বিশ্লেষণ: তালেবান যেভাবে পাকিস্তানকে ব্যবহার করেছে
- Details
- by ভিন্নমত
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর যখন তালেবানের সঙ্গে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, মূলত তখনই আফগান যুদ্ধে জয়ী হয়ে যায় পাকিস্তান। আর তালেবানের কাবুল দখল হলো সেই জয়ের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
তালেবান প্রতিনিধি দলকে ইসলামাবাদে স্বাগত জানাচ্ছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি, ফাইল ছবি
বিশ্লেষকরা বলছেন, শুরু থেকে তালেবানের ক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান তালেবান বা টিটিপি-কে দমন আর আফগান তালেবানকে সহায়তা করেছে তারা। অথচ মতাদর্শের দিক থেকে উভয় সংগঠনই এক ও অভিন্ন। অথচ পাকিস্তানের কাছে একটি ছিলো 'ভালো তালেবান' অপরটি 'খারাপ তালেবান'!
কিন্তু তারপরেও পাকিস্তান কেন আফগান তালেবান বা তালেবানকে সহায়তা করেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবেশী চীন শত্রুভাবাপন্ন ভারতে কট্টরপন্থী হিন্দু মৌলবাদীদের উত্থান ঘটতে পারে, এমন শঙ্কা থেকেই তালেবানকে সহায়তার মাত্রা বাড়িয়েছে ইসলামাবাদ। তাদের ধারণা ছিলো আফগানিস্তানের মসনদে তালেবানকে বাসানো গেলে দেশটিতে ভারতের প্রভাব খর্ব হবে। একই সাথে হিন্দু মৌলবাদীদেরও উত্থান ঘটবে না।
এখানে লক্ষ্য করার মতো বিষয় হলো- তালেবানরা পাকিস্তানকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে, এই অঞ্চলে ইসলামি খেলাফত কায়েম হলে ইসলামাবাদ তার সুফল পাবে। পাশাপাশি তালেবান যদি আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে সরকার গঠন করে তাহলে দুটি মুসলিম দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকলে আঞ্চলিকভাবে ভারত কিছুটা কোণঠাসা হবে। আর এমন দিবাস্বপ্নে বিভোর হয়ে পলায়নরত তালেবানকে নিরাপদ আশ্রয় ও সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে পাকিস্তান।
কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর প্রতিশ্রুতি ভাঙতে থাকে তালেবান। পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন টিটিপির প্রায় ২ হাজার ৩০০ যোদ্ধাকে কারামুক্তি দেয় তারা। যে যোদ্ধারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তালেবানের হয়ে আফগান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছিলো। অথচ পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের চুক্তি ছিলো- তারা দেশটির অভ্যন্তরীণ কোন জঙ্গি বা সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে কোনপ্রকার সম্পর্ক রাখবে না। কিন্তু তালেবান তাদের সেই কথা রাখেনি। ফলে এখানে তালেবানের কাছে মারাত্মক ধাক্কা খেয়েছে ইসলামাবাদ। অথচ আফগানিস্তানে তালেবানের মসনদ নিশ্চিত করতে পাকিস্তান তার ৮০ হাজারেরও বেশি নাগরিকের জীবন খুইয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, আফগান ও যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর হাত থেকে তালেবানকে বাঁচাতে নিজ সীমান্তের অভ্যন্তরে তালেবানকে ঘাঁটি গড়তে দিয়েছিলো পাকিস্তান। কিন্তু শর্ত ভেঙ্গে আশপাশের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকেও নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে তালেবান। ফলে সীমান্ত নিয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছে ইসলামাবাদ।
তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পর ইমরান খান পরোক্ষভাবে বলেছিলেন, 'তারা (তালেবান) পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙেছে'। কিন্তু এর কয়েকদিন পরেই ইমরান খানের হৃদয়ও ভেঙ্গেছে তালেবান। কারণ, পাকিস্তান নিজের জন্য হুমকি মনে করে দেশটির সন্ত্রাসী সংগঠন টিটিপি-কে। কিন্তু সেই টিটিপি'র সাবেক উপপ্রধান ফকির মোহাম্মদকে গত সপ্তাহে আফগানিস্তানের একটি কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে এই গোষ্ঠীটিকে নিয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তায় ইমরান খানের সরকার। এখানেই শেষ নয়, তালেবানের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার সঙ্গে ফকির মোহাম্মদের বৈঠকেরও খবর পাওয়া গেছে। যা পাকিস্তানের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমা সমর্থিত আফগান সরকারকে উচ্ছেদে দুই দেশের তালেবান একসঙ্গে কাজ করেছে। অনুরূপ চীননির্ভর পাকিস্তান সরকারকে উচ্ছেদেও আবারো তারা কাজ করতে পারে। ফলে আফগান যুদ্ধে পশ্চিমাদের সঙ্গে আলোচনার নামে নাটকের অবতারণা করে ইসলামাবাদ আপাতত যে বিজয় পেয়েছে, সে বিজয় তাদের জন্য পরাজয়ের বারতা নিয়ে আসতে পারে।
সূত্র: দ্যা ডিপলোম্যাট
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.