শুধু মেসি নয়, তারাও হতে পারতেন সেরা
- Details
- by খেলাধুলা ডেস্ক
সম্প্রতি স্বপ্নপূরণ হয়েছে লিওনেল মেসির। তার নেতৃত্বগুণ ও দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ওপর দাঁড়িয়ে ২৮ বছর পর আর্জেন্টিনা জিতেছে কোপা আমেরিকা। মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট শেষে ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার ফিরতে যাচ্ছেন ক্লাব ফুটবলে। স্প্যানিশ প্রচারমাধ্যমগুলোর খবর, নতুন করে বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তিতে যাচ্ছেন মেসি। যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, বার্সায় মেসি-রাজ চলবেই। প্রায় দেড় দশক ধরেই যা চলে আসছে। এ সময়ে আর্জেন্টাইন সুপারস্টার জিতেছেন ছয়টি ব্যালন ডি’অর।
সবধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এ পর্যন্ত বার্সার হয়ে ৭৭৮ ম্যাচে মেসি গোল করেছেন ৬৭২টি। ক্লাবের হয়ে মেজর ট্রফির মধ্যে ১০টি লা লিগা, সাতটি কোপা ডেল রে এবং চারটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন মেসি। যেখানে সবসময়ই উৎসবের মধ্যমণি ছিলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। তার কারণে ধুঁকতে হয়েছে অনেক বড় বড় ফুটবলারকে। মেসির ছায়াতলে না থাকলে তারাও হতে পারতেন ক্লাবের সেরা তারকা। জিততে পারতেন ব্যালন ডি’অর। একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেসব ফুটবলারকে।
অ্যান্তনিও গ্রিজম্যান: অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের প্রাণভোমরা ছিলেন গ্রিজম্যান। ২০১৯ সালে মাদ্রিদ থেকে ফরসি ফরওয়ার্ডকে ১২৬ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে নিয়ে আসে বার্সা। কিন্তু অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে থাকাকালীন গ্রিজম্যান যেমন পারফর্ম করেছেন তেমনটা করতে পারছেন না বার্সাতে। ন্যু ক্যাম্পে মেসির ছায়া হয়েই খেলতে হচ্ছে তাকে। আগামী মৌসুমেও হয়তো তাকে খেলতে হবে এভাবেই। মাদ্রিদের ক্লাবটিতে ১০ নাম্বার জার্সি পরেছেন গ্রিজম্যান। বার্সায় এসে মেসির কারণে তা পাননি তিনি।
তখন মেসি-সুয়ারেজ জুটিই মূলত কার্যকর ছিল। প্রথম মৌসুমে বার্সার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতেই যথেষ্ঠ বেগ পেতে হয়েছে ফরাসি ফরওয়ার্ডকে। লা লিগায় অভিষেক মৌসুমে মাত্র নয় গোল করেছেন তিনি। গত মৌসুমে ফর্মে ফিরতে শুরু করেন গ্রিজম্যান। কার্যত পুরনো ঠিকানায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন গ্রিজম্যান। এক্ষেত্রে সউল নিগেজকে দিয়ে গ্রিজম্যানকে ফেরাতি রাজে আছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। এনিয়ে দু’ পক্ষের মধ্যে চলছে দর কষাকষি। গিজম্যান বার্সায় থেকে গেলেও ক্লাবের সেরা ফুটবলার হয়ে ওঠা খুব কঠিন।
ডেভিড ভিয়া: ২০১০ বিশ্বকাপে আগুন ঝরিয়েছেন ডেভিড ভিয়া। স্পেনের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক তিনি। আসরে লা রোজাদের আট গোলের পাঁচটিই করেছেন ভিয়া। তাতে মুগ্ধ বার্সা। বিশ্বকাপের পরপরই ভিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে কাতালানরা। মেসির সঙ্গে আক্রমণে জুটি হয় তার। তাদের রসায়ন খুব যে ভালো হয়েছে তা নয়। ১১৯ ম্যাচে বার্সার জার্সিতে ৪৮টি গোল করেছেন ভিয়া।
ন্যু ক্যাম্পে তিন বছরে দুটি লা লিগা, একটি করে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও কোপা ডেল রের ট্রফি জিতেছেন স্প্যানিশ স্ট্রাইকার। মেসির ছায়ায় খেলতে খেলতে একটা সময় নিজেকে হারাতে শুরু করেন ভিয়া। পরে ২০১৩ সালে মাত্র পাঁচ মিলিয়ন ইউরোর বিনিমিয়ে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে তাকে বিক্রি করে দেয় বার্সা। স্প্যানিশ প্রচারমাধ্যমগুলোর মতে মেসির কারণে নিজের সেরাটা দিতে পারেননি ভিয়া।
