মিয়ানমার-নেপাল-তিব্বতে চীনের অবকাঠামো ভারতকে 'ঘিরে ফেলার হুমকি'
- Details
- by ভিন্নমত
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো যখন আফগান সংকট নিয়ে ব্যস্ত, চীন তখন চুপচাপ গৃহযুদ্ধ কবলিত মিয়ানমারের মাধ্য দিয়ে ভারত মহাসাগরে প্রবেশের জন্য একটি কৌশলগত রেল যোগাযোগ চালু করে ফেলেছে। এটি পশ্চিম চীন এবং ভারত মহাসাগরের মধ্যে প্রথম রেল যোগাযোগ। এটি চীনের স্থলবেষ্টিত ইউনান প্রদেশে কার্গো আমদানিতে উল্লেখযোগ্য সময় ও ব্যয় হ্রাস করবে। নতুন চালু হওয়া রেললাইনটি মিয়ানমারের সামরিক শাসন ব্যবস্থার জন্য বেইজিংয়ের উপহার স্বরূপ। কারণ এটি তাদের বাড়তি একটি আয়ের উৎস তৈরি করে দেবে। এ ছাড়া, গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে চীন যে দূরুত্ব তৈরি করেছিলো এর মাধ্যমে তা ঘুচিয়ে দেওয়া হলো!
এই ট্রেন রুট চালুর ঠিক দুই মাস আগে তিব্বতের রাজধানী লাসা এবং চীনের নিয়াংচির মধ্যে ইলেক্ট্রিক ট্রেনের উদ্বোধন করেছে বেইজিং। কৌশলগতভাবে এই দুইটি শহর ভারতের অরুণাচল প্রদেশের ঠিক বিপরীত পাশে। এই ট্রেন যোগাযোগের ফলে ভারতের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর আগে, গতবছর খবর পাওয়া যায় নেপাল-ভারত সীমান্তের লুম্বিনি থেকে চীনের দখলকৃত তিব্বতের লাসা পর্যন্ত রেল লাইনের গ্রাউন্ডের কাজ করছে চীন। লুম্বিনি হলো সেই পবিত্রস্থান যেখানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
আপাত দৃষ্টিতে এই কর্মকাণ্ডগুলোকে কিছু বিচ্ছিন্ন উন্নয়ন মনে হলেও এই বিশাল অবকাঠামগত প্রকল্পগুলো দিয়েই কৌশলগতভাবে নয়াদিল্লিকে ঘিরে ফেলতে চাচ্ছে বেইজিং। এর বাইরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) তো রয়েছেই, যা বৈশ্বিক সংযোগ স্থাপন করলেও সঙ্গত কারণে নয়াদিল্লি তাতে আশ্বস্ত হতে পারছে না।
পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী দেশ চীন ও ভারতের মধ্যে রয়েছে ৩,৪৮৮ কিলোমিটার অভিন্ন সীমান্ত রেখা। যা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল নামে পরিচিত। ২০২০ সালে দেশ দুটির সৈন্যদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এই সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। ওই সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ২৪ সৈন্য প্রাণ হারায়।
যাইহোক, অরুণাচল প্রদেশের বিপরীতে সীমান্তবর্তী শহরে চীনের নতুন হাই-স্পিড ট্রেন সংযোগকে সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখছেন ভারতীয় বিশ্লেষকরা। দ্য ইউরেশিয়ান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) তিব্বতের একটি প্রত্যন্ত স্থানে সৈন্য পরিবহনে তাদের নতুন উদ্বোধন করা বুলেট ট্রেন ইতিমধ্যেই ব্যবহার করেছে।
চীনা বিশ্লেষক কালবিত এ. মানকিকার বলেন, তিব্বতে রেল অবকাঠামোর বিকাশ শি জিনপিংয় সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই পথ ব্যবহার করে পিপলস লিবারেশন আর্মিকে (পিএলএ) দ্রুততার সঙ্গে সংঘাতময় অঞ্চলে পাঠানো যাবে। ...আর হ্যাঁ, এটি ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কেননা, এই পথ মানেই যখনই দরকার চীন তার সৈন্যদের দ্রুত সংঘাতময় অঞ্চলে মোতায়েন করতে পারবে। শুধু তাই নয়, বিআরআই -এর অংশ হিসেবে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুকে তিব্বতের শিগাতসের সঙ্গে সংযুক্ত করতে একটি রেলপথ তৈরিরও পরিকল্পনা করছে বেইজিং। পরিকল্পনার অনুযায়ী, প্রস্তাবিত রেল লাইনটি ভারত-নেপাল সীমান্তের কাছাকাছি লুম্বিনি পর্যন্ত আরও বাড়ানো হতে পারে। ফলে তা নেপালের জন্য বাণিজ্য ও পর্যটন সম্ভাবনাকে আরও বাড়াবে। কিন্তু এখানে চীনের স্বার্থ হলো- এতে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে কাঠমান্ডুর।
দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য
ভারতকে ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করছে চীন। বিশেষ করে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো যাদের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে তাদের নিজ দলে ভেড়াতে ব্যতিব্যস্ত বেইজিং। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ নেপাল ও বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বার্ষিক ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। যা ভারতের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। আর নেপালের অবকাঠামো ও জলবিদ্যুৎ খাতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১৮৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, টানা ছয় এই অবস্থান ধরে রেখেছে বেইজিং। আর চীনের বিআরআই প্রকল্পের অন্যতম অংশীদার কাঠমান্ডু। হলে তাদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রেখে চলেছে বেইজিং।
বিআরআই প্রকল্প যোগাযোগ ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে চীনকে অভাবনীয় সাফল্য এনে দেবে। এর বাইরেও এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিশাল এক সুবিধা গ্রহণ করতে যাচ্ছে বেইজিং। নয়া দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইনিজ অ্যান্ড ইস্ট এশিয়ান স্টাডিসের অধ্যাপক কোন্দাপাল্লি এ বিষয়ে বলেন, চীন গত বছর ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে লোহার আকরিক আমদানি করে ৮০০ মিলিয়ন টন ইস্পাত উৎপাদন করে। যা বিশ্বব্যাপী ইস্পাত উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক। এছাড়া গত বছর ২৪ হাজার মিলিয়ন টন সিমেন্ট উৎপাদন করেছিল, যা বিশ্বব্যাপী মোট সিমেন্ট উৎপাদনের প্রায় ৫৪ শতাংশ।
কোন্দাপাল্লি বলেন, 'চীন প্রতিবছর প্রায় ৬০ লাখ গ্রাজুয়েট তৈরি করে। তবে গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৮০ লাখ। ফলে দেশটির প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান তৈরিতে বিআরআই প্রকল্প তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।' ফলে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে উঠে পড়ে লেগেছে শি জিনপিং সরকার।
অধ্যাপক কোন্দাপল্লি আরও বলেন, 'চীন ইউনান প্রদেশের কুনমিং থেকে ইয়াঙ্গুন পর্যন্ত ১ হাজার ৯২০ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপনেরও পরিকল্পনা করেছে। মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে এটি শীঘ্রই চালু হতে পারে।'
এসব প্রকল্প কার্যত ভারতকে ঘিরে ফেলবে। সঙ্গত কারণেই এসব প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে নয়াদিল্লি।
লেখক: জয়ন্ত কলিতা। একজন লেখক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। তিনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর আশেপাশের প্রতিবেশী দেশগুলো নিয়ে লিখে থাকেন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.