আবতাহা: ক্রিকেটের মতো হিজাবও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ

আবতাহা মাকসুদ ব্রিটেনের প্রথম হিজাবি ক্রিকেটার। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন। আন্তরিকভাবে চাচ্ছেন, যেসব মুসলিম মেয়েরা সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বাধার কারণে ক্রিকেটে আসতে পারছে না, তাদের হিজাব পরে ক্রিকেট খেলায় আসা উচিত এবং ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে নেওয়া উচিত।

প্রথম হিজাবি ক্রিকেটার আবতাহা মাকসুদ

পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত আবতাহা ১৯৯৯ সালের ১১ জুন স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জন্ম নেন। তার পিতামাতা পাকিস্তানের লাহোর থেকে আসা। আবতাহা যেদিন জন্ম নিয়েছিলেন সেদিন পাকিস্তান ক্রিকেট দল জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছিল ব্রিটেনের মাটিতে।

আবতাহার বয়স ২২ বছর। ইংল্যান্ডের ২০০ বল ফরম্যাটের টুর্নামেন্ট ‘দ্য হান্ড্রেড’-এ বার্মিংহাম ফনিক্সের হয়ে খেলছেন। ছোট থেকেই তিনি বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন।

আবতাহার বয়স যখন ১১ বছর, তিনি স্থানীয় লোকাল ক্রিকেট ক্লাবে খেলা শুরু করেন। মাত্র ছয় মাস সেখানে খেলার পর স্কটল্যান্ডের আন্ডার সেভেনটিন টিমে খেলার সুযোগ পান। ১২ বছর বয়সে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-২০ ম্যাচে অংশ নেন।

বার্মিংহামের এজবাস্টন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আবতাহার সঙ্গে কথা হয় জিও টিভির। তিনি বলেন, বাবা ও ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ক্রিকেটে এসেছেন। ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের সম্পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন।

পুরো ক্রিকেট জীবনে তিনি বাবাকে সবচেয়ে বড় ভক্ত হিসেবে পেয়েছেন। বাবা-মা দুজনেই ক্রিকেট ভক্ত।

ক্রিকেটের পাশাপাশি আবতাহা মাত্র ১১ বছর বয়সে তায়েকোন্দোতে ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন করেন। তিনি ব্রিটিশ ও স্কটিশ তায়েকোন্দো চ্যাম্পিয়নশিপেও অংশ নেন। তরুণ এই নারী ক্রিকেটার বলছেন, ক্যারিয়ার হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নেয়ার কথা তিনি কল্পনাও করেননি। কিন্তু ক্রিকেট খেলায় অংশ নেওয়ার পর এতে আকৃষ্ট হন।

হিজাব পছন্দ হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যখন ১১ বছর বয়সে ক্রিকেট শুরু করেন তখন মাকে হিজাব পরতে দেখেছেন। তাই সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় হিজাবকে বেছে নিয়েছেন। পিতামাতা তাকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দিয়েছেন, কিন্তু তিনি হিজাবকেই বেছে নিয়েছেন।

আবতাহা বলেন, আমার বয়স যখন ১১, তখন পিতামাতার সঙ্গে হজে যাই। তখন থেকেই আমি হিজাব পরার শিক্ষা পাই। ওই সময় আমার কাছে হিজাব পরা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এখনও তেমনই আছে এবং আমি হিজাব ছেড়ে দেইনি।

আবতাহা এখন গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি দন্ত চিকিৎসায় পড়ালেখা করছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি স্কটল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। ক্রিকেটের মতোই পড়াশোনাকে ভালোবাসেন। তিনি জানান, দুদিকেই সময় দেওয়া আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে, তবে এটা আমি করতে পারছি।

তাকে প্রশ্ন করা হয়, ক্রিকেট খেলার চেয়ে তার পোশাক নিয়ে মানুষের কৌতূহল বেশি, সে ব্যাপারে কী বলবেন? আবতাহা জানান, ক্রিকেটের সঙ্গে আমার হিজাবও সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।

