বাংলাদেশের স্বপ্নের সিরিজ জয়

শেষ পর্যন্ত হলো বাজিমাত। অস্ট্রেলিয়াকে ডেকে এনে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। বিস্ময়কর হচ্ছে, বাংলাদেশ সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই। যা সিরিজ শুরুর আগে ভাবাটা ছিল অকল্পনীয়। অবিশ্বাস্য হলেও তিনটি লড়াইয়েই টাইগাররা জিতল লো স্কোরিং ম্যাচে। সবশেষ জয়টা ১০ রানের।

বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের উৎসব শুরু হলো তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতেই। আজ মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে নয় উইকেটে ১২৭ রান তুলেছে টাইগাররা। পরে দুর্দান্ত বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়াকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল বেঁধে ফেলে ১১৭ রানে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, অজিদের হাতে অক্ষত ছিল ছয়টি উইকেট।

আগের দুই ম্যাচ জিতে অবশ্য উল্লেখযোগ্য কোনো উদযাপন করেনি বাংলাদেশ দল। আজ জিতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন ক্রিকেটাররা। মাঠে ছোটাছুটি করেন মাহমুদউল্লাহ কোং। দল তা করতেই পারে। টি-টোয়েন্টি সংস্করণ তো বটেই, সব ধরনের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়।

লক্ষ্য এবার হোয়াইটওয়াশ। আগামীকাল সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে অজিদের ফের আতিথেয়তা দেবে বাংলাদেশ। দলের এই সাফল্যের অংশিদার বেশ কয়েকজনই। তবে মুস্তাফিজুর রহমান অনন্য। তিনটি ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ানদের অগ্নিপরীক্ষা নিয়েছেন তিনি। আগের ম্যাচে তিন উইকেট তুলে নিয়ে দলের জয়ে রেখেছেন মূখ্য অবদান। এদিন অবশ্য কোনো উইকেট পাননি কাটার মাস্টার।

তবু ম্যাচ জয়ের অন্যতম নায়ক হয়ে গেলেন তিনি। চার ওভারে উইকেটশূন্য থাকলেও ফিজ দিয়েছেন মোটে নয় রান। বাঁ-হাতি পেসারের মিতব্যয়ি এই বোলিংই গড়ে দিয়েছে ম্যাচের ভাগ্য। দারুণ বোলিং করেছেন নাসুম আহমেদও। চার ওভারে মেডেনসহ ১৯ রান খরচায় তুলে নিয়েছেন এক উইকেট। চার রান বেশি দিয়ে শিকার করেছেন সাবিক আল হাসানও।

শরিফুল ইসলাম সর্বোচ্চ দুই উইকেট নিয়েছেন বটে, তবে রান দিয়েছেন ২৯। বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে আজও রান তুলতে যথেষ্ঠ সংগ্রাম করতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। ব্যাটসম্যানদের এনে দেওয়া অল্প পুঁজি কি দারুণভাবেই না আগলে রাখলেন বাংলাদেশের বোলাররা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এরচেয়ে কম রান আগলে রেখে জিততে পারেনি টাইগাররা। বাংলাদেশ ভেঙেছে কদিন আগে গড়া নিজেদের রেকর্ড।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১২৭ আহামারি কোনো রান নয়। কিন্তু উইকেট এবং পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে যা হয়ে ওঠে পাহাড়সম। এই রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় অজিরা। পাঁচ বলে এক রান করে সাজঘরে ফেরেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড। মিচেল মার্শ ও বেন ম্যাকডেরমট ধাক্কা সামলে ওঠেন জুটি গড়ে।

৬৩ রানে ভাঙে এই জুটি। কিন্তু উইকেট আগলে রাখতে গিয়ে আস্কিং রেটের চাপে পরে অস্ট্রেলিয়া। চাপ আর সামলে নিতে পারেনি অজিরা। ৫৭ বলে ছয় চার ও এক ছক্কায় ৫১ রানে ফিরেছেন মার্শ। অস্ট্রেলিয়া তখন ৯৪ রানে চার উইকেট হারাল। ৪১ বলে ৩৫ রানে ম্যাকডেরমটকে ফেরান সাকিব। দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয় বাংলাদেশ।

অ্যালেক্স ক্যারি ও ড্যানিয়েল ক্রিশ্চিয়ানকে আউট করতে পারেনি টাইগাররা। ঝড় তোলার চেষ্টা করলেন দুজনই। কিন্তু হার ঠেকাতে তা যথেষ্ঠ ছিল না। ১৫ বলে একটি করে চার-ছক্কায় ২০ রানে অপরাজিত থাকেন ক্যারি। ক্রিশ্চিয়ানের ব্যাট থেকে এসেছে ১০ বলে সাত রান। তিনি বাউন্ডারি মেরেছে একটি। ময়েজেস হেনরিক্স তিন বলে দুই রান করেন।

এর আগে ম্যাচটা যে মাঠে গড়াবে তা নিয়েই জেগেছিল সংশয়। বৃষ্টির কারণে টস হয় দেরিতে। পরে মুদ্রা নিক্ষেপের লড়াইয়ে জিতে সতীর্থদের হাতে ব্যাট তুলে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। মন্থর উইকেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই জোড়া ধাক্কা খায় টাইগাররা। দলীয় তিন রানের মধ্যে আউট দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও সৌম্য সরকার।

এরপর সাকিবকে নিয়ে মাহমুদউল্লাহর প্রতিরোধ। সাকিব অবশ্য ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ৪৭ রানে দলের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। ১৭ বলে চারটি চারে ২৬ রানে ফেরেন সাকিব। একদিকে রান তোলার তাড়না অন্যদিকে উইকেট ধরে রাখার চাপ, এই দুইয়ে মিলে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং হলো সাবধানি। ৫৩ বলে চারটি চারে ৫২ রানে ইনিংসের শেষ ওভারে ফিরেছেন টাইগার দলপতি।

যা টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে ধীরগতির হাফসেঞ্চুরি। এই হাফসঞ্চুরিই শেষ অবধি মাহমুদউল্লাহর হাতে তুলে দিয়েছে ম্যাচ সেরার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। অধিনায়কের আগে ১৩ বলে একটি করে চার-ছক্কায় ১৯ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলেছেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। পাঁচ বলে ১১ রান এসেছে নুরুল হোসেনের ব্যাট থেকে। বাকিদের কেউ অবশ্য যেতে পারেননি দুই অংকে।

বাংলাদেশের পতন হওয়া উইকেটের তিনটি নিয়েছেন নাথান এলিস। শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক করেছেন তিনি। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিক উপহার পেলেন এলিস। কিন্তু দলের ব্যর্থতায় মাটি হয়ে গেলেন তার অভিষেক কীর্তি। দুটি করে শিকার জস হ্যাজলউড ও অ্যাডাম জাম্পার।