবেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ফুটবলারের নাম কিলিয়ান এমবাপ্পে। পিএসজির ফরাসি ফরোয়ার্ড সংবাদ শিরোনামে থাকছেন প্রতিদিনই। এবার সেই এমবাপ্পের অন্য রকম দুটি হাসির ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল। একটা ছবি বেলজিয়ামের আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার/ফরোয়ার্ড এডেন হ্যাজার্ডে সঙ্গে। অন্যটি নিজেরই জাতীয় দলের সতীর্থ করিম বেনজেমার সঙ্গে। ছবি দুটো জন্ম দিয়েছে বড় একটা প্রশ্নের- দুটি ভিন্ন দৃশ্যে এমবাপ্পের এমন হাসির রহস্য কি?

হাসছেন এমবাপ্পে, পাশে হ্যাজার্ড

শুধু প্রশ্নের জন্ম নয়। কেউ কেউ নিজেদের মতো রহস্য উদঘাটনও করে ফেলেছেন! দুটো ছবিকে একসূত্রে গেঁথে, তাদের গবেষণালব্ধ রায়- এমবাপ্পে যে দ্রুতই রিয়াল মাদ্রিদের হতে যাচ্ছেন, এই হাসি তারই প্রমাণ! গুঞ্জনকারীদের এই রায়ে পৌঁছানো একবারে অমূলকও যে নয়, তা ছবি দুটোর বিশেষত্ব দেখলেই স্পষ্ট হবে!

হ্যাজার্ডের সঙ্গে ছবিটা গত ৭ অক্টোবর রাতের। সেদিন ইতালির তুরিনের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারনায় (জুভেন্টাস স্টেডিয়াম) উয়েফা নেশনস লিগের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল এমবাপ্পের ফ্রান্স ও হ্যাজার্ডের বেলজিয়াম। মানে হ্যাজার্ড ও এমবাপ্পে ছিলেন একে অন্যের সরাসরি প্রতিপক্ষ। তারপরও ম্যাচ চলাকালেই এক ফাঁকে কিছু একটা নিয়ে কথা হয় দুই দেশের দুই তারকার মধ্যে। কথপোকথনে এমবাপ্পেকে কি যেন একটা বলেন হ্যাজার্ড। বলেই তিনি সামনের দিকে হাঁটা শুরু করেন। তার ঠিক পেছনেই দাঁড়ানো এমবাপ্পে হেসে ওঠেন।

করিম বেনজেমার সঙ্গে হাসছেন এমবাপ্পে

টিভি ক্যামেরায় তাদের সেই দৃশ্য রেকর্ড হয়। পরে তা পোস্ট করলে মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। ভাইরাল হওয়া ছবিটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে- কি এমন বলেছিলেন হ্যাজার্ড, যে মাঠেই এভাবে হেসে উঠেন এমবাপ্পে? এমনিতে ফুটবল মাঠে প্রতিপক্ষ দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে এমন খুনসুঁটি প্রায়ই হয়। তবে সেসব খুনসুঁটির পেছনে বন্ধুত্বের একটা যোগসূত্র থাকে। কিন্তু হ্যাজার্ড ও এমবাপ্পের মধ্যে তেমন বন্ধুত্বের কোনো যোগসূত্রই যে নেই।

বরং দুজনে যেন দু-মেরুর। দুজনের দেশ আলাদা। খেলেনও আলাদা আলাদা ক্লাবে। ক্যারিয়ারে কখনোই এক দলে খেলেননি। মাঠে দেখা-সাক্ষাত যা হয়, তা প্রতিপক্ষ হিসেবেই। দুজনের মধ্যে বয়সেরও বিস্তর ফারাক। হ্যাজার্ডের বয়স ৩০। এমবাপ্পে সবে ২২-এ পা দিয়েছেন। কাজেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের ব্যাপার নেই। তবে একটা যোগসূত্র অবশ্যই আছে। সেই যোগসূত্রের নাম রিয়াল মাদ্রিদ। হ্যাজার্ড রিয়াল মাদ্রিদে খেলেন। এমবাপ্পেও পিএসজি ছেড়ে রিয়ালে যোগ দিতে মরিয়া। সম্প্রতি তিনি নিজেই বলেছেন, রিয়ালে যোগ দিতে চাওয়ার কথা গত জুলাই মাসেই ক্লাব পিএসজিকে বলে দিয়েছেন।