অ্যালেক্সিস সানচেজ: বার্সেলোনায় সানচেজের গল্পটাও ভিয়ার মতোই। প্রায় একই সময়ের। ২০১১ সালে উদিনেস থেকে চিলিয়ান স্ট্রাইকারকে উড়িয়ে আনে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। চুক্তির অংক ছিল ২৬ মিলিয়ন ইউরো। সানচেজের মধ্যে অনেকেই বিশ্বসেরা হওয়ার উপদান দেখেছিলেন। নিজে গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়েও অনেক গোল করাতে সক্ষম ছিলেন তিনি। একটা পর্যায়ে বার্সার প্রধান স্কোরার হয়ে উঠেছিলেন সানচেজ। কিন্তু মেসির কারণে আর ওপরে উঠতে পারেননি তিনি।
আর্জেন্টিনা অধিনায়কের ছায়াতেই ন্যু ক্যাম্পে তিন বছর কাটিয়েছেন সানচেজ। বার্সায় শেষের মৌসুমে ৩৪টি লিগ ম্যাচে ১৯টি গোল করেছেন চিলিয়ান সেনসেশন। এ ছাড়া সতীর্থদের ১২ গোলে রেখেছেন অবদান। তবু ২০১৪ সালে ৩২ মিলিয়ন পাউন্ডে আর্সেনালের কাছে সানচেজকে বিক্রি করে দেয় বার্সা। ইংলিশ লিগে প্রথম মৌসুমে অন্যতম সেরা ফুটবলার হয়ে উঠেছিলেন এই ফরওয়ার্ড। মেসি না থাকলে বার্সার সেরা ফুটবলারও হয়তো হতে পারতেন সানচেজ।
নেইমার জুনিয়র: অনেকেই তাকে ভবিষ্যতের ব্যালন ডি’অরজয়ী ভাবতে শুরু করেছিলেন। রোনালদিনহো-রোনালদো-কাকাদের মতো ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার হিসেবে ইউরোপ শাসনের আশা ছিল নেইমারকে ঘিরে। চার বছরে বার্সেলোনায় অবশ্য খারাপ করেনি এই স্ট্রাইকার। কিন্তু মেসির উপস্থিতির কারণে নিজেকে সেরা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান ফরওয়ার্ড। তবে মেসি ও সুয়ারেজের সঙ্গে নেইমারের জুটি বিশ্বসেরা হয়ে উঠেছিল।
এই ত্রয়ী এক সঙ্গে ১৮৭টি ম্যাচ খেলে ১০৫টি গোল করেছেন। বার্সার দুটি লা লিগা, তিনটি কোপা ডেল রে ও একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ে সামনে থেকে ভূমিকা রেখেছেন এই ত্রিনক্ষত্র। যদিও সব আলো ছিল মেসির দিকেই। মেসির ছায়া থেকে বের হতে ২০১৭ সালে ক্লাব ছাড়েন নেইমার। ২২২ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তিতে তিনি যোগ দেন প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে। যা দলবদলের বিশ্বরেকর্ড। কিন্তু যে আশায় বার্সা ছেড়েছেন নেইমার তা এখনো পূরণ হয়নি তার।
জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ: ইন্টার মিলানের সেরা তারকা ছিলেন ইব্রাহিমোভিচ। বিখ্যাত কোচ হোসে মরিনহোর সঙ্গে তার রসায়ন জমে উঠেছিল মিলানে। ওই সময়ে বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকার হয়ে উঠেছিলেন সুইডিস সেনসেশন। ২০০৯ সালে রেকর্ড ৫৯ মিলিয়ন পাউন্ডের চুক্তিতে (ওই সময়ের সর্বোচ্চ ট্রান্সফার) ইব্রাকে মিলান থেকে নিয়ে আসে বার্সা। একই সঙ্গে স্যামুয়েল ইতোকেও মিলানে পাঠিয়ে দেয় কাতালানরা।
২০০৯-১০ মৌসুমে ইব্রার কারণেই চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ে হট ফেভারিট ছিল বার্সেলোনা। কিন্তু সেমিফাইনালে ইতোর ইন্টার মিলানের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায় কাতালানরা। ওই আসরেই ইউরোপসেরা হয় ইন্টার মিলান। ইতালিয়ান জায়ান্টদের শিরোপা জেতানোর পর আলোচিত সেই দলবদল নিয়ে ইতো খোঁচা মেরে বলেন, ‘ফুটবল ইতিহাসের সেরা চুক্তি ছিল এটা।’ নিজের ওপর ভরসা হারিয়ে ইব্রাকে ন্যু ক্যাম্পে আনার কারণেই বার্সাকে খোঁচাটা দিয়েছিলেন ইতো।
ফাইনালে উঠতে না পারা বার্সা শিবিরে শুরু হয় কোন্দল। মেসিকে প্রাধান্য দিয়ে ইব্রার সঙ্গে ঝামেলায় জড়ান তৎকালীন বার্সা কোচ পেপ গার্দিওলা। গুরু-শিষ্যের ওই দ্বন্দ্ব মুখোরোচক হয়ে উঠেছিল বিশ্বজুড়ে। শেষ পর্যন্ত ইব্রাকে ছেড়ে দেয় স্প্যানিশ জায়ান্টরা। আবার শুরু হয় মেসির একক রাজত্ব। যা এখনো চলছে। এই রাজত্ব কতদিন চলে সেটাই দেখার অপেক্ষায় ক্লাব ফুটবল দুনিয়া।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.