রেকর্ড গড়ে ঐতিহাসিক জয়

টি-টোয়েন্টি সংস্করণে আগের চার ম্যাচের সবকটিতেই অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে প্রথমবারের দেখাতেই বাজিমাত করল টাইগাররা। আজ প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে গড়ল ইতিহাস। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শিবির জিতেছে ২৩ রানের ব্যবধানে। কিন্তু রানের হিসেবে এই জয়ের মহাত্ম্য বোঝানো কঠিন।

ঘরের মাঠে ঐতিহাসিক জয়ের মূল কৃতিত্ব বোলারদের। মাত্র ১৩১ রানের পুঁজি প্রায় অবিশ্বাস্যভাবে আগলে রাখল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে কম রান ডিফেন্স করে কখনো জেতেনি বাংলাদেশ। ম্যাচের শেষ বলে অস্ট্রেলিয়াকে টাইগাররা গুটিয়ে দিয়েছে ১০৮ রানে। এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা।

দুর্দান্ত এই জয়ের নায়ক নাসুম আহমেদ। অস্ট্রেলিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন এই স্পিনার। ১৯ রান খরচায় চার ওভারে চার উইকেট তুলে নিয়েছেন নাসুম; ধসিয়ে দিয়েছেন অজিদের টপ অর্ডার। অস্ট্রেলিয়ার শুরুর পাঁচ ব্যাটসম্যানের চারজনকেই শিকারে পরিণত করেছেন নাসুম। জয়ের পথে সবচেয়ে বড় কাঁটা সেই মিচেল মার্শকেও আউট করেন তিনি।

৪৫ বলে ৪৫ রানে সাজঘরে ফিরেছেন মার্শ। যা অস্ট্রেলিয়ার তো বটেই, এই ম্যাচের সর্বোচ্চ সংগ্রাহক। বাংলাদেশের স্পিন তোপে অজিদের বাকি ব্যাটসম্যানদের মাত্র দুজনই দুই অংকে যেতে পেরেছেন। অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক ম্যাথু ওয়েড করেন ১৩ রান। শেষ দিকে ১৪ বলে ১৪ রান করেন স্টার্ক। ১৩ বলে ১১ রানে তিন উইকেট হারানোর যে শুরুর ধাক্কাটা তা আর সামলে নিতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া।

ম্যাচের শুরুতে অবশ্য একবার হেরেছিল বাংলাদেশ। টস হেরে নামতে হয় ব্যাটিংয়ে। যেখানে হাফসেঞ্চুরি পাননি টাইগারদের কেউ। ত্রিশের কোটায় গেছেন দুজন। দুজন আউট হয়েছেন বিশের ঘরে। মন্থর উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার পেস তোপে রান তুলতেই সংগ্রাম করতে হয় স্বাগতিক শিবিরকে।

৩৩ বলে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেছেন সাকিব আল হাসান। ইনিংসে তিনটি চার মেরেছেন তিনি। দুটি করে চার-ছক্কায় ২৯ বলে ৩০ রান এসেছে ওপেনার নাঈম শেখের ব্যাট থেকে। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কুড়ি বলে করেছেন কুড়ি রান। শেষ দিকে ১৭ বলে তিন চারে ২৩ রানে আউট হন আফিফ হোসেন ধ্রুব।

বাংলাদেশের পতন হওয়া সাত উইকেটের তিনটি নিয়েছেন জস হ্যাজলউড। দুটি শিকার মিচেল স্টার্কের। অ্যাডাম জাম্পা ও আন্দ্রে টাইয়ের ঝুলিতে গেছে একটি করে উইকেট। তাদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে বাংলাদেশকে নাগালেই বেঁধে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচ জেতা কঠিন হয়ে যায় টাইগারদের কাছে। দায়টা অবশ্যই ব্যাটসম্যানদের।

কিন্তু তাদের ব্যর্থতা আড়াল করে দিয়েছেন বোলাররা। ঘরের মাঠে মন্থর উইকেটের পূর্ণ সুবিধা আদায় করে নিয়েছে বাংলাদেশ। নাসুমের পর বোলিংয়ে সবচেয়ে সফল শরিফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান। দুজনই দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। এ ছাড়া মেহেদি হাসান ও সাকিব একটি করে শিকার করেন। বাংলাদেশের কোনো বোলারই ওভার প্রতি ৬.৩ এর বেশি রান খরচ করেননি।

বাংলাদেশ যে এই ম্যাচটা জিততে পারে এর পক্ষে বাজি ধরার লোক খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর ছিল। দ্বিতীয় সেরা দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে টাইগাররা। ইনজুরির কারণে নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবাল সিরিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আগেই। অস্ট্রেলিয়ার ছুড়ে দেওয়া সুরক্ষা বলয় নিয়মের প্যাঁচে পরে সিরিজ থেকে গেছেন অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস।

তাদের অভাবটা অবশ্য ব্যাটিং বিভাগ টের পাইয়ে দিয়েছেন। নাসুম-মুস্তাফিজের আগুনঝরা বোলিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ গড়েছে ইতিহাস। অবশ্য সেরা দল নিয়ে সফরে আসেনি অজিরাও। ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথদের দেশে রেখেই সফরে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। এর পরিণতিটা সিরিজের শুরুতেই টের পেল সফরকারীরা।