টিকে আছেন কেবল লিওনেল মেসি

১৭ আগস্ট। ২০০৫ সালের এই দিনে আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষেক হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে পুসকাস স্টেডিয়ামে মেসির অভিষেক ম্যাচটা আর্জেন্টিনা জিতেছিল ২-১ গোলে। নাটকীয় সেই ম্যাচটা অবশ্য দুঃস্বপ্ন উপহার দিয়েছে মেসিকে। অভিষেক ম্যাচেই এই খুদে জাদুকর দেখেছেন লাল কার্ড। ৬৪ মিনিটে বেঞ্চ ছেড়ে উঠে আসার একটু পরই দলকে দশজনে পরিণত করে মেসি ছেড়েছেন মাঠ।

১৭ আগস্ট। ২০০৫ সালের এই দিনে আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষেক হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির। নাটকীয় সেই ম্যাচটা অবশ্য দুঃস্বপ্ন উপহার দিয়েছে মেসিকে। অভিষেক ম্যাচেই এই খুদে জাদুকর দেখেছেন লাল কার্ড।

সেই ম্যাচে খেলা মেসি ছাড়া কেউ নেই আর্জেন্টিনার বর্তমান দলে। দুঃস্বপ্নকে পেছনে ফেলে তিনি হয়েছেন গত এক যুগের সেরা দুই ফুটবলারের একজন। আর্জেন্টিনা দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা (৭৬)। দেশের জার্সিতে সর্বোচ্চ ১৫১ ম্যাচ খেলার রেকর্ডটাও তার দখলে। মেসি এখনো মাঠের নিয়মিত মুখ। তার অভিষেক ম্যাচের ১৩ জন সতীর্থের সবাই বুট জোড়া তুলে রেখেছেন। তারা কোথায় কেমন আছেন? আজকের প্রতিবেদনে উঠে আসছেন তারা।

লিও ফ্রাঙ্কো: ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে খেলেছেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো। এরপর স্পেনের দ্বিতীয় বিভাগের দল হুয়েস্কাতে আরো এক মৌসুম খেলেছেন তিনি। ২০১৬ সালে খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানেন ফ্রাঙ্কো। দেশের হয়ে প্রায় তিন বছরে মাত্র চারটি ম্যাচ খেলে অবসর নিয়েছেন তিনি (২০০৪-০৬)। পরে ২০১৮-১৯ মৌসুমে হুয়েস্কার প্রধান কোচ হিসেবে নতুন অধ্যায় শুরু করেন ফ্রাঙ্কো। তার অধীনেই লা লিগায় উঠে আসে হুয়েস্কা। গত বছরের অক্টোবরে তাকে সরিয়ে দেয় স্প্যানিশ ক্লাবটি।

লিওনেল স্কালোনি: তার অধীনেই আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের অপেক্ষার অবসান হয়েছে। স্কালোনির অধীনে খেলে গেল ১২ জুলাই মেসি অ্যান্ড কোং জিতেছেন এবারের কোপা আমেরিকা। এই স্কালোনি ছিলেন মেসির অভিষেক ম্যাচের সতীর্থ। ক্লাব ক্যারিয়ারে আর্জেন্টিনার প্রধান কোচ খেলেছেন দিপোর্তি লা করুনা, ওয়েস্টহাম, আটালান্টা এবং লাৎসিওর মতো ক্লাবে। ২০১৫ সালে অবসরে যান স্কালোনি। আর্জেন্টিনার জার্সিতে প্রায় চার বছরে সাতটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি (২০০৩-০৬)।

রবার্তো আয়ালা: আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ডিফেন্ডার আয়ালা খেলেছেন নাপোলি, এসি মিলান এবং রিভার প্লেটের মতো ক্লাবে। দেশের হয়ে ১১৬টি ম্যাচ খেলেছেন আয়ালা। ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বুট জোড়া তুলে রাখেন এই ডিফেন্ডার। তিন বছর পর ক্লাব ফুটবলকেও বিদায় জানান তিনি। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে ২০১১ সালে রেসিং ক্লাবের পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন আয়ালা।

গ্যাব্রিয়েল হেইন: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, অলিম্পিক মার্শেই, পিএসজি এবং রিয়াল মাদ্রিদের মতো নামকরা ক্লাবে খেলেছেন হেইন। আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডার জিতেছেন লা লিগা, ইংলিশ লিগ ও ফ্রেঞ্চ লিগের শিরোপা। ২০০৪ ও ২০০৭ সালে তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। দেশের হয়ে ৭২টি ম্যাচ খেলার পর কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন হেইন। কয়েক সপ্তাহ আগে তাকে প্রধান কোচের পদ থেকে সরিয়ে দেয় মার্কিন ক্লাব আটলান্টা ইউনাইটেড।

হুয়ান পাবলো সোরিন: আর্জেন্টিনার প্রাক্তন অধিনায়ক খেলেছেন রিভার প্লেট, বার্সেলোনা, পিএসজি এবং লাৎসিওতে। সোরিনের নেতৃত্বে ২০০৬ বিশ্বকাপে অংশ নেয় আকাশি-নীল শিবির। ২০০৯ সালে ৩৩ বছর বয়সে ফুটবল থেকে অবসর নেন সোরিন। দেশের হয়ে ১৯৯৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি ৭৫টি ম্যাচ খেলেছেন।

