আশরাফুল ফিরছেন, কিন্তু আশার ফুল হয়ে কি আর ফেরা হবে?

নিষেধাজ্ঞা শেষ। এবার ফেরার পালা। মোহাম্মদ আশরাফুলের কাছে গত কয়েকটা বছর নিঃসন্দেহে কয়েক যুগের সমান দীর্ঘ ছিলো। তার দিন বা রাত ছিলো একই রকম অন্ধকারাচ্ছন্ন। ক্রিকেটের প্রতি দুর্ণিবার নেশা যেমন তাকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে এসেছিলো, ঠিক তেমনি ক্রিকেটের নীলবিষে পা ডুবিয়ে তিনি পিছলে পড়েছিলেন হাজার ফুট গভীর টানেলে। তার উত্থান যতোটা অনিন্দ্য সুন্দর ছিলো, তার পতন ছিলো ততোটাই কদার্য। উত্থান এবং পতন; এই দুইয়ের সঙ্গে জীবনের আর কোনো গল্প তাকে না। কিন্তু আশরাফুলের সামনে সুযগো এসেছে অন্য গল্প লেখার। নিষেধাজ্ঞা শেষ করে তিনি ফিরছেন। কিন্তু আশার ফুল হয়ে কি আর ফেরা হবে আশরাফুলের?

আশরাফুলের ক্রিকেটীয় দক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। ক্রিকেটের প্রতি তার আকর্ষণটাও নিশ্চয় আগের মতোই আছে। নিষেধাজ্ঞার যন্ত্রণাময় সময়েও সুযোগ পেলেই তিনি ফেরার আকুতির কথা জানিয়েছেন। তীব্র এবং চূড়ান্ত আকাঙ্খা না থাকলে তিনি ওই রকম আকুতি প্রকাশ করতে পারতেন না। ক্রিকেটকে শুধুই খেলা-টেলা বলে মনোযোগ দিতে পারতেন ব্যবসায়। করতে পারতেন কোটি টাকার বাণিজ্য। এতে তার অতীত তারকা খ্যাতি ভালোই কাজে দিতো।

কিন্তু আশরাফুল তা করেননি। তিনি বরং পাপ মোচনের দায় থেকে সুযোগ পেলেই হাতে তুলে নিয়েছেন ব্যাট। খেলেছেন অলিতে- গলিতে। আক্ষরিক অর্থেই খেলার জন্য পাগল হয়ে থাকা আশরাফুল ছুটে গেছেন গ্রামে- গ্রামে। পাড়ার ক্রিকেটে আবার স্কস্টেপের বলে খেলেছেন। আবার ক্রিকেটে ফেরার এমন তীব্র আকুতিই নিশ্চয় বুঝিয়ে দিয়েছে ক্রিকেটের সঙ্গে তার বেঈমানীটা স্রেফ ক্ষণিকের ভুল। সেই ‘ক্ষণিকটা’ নিতান্ত কম নয়, তারপরও আশরাফুলের অন্ধকারময় অতীতটা কেবলই মানবিক ভুল বলেই মেনে নিয়েছেন সবাই। আশরাফুলও চেষ্টা করেছেন সব মুছে দিয়ে ভালো ক্রিকেটারের সঙ্গে ভালো মানুষ হয়ে ফিরতে।

ক্রিকেটীয় দক্ষতাকে সামনে রেখে আশরাফুল চেষ্টা করে গেছেন ফিটনেস ধরে রাখতে। ব্যাট চালানোর যতো কৌশলই তার জানা থাক না কেনো, সঙ্গে শক্তিও যে দরকার! আশরাফুল নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘ সময় দুই বেলা করে খেটেছেন ফিটনেস ধরে রাখতে।

