বিসিবি নির্বাচন: কারা হতে পারেন পরিচালক

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আসলেই কিছু পরিবর্তন আপনার চোখে পড়বে। স্টেডিয়ামের দেয়াল ঘেষে বড় বড় ব্যানার টানানো হয়েছে। পরিচালক প্রার্থীদের ছবি সম্বলিত ব্যানারে ভোট চেয়ে অনুরোধ করা হয়েছে কাউন্সিলরদের প্রতি। নির্বাচনী একটা আবহ বিরাজ করছে স্টেডিয়ামজুড়ে।

মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নির্বাচনের ছাপ রয়েছে। ক্রিকেটাঙ্গনের লোকজন, কর্মকর্তা সবাই যার যার পছন্দের প্রার্থীর জন্য ভোট চাইছেন। প্রার্থীর ব্যানার-পোস্টার শোভা পাচ্ছে তাদের টাইমলাইনে। বহুল আলোচিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল বুধবার। বিসিবি কার্যালয়ে ভোট গ্রহণ চলবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

২২ গজের লড়াইয়ের মতো বিসিবি নির্বাচন নিয়ে হয়তো ক্রিকেট ভক্তদের আগ্রহ নেই। তবে ক্রিকেটাঙ্গনের কর্মকর্তা, সুহৃদদের তীক্ষ্ম নজর থাকে এই নির্বাচনে। কারা বোর্ডের পরিচালক হচ্ছেন, তা নিয়েই সবার আগ্রহ। নির্বাচনী মঞ্চ এখন প্রস্তুত। কাল ভোটের লড়াইয়ের অপেক্ষা।

বিসিবিতে মূলত পরিচালক পদ ২৫টি। যার মধ্যে ২৩টি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়। বাকি দুটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) মনোনীত করে। এ কোটায় এবার পরিচালক হয়ে আসছেন অভিজ্ঞ সংগঠক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ও জালাল ইউনুস।

বাকি ২৩ পদ তিন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। ক্যাটাগরি-১ মূলত জেলা-বিভাগ নিয়ে গঠিত, এখানে ১০টি পদ। যার মধ্যে সাতজন ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। তারা হলেন- আজম নাসির, আকরাম খান (চট্টগ্রাম), কাজী ইনাম আহমেদ, শেখ সোহেল (খুলনা), শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল (সিলেট), আলমগীর খান (বরিশাল) এবং অ্যাড. আনোয়ারুল ইসলাম (রংপুর)।

নির্বাচন হবে ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে। ঢাকা বিভাগে ২ পদের বিপরীতে প্রার্থী ৪ জন। তার মধ্যে মাদারীপুরের কাউন্সিলর খালিদ হোসেন ইয়াদ আলী নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের দিন শেষ হওয়ার পর তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাই প্রার্থী তালিকায় তার নাম থাকছেই। তবে তিনি নির্বাচন কমিশন ও ভোটারদের জানিয়েছেন, নিজের সিদ্ধান্ত।

মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়, নারায়ণগঞ্জের তানভীর আহমেদ টিটু ও কিশোরগঞ্জের আশফাকুল ইসলাম টিটুর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, দুর্জয় ও তানভীর আহমেদ টিটুই এগিয়ে আছেন লড়াইয়ে।

রাজশাহীতে পদ ১টি। নির্বাচনে লড়বেন সাইফুল আলম চৌধুরী স্বপন ও সাবেক ক্রিকেটার খালেদ মাসুদ পাইলট। এবারই প্রথম নির্বাচন করছেন পাইলট। অভিজ্ঞ সংগঠক স্বপনের পাল্লাই ভারী দেখছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।

ক্যাটাগরি-২ ঢাকার ক্লাব নিয়ে গঠিত। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্যাটাগরি। কারণ ক্লাব থেকে আসা পরিচালকরাই মূলত বিসিবি নেতৃত্বে থাকেন। এখানে ১২টি পদ। ভোট দিবেন প্রিমিয়ার লিগ, প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ ও তৃতীয় বিভাগের ক্লাবগুলোর ৫৬ জন কাউন্সিলর।

প্রার্থী ১৬ জন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে পিছিয়ে আছেন তিন প্রার্থী। সাইফুল ইসলাম, রফিকুল আলম ও আব্দুর রহমান ভোটের লড়াইয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না। নির্বাচনী মাঠ পর্যালোচনা শেষে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নাজমুল হাসান পাপন, মাহবুব উল আনাম, ইসমাইল হায়দার মল্লিক, এনায়েত হোসেন সিরাজ, গাজী গোলাম মুর্তজা পাপ্পা, ওবেদ রশীদ নিযাম, মঞ্জুর কাদের, নজীব আহমেদ, ফাহিম সিনহা, ইফতেখার রহমান মিঠুর জয়ের সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়া সালাউদ্দিন চৌধুরী, মঞ্জুর আলম ও মাসুদুজ্জামানের মধ্যে দুজন পরিচালক হতে পারবেন ভোটে জিতলে।

ক্যাটাগরি-৩ মূলত সাবেক ক্রিকেটার, শিক্ষা বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়, সার্ভিসেস সংস্থাগুলো নিয়ে গঠিত। এখানে পদ ১টি। নির্বাচনে লড়বেন খালেদ মাহমুদ সুজন ও সাকিব-মুশফিকদের গুরু প্রখ্যাত কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তবে সার্বিক পরিবেশ মিলে সুজনকেই সবাই এগিয়ে রাখছেন। তবে স্রোতের বিপরীতে লড়াই করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ফাহিম।

নির্বাচনে পুরোপুরি ভোট উৎসব দেখার সুযোগ অবশ্য মিলছে না। কারণ করোনার দোহাই দিয়ে ১২৩ ভোটারের মধ্যে ৫৬ জনই পোস্টাল ও ই-ভোট দেয়ার আবেদন করেছেন। যদিও এই ভোটাররাই মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় প্রার্থীদের সঙ্গে এসেছিলেন, উপহার-ল্যাপটপ নেয়ার জন্য বিসিবির এজিএমে স্ব-দলবলে হাজির হয়েছিলেন।

স্ব-শরীরে না এসে পোস্টাল, ই-ব্যালটে ভোট দিয়ে চাওয়া এসব ভোটাররাই নির্বাচনের ভাগ্য গড়ে দিবেন। বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, পোস্টাল, ই-ব্যালটে ভোট দিলেও তাদের অনেকেই এখন ঢাকার বড় বড় হোটেলে প্রার্থীদের আতিথ্যে সময় কাটাচ্ছেন।