লুকাস বার্নার্ডি: ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের দল এএস মোনাকোতে আট মৌসুম খেলেছেন লুকাস। ২০১৪ সালে খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার শেষ করেন তিনি। পরের বছর নিউওয়েলস বয়েজের প্রধান কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন এই ডিফেন্ডার। সবশেষ ২০১৯ সালে আর্জেন্টিনার শীর্ষস্থানীয় ক্লাব গডয় ক্রাজের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন লুকাস।

ম্যাক্সি রদ্রিগেজ: অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ এবং লিভারপুলের মতো বিখ্যাত ক্লাবে খেলেছেন রদ্রিগেজ। তিনি এখনো খেলে যাচ্ছেন। কার্যত আর্জেন্টাইন ক্লাব নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের অধিনায়ক তিনি। আর্জেন্টিনার হয়ে ৫৪টি ম্যাচ খেলেছেন রদ্রিগেজ। সবশেষ ২০১৪ সালে জাতীয় দলে দেখা গেছে তাকে।

লুচো গঞ্জালেস: গত মে মাসে ৪০ বছর বয়সী ফুটবল থেকে অবসর নেন গঞ্জালেস। অবসরে যাওয়ার আগে পাঁচ বছর ব্রাজিলিয়ান ক্লাব অ্যাথলেটিকো প্যারানেসে খেলেছেন তিনি। এর আগে পোর্তো, অলিম্পিক মার্শেই, আল রাইয়ানের জার্সিতে দেখা গেছে তাকে। আর্জেন্টিনার হয়ে ৪৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন গঞ্জালেস।

আন্দ্রেস ডি’আলেসান্দ্রো: আর্জেন্টিনার হয়ে সাত বছরের ক্যারিয়ারে ২৫টি ম্যাচ খেলে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানান ডি’আলেসান্দ্রো। ক্লাব ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন রিভার প্লেট, ভলফসবুর্গ ও পোর্টসমুথে। ২০১১ সালে উরুগুয়ের শীর্ষস্থানীয় ক্লাব ন্যাসিওনালে যোগ দেন এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার।

লিসান্দ্রো লোপেজ: আর্জেন্টিনার জার্সিতে প্রায় অর্ধ যুগের ক্যারিয়ারে মাত্র সাতটি ম্যাচ খেলেছেন লোপেজ। এ বছরের শুরুতে আর্জেন্টাইন ক্লাব রেসিং ক্লাবের সঙ্গে এক বছরের চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এই ফরওয়ার্ড।

হার্নান ক্রেসপো: আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি এই ফরওয়ার্ড খেলেছেন ইন্টার মিলান এবং চেলসিতে। আরো কয়েকটি ক্লাবে খেললেও ওই দুটি ক্লাবের খেলোয়াড় হিসেবেই বেশি পরিচিতি পেয়েছেন ক্রেসপো। সবশেষ ইতালিয়ান ক্লাব পার্মাতে দুই বছর খেলে ২০১২ সালে অবসর নেন তিনি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সাও পাওলোর কোচ হিসেবে পথচলা শুরু করেছেন ক্রেসপো। তার অধীনেই আট বছর পর ব্রাজিলিয়ান লিগ জিতেছে সাও পাওলো। ১৯৯৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার হয়ে ৬৪ ম্যাচে ৩৫ গোল করেছেন ক্রেসপো।

পাবলো জাবালেতা: ২০০৮ সালে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেন জাবালেতা। ক্লাব ক্যারিয়ারে এই দলটার হয়েই সবচেয়ে সফল ছিলেন আর্জেন্টাইন ফরওয়ার্ড। সিটি কিংবদন্তি ২০১৭ সালে যোগ দেন ওয়েস্টহাম ইউনাইটেডে। এখানে তিন বছর খেলে অবসর নেন জাবালেতা। ২০০৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার হয়ে ৫৮টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি।

মারিও সান্তানা: ক্লাব ক্যারিয়ারের বড় একটা অংশে সান্তানা খেলেছেন ইতালিয়ান ফুটবলে। সিরি’এ লিগে ফিওরেন্তিনা এবং নাপোলিতে মাঠ দাপিয়েছেন তিনি। শেষ দুই মৌসুম পাল্যার্মোতে খেলে অবসর নিয়েছেন সান্তানা। আর্জেন্টিনায় প্রায় দুই বছরের ক্যারিয়ারে সাতটি ম্যাচ খেলেছেন এই ফরওয়ার্ড।

লিওনেল মেসি: অভিষেক ম্যাচের দিন আর্জেন্টিনা দলে মেসি যাদের দেখেছেন তাদের প্রত্যেকেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ করেছেন। মেসি নিজেও অবশ্য অবসর নিয়েছিলেন। যদিও অভিমান ভেঙে ফিরে এসেছেন তিনি। তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং নেতৃত্বের সুবাদে ২৮ বছরের শিরোপাখরা ঘুচিয়েছে আর্জেন্টিনা জিতেছে কোপা আমেরিকা। আপাতত বার্সেলোনার সঙ্গে পাঁচ বছরের নতুন চুক্তির অপেক্ষায় আছেন মেসি। কদিন বাদেই আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষেকের দেড় যুগ পূর্ণ হবে তার।