সব মিলে আগামী মৌসুমেই রিয়ালে যোগ দেবেন এমবাপ্পে, এই বিশ্বাস্যই এখন ছড়িয়ে পড়েছে ফুটবল দুনিয়ায়। এই বিশ্বাসকে পুঁজি করে এমন আলোচনাও চলছে, রিয়ালের সঙ্গে এমবাপ্পের চুক্তির ঝামেলা চুকে যেতে পারে আসন্ন জানুয়ারির শীতকালীন দলবদল উইন্ডোতেই। হ্যাজার্ড-এমবাপ্পের সেদিনের ওই খুনসুঁটির রহস্য উদঘাটনের চেষ্টাও চলছে এই সূত্রেই। তাদের ধারণা, এমবাপ্পেকে রিয়ালে যোগ দেওয়ার বিষয়েই কিছু একটা বলে থাকবেন হ্যাজার্ড। কে জানে, আগামীর ক্লাব সতীর্থ হিসেবে এমবাপ্পেকে আগাম অভিনন্দন-শুভেচ্ছাও জানিয়ে রাখতে পারেন বেলজিয়ান তারকা! যা শুনে এমবাপ্পে হাসি লুকিয়ে রাখতে পারেননি।

বিশেষ করে স্প্যানিয়ার্ডদের গবেষণা এমনই। ধারণার পাশাপাশি খোচাখুঁচিও চলছে। স্পেনের জনপ্রিয় ক্রীড়া দৈনিক মার্কার ফুটবল লেখক জোয়েল ডেল রিও যেমন খোঁচা মেরেছেন পিএসজির ক্রীড়া পরিচালক লিওনার্দোকে। বলেছেন, লিওনার্দো চাইলে এমবাপ্পের হাসির লিপ-রিডিং করে দেখতে পারেন!

হ্যাজার্ড-এমবাপ্পের এই ছবির সঙ্গে একইসূত্রে গেঁথে ফেলা এমবাপ্পে-বেনজেমার ছবিটা পোস্ট করে আবার ফ্রান্সের ফুটবল ফেডারেশন। জাতীয় দলের হয়ে নেশনস লিগে খেলতে বেনজেমা ও এমবাপ্পে এখন একই তাঁবুতে অবস্থান করছেন। তো অনুশীলনের পর বিশ্রাম সেশনে এমবাপ্পের সঙ্গে কিছু একটা নিয়ে মজা করেন রিয়াল মাদ্রিদের বেনজেমা। বাঁ-হাতের বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে বেনজেমা কিছু একটা নিয়ে জাতীয় দল সতীর্থ এমবাপ্পেকে অভিনন্দনও জানান বেনজেমা। এ সময় বেনজেমার মুখে ছিল প্রাণখোলা হাসি। ‘বড় ভাই’ বেনজেমার সেই অজ্ঞাত শুভেচ্ছায় খিলখিল করে হেসে উঠেন এমবাপ্পে। তার হাসি যেন থামছিলই না।

তো এখানেও প্রশ্ন- কি নিয়ে এমবাপ্পেকে এমন অন্তরখোলা অভিবাদন জানান বেনজেমা? গবেষণায যোগসূত্র একটাই- রিয়াল। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রিয়ালে খেলছেন বেনজেমা। হয়ে উঠেছেন রিয়ালের ঘরের একজন। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো চলে যাওয়ার পর থেকে বিশ্বসেরা রিয়ালের আক্রমণভাগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনিই। তাই হ্যাজার্ডের মতো বেনজেমাও হয়তো এমবাপ্পেকে আগামীর রিয়াল সতীর্থ হিসেবে আগাম অভিবাদন জানিয়ে রাখলেন!

ধারণা-গবেষণায় একই সূত্রে গেঁথে ফেলা হয়েছে বটে। তবে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন দুজনের সঙ্গে এমবাপ্পের হাসির সত্যিকার কারণ কি, সেটা একমাত্র তারাই জানেন।