মার্কিন গণমাধ্যম: মানবতা বিরোধী কাজ অব্যাহত রেখেছেন শি
- Details
- by বিপ্লব কুমার পাল
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-কে ‘অত্যাচারী একনায়ক’ বলে আখ্যায়িত করে তার দমন নীতির কড়া সমালোচনা করেছে মার্কিন গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক পোস্ট। সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক পোস্ট তাদের সম্পাদকীয়তে লিখেছে, 'যত রক্ত ততো লাভ! এই নীতিতেই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির স্বার্থে ব্যাপক দমনপীড়ন শুরু করেছেন শি।'
গণমাধ্যমটিতে শি-র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে সাবেক স্বৈরাচারী চীনা প্রেসিডেন্ট মাও দেজং, সাবেক অত্যাচারী সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান জোশেফ স্ট্যালিন এবং জার্মানির কূখ্যাত একনায়ক অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে। নিউ ইয়র্ক পোস্টের মতে, চীনা রাষ্ট্রপতি শি নিজের দেশকে সর্বগ্রাসী করে তুলেছেন। শুধু তাই নয়, স্বৈরতান্ত্রিক ও অত্যাচারী শাসকদের মতোই মানব সভ্যতাকে রক্তের স্রোতে ভাসাতে চাইছেন চীনা প্রেসিডেন্ট।
চীনের দুইটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং ও ম্যাকাও-তে নতুন করে বিশেষ আইন চালুরও সমালোচনা করা হয়েছে নিউ ইয়র্ক পোস্টে। এই নতুন আইন বলে আরও বেশি দমন-পীড়ন চালানোর অধিকার দেওয়া হয়েছে হংকং ও ম্যাকাও অঞ্চলের প্রশাসকদের। বিদেশি নিষেধাজ্ঞার পরোয়া না করেই নাগরিকদের ওপর কঠোর দমননীতি চালানোই এই নতুন আইনের উদ্দেশ্য। স্থানীয় প্রশাসনকে কাউকে সন্দেহ হলেই তার সম্পত্তি জব্দ, বিদেশ যাত্রার ভিসা বাতিল অথবা নির্বাসনে পাঠানোর অধিকার দেওয়া হয়েছে।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অত্যাচারী শাসনে গণহত্যা বন্ধ হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। মানবাধিকার লঙ্ঘনে মানব সভ্যতাকে লজ্জায় ফেলে দিতে পারে চীন। তাই আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বহর বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তারপরও চীনের দস্যুবৃত্তি কমেনি। মার্কিন গণমাধ্যমটির সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, চীনের দৈত্যসুলভ আচরণ প্রতিরোধে পশ্চিমা দুনিয়া যাতে নাক গলাতে না পারে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন শি। অথচ মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের কোনও চেষ্টাই নেই। বরং আরও বাড়ছে অত্যাচার।
আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন ইতোমধ্যেই মার্কিন নাগরিকদের হংকং-এর বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। বাইডেন প্রশাসনের মতে, চীনের 'জাতীয় নিরাপত্তা' আইন মার্কিন নাগরিকদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। একদা মুক্ত দ্বীপ এখন চীনের শাসনে বিদেশিদের জন্য মোটেই নিরাপদ ব্যবসা কেন্দ্র নয়, এটা পশ্চিমা দুনিয়া ভালোই বুঝতে পেরেছে।
প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বহুলচর্চিত চীনা দাদাগিরির ফানুসও দ্রুত তলানিতে ঠেকতে চলেছে। ভোক্তা সুরক্ষা বা উৎপাদিত দ্রব্যের গুণমানের কারণে দ্রুত কমছে চীনা সামগ্রীর বাজার। তাই চীনা শিল্প ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রক ৬ মাসের জন্য 'সংশোধন' কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় বাজারজাত করার সমস্যা থেকে অননুমোদিত ইন্টারনেট সংযোগ, সবই রাখা হয়েছে। তবে এর পেছনেও কাজ করছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সর্বগ্রাসী মানসিকতা। আসলে, শি -এর মনে হয়েছে কিছু সংস্থা অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। তাই তাদের ওপর চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাব প্রতিষ্ঠা করার জন্যই এই সংশোধন কর্মসূচি। চীনা শিল্পপতি জ্যাক মা একসময় শি-এর নয়নের মণি হয়ে উঠলেও এখন তাকেও বাগে আনতে সচেষ্ট চীনা-প্রশাসন।
