তামিমের শতক: বাংলাওয়াশ জিম্বাবুয়ে

ভয় পাইয়ে দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। প্রায় তিন শ রানের লক্ষ্যমাত্রা ছুড়ে দিয়েছিল স্বাগতিক শিবির। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রথম ইনিংস শেষে ম্যাচটা জিম্বাবুয়ের দিকে হেলে পরে। আগে ব্যাট করতে নেমে ২৯৮ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ তোলে জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের তিন বল বাকি থাকতে অলআউট না হলে তিন শ ছাড়াতে পারতে জিম্বাবুইয়ানরা।

জবাব দিতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা হলো উড়ন্ত। তামিম ইকবালের লড়াকু শতকের ওপর দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত হিমালয় জয় করল টাইগাররা। জিম্বাবুয়ের ছুড়ে দেওয়া পাহাড় বাংলাদেশ ডিঙাল দুই ওভার ও পাঁচ উইকেট হাতে রেখেই। দারুণ এই জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিকদের বাংলাওয়াশ করলেন তামিম অ্যান্ড কোং।

জিম্বাবুয়ের ইনিংসের শুরু এবং শেষ দুটোই ছিল আগের ম্যাচগুলোর মতোই নড়বড়ে। ৩৬ রানে উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছিন্ন হয় তাদের। ধাক্কাটা কোনোরকম সামলে ওঠে জিম্বাবুয়ে। ব্রেন্ডন টেলরকে নিয়ে বিপর্যয় সামাল দেন রেজিস চাকাবা। জুটি ভাঙে টেলর ব্যক্তিগত ২৮ রানে বিদায় নিলে। এরপর জমে ওঠে জিম্বাবুয়ের তৃতীয় উইকেট জুটি।

জিম্বাবুয়ের ১৪৯ রানে জুটি ভাঙেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৩৪ রানে বিদায় নেন ডিয়ন মেয়ার্স। স্বাগতিক অধিনায়কও মাহমুদের শিকার। খানেক বাদেই মাধভেরেকে আউট করেন মুস্তাফিজুর রহমান। এক প্রান্ত আগলে রেখে জিম্বাবুয়েকে বড় সংগ্রহের পথে নিতে থাকেন চাকাবা। আর ‌ব্যক্তিগত শতকের পথে হাঁটতে থাকেন তিনি।

চাকাবাকে শতক বঞ্চিত করেন তাসকিন আহমেদ; উড়িয়ে ফেলেন জিম্বাবুয়ে ওপেনারের স্টাম্প। ৯১ বলে সাত চার ও এক ছক্কায় ৮৪ রানে আউট হন চাকাবা। কিন্তু তাকে বিদায় করেও ঠিক স্বস্তিতে থাকতে পারল না বাংলাদেশ। মিডল অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান সিকান্দার রাজা ও রায়ার্ন বার্ল থিতু হয়ে যান উইকেটে। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দুজন যোগ করেন ১১২ রান।

এই জুটির ওপর দাঁড়িয়ে বড় সংগ্রহে পৌঁছে যায় জিম্বাবুয়ে। আরো দূর যেতে পারতো তারা। কিন্তু এদিনও লোয়ার অর্ডার ধসে পরে তাদের। ১৪ রানের মধ্যে স্বাগতিকদের শেষ পাঁচ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। রাজা ৫৪ বলে সাত চার ও এক ছক্কায় ৫৭ রান করেন। বার্ল ৪৩ বলে চারটি করে চার-ছক্কায় তোলেন ৫৯ রানের ঝড়।

জিম্বাবুয়ের পতন হওয়া উইকেটের তিনটি করে নিয়েছেন সাইফুদ্দিন ও মুস্তাফিজ। মাহমুদউল্লার শিকার দুটি। খালি হাতে ফেরেননি তাসকিন, সাকিবও। তবে জিম্বাবুয়েকে অলআউট করলেও লক্ষ্যমাত্রা নাগালে রাখতে পারেননি বোলাররা। তাদের ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌উদারতার কারণে ব্যাটসম্যানদের দিতে হয়েছে অগ্নিপরীক্ষা। যার মূল নেতৃত্বে ছিলেন ওপেনার তামিম।‌‌‌

তার দারুণ ব্যাটিংয়ে সহজ জয়ের পথে হাঁটতে থাকে বাংলাদেশ। আরেক ওপেনার লিটন দাস অবশ্য রণেভঙ্গ দিয়েছেন। ৮৮ রানে টাইগারদের প্রথম উইকেটের পতন। লিটন ফেরেন ৩৭ বলে ৩২ রান করে। পরে সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে মাঝারি মানের দুটি জুটি গড়েন তামিম। ১৪৭ রানে দলের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরে যান নায়ক সাকিব।

আগের ম্যাচ জয়ের নায়ক সাকিব আজ ফিরেছেন ৪২ বলে ৩০ রানে। তার সমান রান করতে ৫৭ বল খরচ করেছেন মিঠুন। ২০৪ রানে দুই উইকেটে থাকা বাংলাদেশ হঠাৎই পরে যায় বিপদে। ৩৫তম ওভারে টিরিপানোর জোড়া ধাক্কা। তাতে লড়াইয়ে ফেরার স্বপ্ন দেখে জিম্বাবুয়ে। যদিও তাদের আশার গুড়ে বালি।

জোড়া ধাক্কা শুরু হয় তামিমের আউটে। তার আগেই সেঞ্চুরি তুলে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৯৭ বলে ১১২ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে বিদায় নেন তামিম। আটটি চার ও তিনটি ছক্কায় ইনিংসটি সাজান তিনি। পরপর দুই উইকেট হারানোর অস্বস্তি অবশ্য দূর করেছেন লোয়ার মিডল অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান ও আফিফ হোসেন।

ষষ্ঠ উইকেটে এ দুজনের অবিচ্ছেদ্য জুটির ওপর দাঁড়িয়ে অনায়েসেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ৩৯ বলে ৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন নুরুল। ইনিংসে ছিল ছয়টি চর। ১৭ বলে ২৬ রানে অজেয় থাকেন আফিফ। ইনিংসে তিনটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান তিনি। বাংলাদেশের পতন হওয়া উইকেটের দুটি করে নিয়েছেন ডোনাল্ড টিরিপানো ও ওয়েসলে মাধভেরে।