কোন পথে নতুন তালেবান সরকার
- Details
- by ভিন্নমত
কেউ কেউ বলছেন, কাবুল দখলের পর পুরোনা চেহারায় ফিরছে তালেবান। আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় তাখার প্রদেশে এক শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, শিশুটির বাবা আফগান প্রতিরোধ বাহিনীর সন্দেহভাজন সদস্য হওয়ায় তাকে প্রাণ হারাতে হয়। আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতে চারজন অপহরণকারীকে মেরে ক্রেনে করে তাদের মরদেহ জনসমক্ষে ঝুলানো হয়েছে, এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। অথচ দুই দশক পর আবার আফগানিস্তান দখল করে তালেবান বলেছিল, তারা ২০ বছর আগের অবস্থানে নেই। সহনশীলতার কথা বলেছিল তারা। সবাইকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের আশ্বাস দিয়েছে। সরকারে নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার ইঙ্গিতও দিয়েছিল।
এর মধ্যে তালেবান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে, সেখানে বেশির ভাগ সদস্যই পশতু জাতিগোষ্ঠীর; মন্ত্রিসভায় নেই কোনো নারী সদস্য। এমনকি নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে।
আফগানিস্তানে প্রতি মুহূর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, এমন অভিযোগও রয়েছে। নারী মন্ত্রণালয় পাল্টে ‘ন্যায়-অন্যায় মন্ত্রণালয় দিয়েছে তালেবান। অভিযোগ রয়েছে, বিদেশে শিক্ষাবৃত্তি পেয়েও পড়তে যেতে পারছে না আফগান শিক্ষার্থীরা। এ পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সমন্বয়ক রমিজ আলাকবারভ বলেছেন, সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি ভীষণ উদ্বেগজনক।
একদিকে আফগানিস্তানে যেমন মানবাধিকার উধাও, তেমনি তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছে আফগানরা। দেশটিতে খাদ্যের দাম অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। প্রতি তিন জনে এক জন না খেয়ে থাকবে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। তারা বলছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বে। ফিচ সলিউশনের পূর্বাভাসে বলা হয়, আফগান অর্থনীতি ২০২১ সালে প্রায় ১০ শতাংশে সংকুচিত হতে পারে। দেশ পরিচালনার জন্য সম্পদ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে উঠবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আফগানিস্তানে মানবিক সংকটের শঙ্কা করেছেন। কারণ জ্বালানি, খাদ্য এবং ওষুধ শেষ হয়ে গেছে এবং অর্ধেক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। দেশটির অর্ধেক শিশুর পরবর্তী বেলার খাবার নিয়ে অনিশ্চয়তায় দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে আফগানিস্তানের প্রকৃত মোট দেশজ উৎপাদন ৯.৭ শতাংশ কমে যাবে। আগামী বছর কমবে ৫.২ শতাংশ।
দেশটির অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে হলে বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহায়তার সীমা ও সময়কাল এবং তালেবানের সঙ্গে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির ফলাফল সম্পর্কে অনিশ্চয়তার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আরও কমেছে। কাবুল পতনের পর থেকে দেশের ভেতরে-বাইরে টাকা স্থানান্তর প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আফগানরা সাধারণত ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও মানিগ্রামের মাধ্যমে টাকা পাঠায়। এই দুটি কোম্পানিই আফগানিস্তানের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। তাছাড়া শতাব্দীপ্রাচীন হাওয়ালা নেটওয়ার্কও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
চাইলেও এখন আর কেউ আফগানিস্তানে ব্যবসা করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তার ওপরে তালেবানকে আফগানিস্তানের বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এ কারণে তালেবানরা আমেরিকায় থাকা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ফান্ড ব্যবহার করতে পারছে না। এ কারণে আফগান অর্থনীতির জন্য সামনে কঠিন দিন অপেক্ষা করছে।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশের ঝুঁকি বিষয়ক ফিচ সলিউশনের প্রধান অন্বিতা বসু ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন, আফগান অর্থনীতি চলতি বছর প্রায় ১০ শতাংশ এবং আগামী বছর ৫ শতাংশেরও বেশি সঙ্কুচিত হতে পারে। বর্তমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং করোনা ভাইরাস মহামারি আফগানিস্তানের দুঃখ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আফগানিস্তানে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সাহায্যের কমে যাওয়ার কারণে আফগান অর্থনীতিতে ভয়ংকর প্রভাব ফেলতে পারে।
কাবুলে ক্ষমতার পালাবদল যে দেশ সবচেয়ে বেশি তৎপর সেটি হলো পাকিস্তান। তালেবানের সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও পাকিস্তানের। তালেবান পাকিস্তানের কতটা ঘনিষ্ঠ তা প্রমান করে একটি টুইট। তাতে দেখা যায়, পাঞ্জশিরে যুদ্ধরত প্রতিরোধ বাহিনীকে পরাজিত করতে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার সাহায্য চেয়েছিল তালেবানরা। দাবি উঠেছে, তালেবান বিরোধী অবস্থানগুলোকে লক্ষ্য করে পাকিস্তানি ড্রোন ব্যবহার হয়েছে। এ দাবির একটি সূত্র ছিলো আফগান সাংবাদিক তাজুদ্দিন সরৌশ, যিনি দাবি করেছেন যে তাকে পাঞ্জশিরের গভর্নর কামালুদ্দিন নিজামি বলেছেন, ‘পাকিস্তান ড্রোন ব্যবহার করে পাঞ্জশিরে বোমা হামলা চালিয়েছে।’
পাকিস্তান এই অঞ্চলের প্রথম দেশ যারা আফগানিস্তানে একটি সরকারি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিল। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইজ হামিদ আফগানিস্তান সফর করেন। ফয়েজ হামিদ আফগানিস্তানে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠক করেন তালেবানের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গেও। দুই দেশের ভবিষ্যত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য তালেবানের আমন্ত্রণে আফগানিস্তানে যান আইএসআইয়ের প্রধান। যদিও তা অস্বীকার করে আসছে পাকিস্তান সরকার।
তবে ঘটনা যাই হোক, পাকিস্তানের সহযোগিতায় খুশি তালেবান। পাকিস্তানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন তালেবানের মুখপাত্র ও আফগানিস্তানের অন্তবর্তীকালীন সরকারের ডেপুটি তথ্যমন্ত্রী জবিহুল্লাহ মুজাহিদ। পাকিস্তান টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি ইসলামাবাদ যে আহ্বান রেখেছে তা প্রশংসনীয়।
পাকিস্তানের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে সাধারণভাবে একটি বিশ্বাস কাজ করছে যে, এবার তারা কিছু সাফল্য অর্জন করেছেন। পাকিস্তানের ওপর নির্ভরতার কারণে নিরাপত্তার ইস্যুতে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী হবে তালেবান। তেমনি আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে একটি বাণিজ্য করিডোর তৈরি নিয়েও পাকিস্তান খুবই আগ্রহী। পাকিস্তানের লক্ষ্য খুব স্পষ্ট। তারা কাবুলে এমন একটি সরকার চায় যেখানে তালেবানের প্রাধান্য থাকবে। কারণ পাকিস্তান মনে করে তালেবান সবসময় পাকিস্তানের পক্ষে থাকবে।
লেখক: বিপ্লব কুমার পাল, গণমাধ্যমকর্মী।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.