নিউ ইয়র্ক পোস্টেই লেখা হয়েছে, বিদেশে নির্বাসিত চীনাদের আত্মীয়স্বজনরাও এখন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির দমন-পীড়নের শিকার। বিদেশের মাটিতে বসে কেউ চীন সরকারের সমালোচনা করলেই তাদের আত্মীয়দের ওপর কঠোর অত্যাচার করাটাই এখন নিয়ম হয়ে উঠেছে। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদন উল্লেখ করে মার্কিন গণমাধ্যমটির সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়, প্রবাসী উইঘুর নেতা আবদুভেলি আইয়ুপের ভাতিজির রাষ্ট্রীয় হেফাজতে রহ্স্যজনক মৃত্যুর কথা। আইয়ুপ নিজেই জানান, তার দুই ভাই-বোন এখনও জেলে রয়েছে। কারণ সংশোধন শিবির-এর নামে চীনের উইঘুর সম্প্রদায়ের মুসলিমদের ওপর বর্বরোচিত অত্যাচারের কাহিনী তিনি ফাঁস করে দিয়েছিলেন। সংশোধন শিবিরের নামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মুখোশ খুলে গিয়েছিল শি-প্রশাসনের।
শুধু আইয়ুপই নন, শি-প্রশাসনের অত্যাচারের শিকার বিদেশে বসবাসকারী অনেকেরই আত্মীয়রা। রেডিও ফ্রি এশিয়ার প্রতিবেদন উল্লেখ করে সম্পাদকীয়টিতে বলা হয়েছে, তাদের সাংবাদিকদের ৫০ জনেরও বেশি আত্মীয় বন্দি রয়েছে চীনে। উইঘুর-মার্কিন সমাজকর্মী রুশান আব্বাসের বোনকে জঙ্গিবাদী কার্যকলাপের মিথ্যা অভিযোগে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে চীনা প্রশাসন। চীনা জুলুমের ভয়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েও তাই লাভ নেই। কারণ তাদের আত্মীয়দের ওপর নেমে আসছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস।
চীনা দমননীতি শুধু উইঘুর মুসলমানদের ওপরই সবচেয়ে বেশি। তবে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও নিরাপদে নেই। নিউ ইয়র্ক পোস্টের সম্পাদকীয়তে খ্রিস্টান-সহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর উপরও চীনা দমননীতি চালানোর উল্লেখ রয়েছে। বহু বছর ধরেই চীন খ্রিস্টানদের ওপর নানাভাবে হামলা চালাচ্ছে। শিশুদের গির্জায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বহুবার প্রার্থনায় বাধাও দিয়েছে চীনা প্রশাসন। বহু গির্জা ভেঙেও দেওয়া হয় শি-র আমেল। বিনা কারণে খ্রিস্টান যাজকদের বন্দি করা হয়েছ। এমনকি, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেল কমিউনিস্ট ভাবধারায় সম্পাদিত করতেও পিছপা হয়নি চীনা কমিউনিস্ট পার্টি। ক্যাথলিক বিশপ নির্বাচন নিয়ে খ্রিস্টানদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় পোপ ফ্রান্সিককে চোখ রাঙাতেও দেখা গেছে চীনের প্রেসিডেন্ট শি-কে।
একইরকম ভাবে তিব্বতে বৌদ্ধদের উপরও চলছে চীনের অমানবিক অভিযান। তিব্বতেও সংশোধন শিবিরের নামে আরও বন্দিশালা গড়ে তুলছে বৌদ্ধদের আটক করার জন্য। বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে চীনা বৌদ্ধ ফালুন গং-দের বিরুদ্ধে নির্মমভাবে বর্বরোচিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে শি-প্রশাসন।
তাই চীনের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মাও-স্ট্যালিন-হিটলারদের সঙ্গে শি জিনপিং-কেও অত্যাচারী শাসক হিসাবে এক আসনে বসিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যমটি। প্রেসিডেন্ট শি-কেও ‘অত্যাচারী একনায়ক’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন তারা।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.