৩০ বছরের পর থেকেই অ্যাথলেটদের ‘বাড়ি ফেরার গান’ গাইতে হয়। সময়ে- অসময়ে শুনতে হয় অবসর সংক্রান্ত প্রশ্ন। আশরাফুলেরও এখন সেই বয়স। খেলার মধ্যে থাকলে হয়তো এখন তাকে ওই প্রশ্নই শুনতে হতো। কিন্তু জীবন তার জন্য লিখে রেখেছে ব্যতিক্রমী চিত্রনাট্য। ফলে অবসরের চিন্তা নয়, তাকে করতে নতুন করে শুরু করার চিন্তা।

ক্রিকেটীয় দক্ষতা এবং ফিটনেস, দুইই হয়তো তিনি এক করে ফেলেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটের সিঁড়ি ভেঙে হয়তো আবার জাতীয় দলে চৌকাঠেও পড়বে আশরাফুলের পা। কিন্তু তিনি কি আবার আশার ফুল হয়ে ফুটতে পারবেন? সেই পরিস্থিতি কি আর আছে? কিংবা বাস্তবতার নিরিখে কি এই দাবি করা যায় যে, আশরাফুল সত্যিই আবার জাতীয় দলের সাজঘরে ঢুকতে পারবেন?

বাংলাদেশের ক্রিকেট আবেগের ইতিহাস লিখতে গেলে যাদের নাম আগে আসবে, আশরাফুল তাদের এক নম্বরেই হয়তো থাকবেন। এ জন্যই এখনো তাকে জাতীয় দলের জার্সিতে দেখার প্রতীক্ষায় আছেন বহু সমর্থক। তাদের কাছে ক্রিকেট কেবল খেলা নয়, জীবনের অন্য নাম। সেই তাদের কথা ভেবেই প্রশ্নটা জাগছে, আশরাফুল কি আবার আশার ফুল হতে পারবেন? এতো মানুষের প্রতীক্ষার জবাব দেয়ার আর কতোটা ক্রিকেট বাকি আছে তার মধ্যে?

ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করলেও আশরাফুলের জন্য জাতীয় দলের দরজা খোলা কঠিন। কারণ এখন যে জাতীয় দলের একেকটা জায়গার জন্য লড়াই করতে হয় কয়েকজনকে। যারা একজন আরেকজনের চেয়ে কম নন কিছুতেই। সেই তাদের মধ্যে আশরাফুল কিভাবে ঢুকে পড়বেন? তার বিষাক্ত অতীত ভুলে তাকে কিভাবেই বা ডাকবেন নির্বাচকরা? ডাকলেই বা জাতীয় দলের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা তাকে কতোটা ফিরিয়ে দিবেন পুরোনো সম্মান?

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আশরাফুলের মাঠে ফেরাটা ছিলো সময়ের ব্যাপার। কিন্তু তার আবার আশার ফুল হয়ে ফেরাটা কেবল সময়ের ব্যাপার নয়। এখানে জড়িয়ে নানা যোগ- বিয়োগ আর সমীকরণের ঝামেলা। সেই সব ঝামেলা মেটানো শুধু কঠিন নয়, একটু বেশিই কঠিন। নিষেধাজ্ঞার দিন রাত্রি আশরাফুলের জন্য যতোটা যন্ত্রণাময় ছিলো, সামনের দিনগুলো হয়তো তার জন্য অপেক্ষা করছে আরো যন্ত্রণা এবং আরো আরো চ্যালেঞ্জ নিয়ে। যে চ্যালেঞ্জ আবার আশার ফুল হয়ে ফোটার, আবার ব্যাট হাতে বাইশ গজে নিয়ন্তা!

আপনি আরো পড়তে পারেন

ধোনি: অবসর নিয়ে কিছুই ভাবছি না

শেষ হচ্ছে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ, কিন্তু কবে ফিরবেন আশরাফুল?

সিপিএল জিতে দেশে ফিরলেন সাকিব

কতোদিন লাগবে মুস্তাফিজের ফিরতে?

চলে গেলেন ‘লিটল মাস্টার’ হানিফ মোহাম্মদ