দিনটির কথা কখনও ভুলবেন না আফ্রিদি

দিনটির কথা কখনো ভুলতে পারেননি পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক এবং অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি। কারণ তার স্বপ্নটা সেদিন সত্য হয়েছিল। অথবা বলা যায়, স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু পেয়েছিলেন তিনি। কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে খেলছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাকিস্তান দলের নবীনতম সদস্য হয়ে। মাত্র দুইদিন আগে অভিষেক হয়েছে কেনিয়ার বিপক্ষে।

বুমবুম আফ্রিদির উৎপত্তি ভয়ডরহীন ওই ম্যাচ থেকেই

দলের ক্যাপ্টেন তখন সাঈদ আনোয়ার। অন্যান্য বড় নামের মধ্যে ছিল আজকের পিসিবির চেয়ারম্যান রমিজ রাজা, সাকলায়েন মুশতাক, ওয়াকার ইউনুসের মতো খেলোয়ারেরা। আর বিপক্ষ দল তো যেন চাঁদের হাট। অর্জুনা রানাতুঙ্গার নেতৃত্বে জয়সুরিয়া, অরবিন্দ ডি সিলভা, হাসান তিলকারত্নে, রোশন মহানামা, কুমার ধর্মসেনা, রমেশ কালুভিথারানা, চামিন্দা ভাস, মুত্তিয়া মুরালিধরনের মতো বিশ্বসেরা ক্রিকেটাররা। এতজনের ভিড়েও সেদিন সবাই আলাদাভাবে চিনেছিল শহিদ আফ্রিদিকে। চিনতে বাধ্য হয়েছিল।

জয়সুরিয়ারা তখন নতুন ধরনের ক্রিকেট চালু করছিলেন। প্রথম দশ-পনের ওভারে মাঠের চারদিকে পিটিয়ে বড় একটি স্কোর সংগ্রহ করে বিপক্ষকে বিপদে ফেলে দেয়ার মতো ক্রিকেট। সেই থেকেই যেন শিখেছিলেন আফ্রিদি।

সেদিন খেলাটি উপভোগ করেছিলেন আফ্রিদি

ওয়ানডাউনে নামা শহিদ আফ্রিদি মাঠের চারদিকে দেদারসে পিটাতে শুরু করেন। বল উড়ে গিয়ে সীমানার ওপারে গিয়ে পড়েছিল ১১ বার। গড়িয়ে সীমানার নাগাল পেয়েছিল আরো ছয়বার। টর্নেডো গতির সে ইনিংসে মাত্র ৩৭ বলে তুলে নিয়েছিলেন সেঞ্চুরি। ৪০ বলে ১০২ রানে ডি সিলভার বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পুরো স্টেডিয়াম তখন থ মেরে ছিল। আর ক্রিকেট বিশ্ব সে রেকর্ড বয়ে চলেছিল দীর্ঘ ১৭ বছর।

সেদিন দলের অধিনায়ক সাঈদ আনোয়ারও সেঞ্চুরি করেছিলেন। এ দুই সেঞ্চুরির ওপর ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান দলের সংগ্রহ ছিল ৩৭১ রান। জয়সুরিয়া ১০ ওভার বল করে রান দিয়েছিলেন ৯৪ আর মুত্তিয়া মুরালিধরনের খরচ হয়েছিল ৭৩।

বলা বাহুল্য এ চাপ সইতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। এক বল বাকি থাকতে ২৮৯ রানে ইনিংস শেষ করেছিল হার্ডহিটার নামে রানাতুঙ্গার দল। অরবিন্দ ডি সিলভার ১২২ রানের সেঞ্চুরিও সেদিন ম্লান হয়ে গিয়েছিল আফ্রিদির খুনে ইনিংসের সামনে। ও হ্যাঁ, আফ্রিদি বল হাতেও ছিলেন সফল। ১০ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে পেয়েছিলেন অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গার উইকেটটি। শহিদ আফ্রিদির ইনিংসে যেন উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিলেন ওয়াকার ইউনুসও। শক্তিশালী শ্রীলঙ্কান দলের পাঁচটি উইকেট তিনি পকেটে ভরেন সেদিন। আর সাকলাইন মুশতাক নিয়েছিলেন বাকি চারটি উইকেট। শ্রীলঙ্কা হেরেছিল ৮২ রানে।

ওই ইনিংসের পর থেকেই আফ্রিদি আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়েই পেতেন স্বস্তি। সে কারণে তার নামও হয়ে যায় বুম বুম আফ্রিদি। সোমবার ছিল সেই সেঞ্চুরির রজত জয়ন্তী। দিনটির স্মরণে এক টুইটে আফ্রিদি বলেন, দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরির বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে দেয়ার দিনটি তিনি কখনোই ভুলবেন না। টুইটে তিনি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা তার ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, মনে রাখবেন, স্বপ্নগুলো সত্যও হয়।

শহিদ আফ্রিদির করা সেই রেকর্ড অক্ষত ছিল দীর্ঘ ১৭ বছর। ১৯৯৬ সালে করা তার সেই রেকর্ডটি ভাঙেন নিউজিল্যান্ডের কোরি অ্যান্ডারসন। ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৩৬ বলে তুলে নিয়েছিলেন সেঞ্চুরি। অবশ্য তার রেকর্ডটি টিকেছিল মাত্র এক বছর। পরের বছরই দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স মাত্র ৩১ বলে সে রেকর্ড নতুনভাবে লিখেন। বিপক্ষ সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজই। সেই থেকে এখন পর্যন্ত রেকর্ডবুকের শীর্ষে আছেন তিনিই। কিন্তু তাই বলে আফ্রিদির সেই ইনিংসের মাহাত্ম্য কমেনি এতটুকুও।

সূত্র: জিও টিভি, ক্রিকইনফো