তিনি বলেন, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে মানুষ প্রথমবারের মতো আমাকে হিজাব পরিহিত দেখছে। সুতরাং হিজাবের গুরুত্ব নিয়ে মানুষ কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক।

হিজাবি ক্রিকেটার বলেন, আমার সময় আমার মতো কাউকে সামনে পায়নি অনুসরণ করার। এটাই আমার হিজাব পরিধানের মানসকিতাকে আরও শক্তি যোগায়। সুতরাং আমি আশা করি তরুণীরা আমাকে অনুসরণ করবে হিজাবের ব্যাপারে।

আবতাহা পারিবারিক বা ধর্মীয়ভাবে কখনও কোনো বাধার সম্মুখীন হননি। এজন্য তিনি মুসলিম তরুণীদের নিয়ে কাজ করতে চান, তাদের পথের বাধা দূর করতে চান। সেসব মুসলিম তরুণীদের অনুপ্রেরণা যোগাতে চান।

আবতাহা বলেন, আমি আশা করি ক্রিকেটে আমার হিজাব পরার বিষয়টি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেবে। মানুষ যখন আমাকে দেখে তখন তারা চিন্তা করতে শুরু করে ক্রিকেট এবং হিজাব একইসঙ্গে চলতে পারে।

আমি চাই মানুষ অন্যান্য খেলার ব্যাপারে একইরকম চিন্তা করতে শিখবে। উচ্চপর্যায়ের যে কোনো অবস্থানে হিজাব যে বাধা নয়, তা মানুষ বুঝতে পারবে।

আবতাহা বলেন, একদিন আমি আমার বাড়ির সামনের বাগানে খেলছিলাম। বাবা ব্যাটিং করছিলেন আর আমি বোলিং। বাবা বললেন, তোমার কবজি স্পিন বোলিংয়ের জন্য বেশি উপযুক্ত, সহজে মুভ করে। সেদিন থেকে আমি স্পিন বোলিং শুরু করি, আর পেছনে ফিরে তাকাইনি এবং আমি সফল হই।

লেগ স্পিনার হিসেবে তার মডেল ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন। আবতাহা মনে করেন, শেন ওয়ার্ন লেগ স্পিনের রাজা। ইউটিউবে ওয়ার্নের সব ভিডিও আবতাহা দেখেছেন। মজার বিষয় হলো 'দ্য হানড্রেড টুর্নামেন্টে শেন ওয়ার্নও যুক্ত রয়েছেন। তিনি লন্ডন স্প্রিটের কোচ।

জিও নিউজকে আবতাহা বলেন, বার্মিংহাম ফনিক্সে তার অভিজ্ঞতা জীবনের সবচেয়ে আনন্দদায়ক বিষয়। তিনি যখন ফনিক্সে ডাক পান তখন ভার্সিটিতে ছিলেন। ‘কী যে অনুভূতি সেদিন হয়েছিল তা বলে বোঝাতে পারব না। এটা চাঁদ হাতে পাওয়ার চেয়ে বেশি আনন্দের ছিল।’

খবরটি পেয়ে আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব সবাই যারপরনাই খুশি হয়েছিল। আবতাহা মনে করেন, তিনি ফনিক্সে বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলছেন।

তিনি জানান, আমার দলে ইংল্যান্ডের অ্যামি জোনস, ভারতের শেফালি ভার্মার মতো খেলোয়াড় পেয়েছি। তাদের কাছ থেকে অনেক শিখেছি, বিশেষ করে বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের বিপক্ষে খেলতে সেসব শিক্ষা কাজে লেগেছে।

আমি প্রচুর উপভোগ করছি এবং শিখছি। আবতাহা মাকসুদ স্কটল্যান্ডের আন্তর্জাতিক টি-২০ দলের ১৭ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন।