রেকর্ড জয়ে শুরু বাংলাদেশের

একমাত্র টেস্টের সিরিজে জিম্বাবুয়েকে পাত্তাই দেয়নি বাংলাদেশ। জিতেছে রেকর্ড ব্যবধানে। লাল বলের মতো সাদা বলের সিরিজেও দুর্দান্ত টাইগাররা। আজ হারারেতে প্রথম ওয়ানডেতেও স্বাগতিকদের গুঁড়িয়ে দিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের সিরিজ শুরুর জয়টা রেকর্ড ১৫৫ রানের। একদিনের ক্রিকেটে বিদেশের মাটিতে এটাই সবচয়ে বড় জয় টাইগারদের।

টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে লিটন দাসের সেঞ্চুরির ওপর দাঁড়িয়ে ২৭৬ রানের বড় সংগ্রহ তোলে বাংলাদেশ। পরে সাকিব আল হাসানের দারুণ বোলিংয়ে ২৮.৫ ওভারে জিম্বাবুয়েকে ১২১ রানে গুটিয়ে দিয়েছে টাইগাররা। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল তামিম ইকবালের দল। আগামী রোববার একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশের জয়ের ভিতটা এসেছে ব্যাটিং থেকে। কিন্তু ইনিংস শুরুর পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না। প্রথম ওভারেই ধাক্কা। কোনো রান না করেই সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার তামিম। ধাক্কাটা সামলে ওঠার আগেই নেমে এলো বিপর্যয়। দলীয় ৩২ রানের মধ্যে আউট সাকিব আল হাসান। মোহাম্মদ মিঠুন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত তাদের পথেই হাঁটলেন।

৭৪ রানে টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যান খুইয়ে তখন পুরোদস্তুর চাপে বাংলাদেশ। এ সময়ে উইকেটে থিতু হয়ে আউট হয়েছেন সাকিব-মিঠুন দুজনই। দুজনেরই রান সমান ১৯। মোসাদ্দেক ফিরেছেন ব্যক্তিগত পাঁচ রানে। রান তোলা তো দূরের কথা তখন উইকেটের লাগাম ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছিল। মিডল অর্ডার তিন ব্যাটসম্যানকে নিয়ে বিপর্যয় সামাল দেন লিটন।

যাকে শুরুতে থাকতে হয়েছে খোলসবন্দী। পাওয়ার প্লে শেষে তার স্ট্রাইক রেট ৩৫! প্রথম ১৫ ওভারে নেই কোনো বাউন্ডারির দেখা। লিটনের এমন ব্যাটিং দেখে মোটেও অভ্যস্ত নন ভক্তকূল। কিন্তু ডানহাতি ওপেনার ব্যাট করলেন পরিস্থিতি দাবি মিটিয়ে। সাবধানী ব্যাটিং করেছেন ত্রাণকর্তারূপে। হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ৭৮ বলে। এরপরই চেনারূপে দেখা গেল লিটনকে। শুরু হলো ঝড়।

সেই ঝড়ে এলোমেলো জিম্বাবুয়ের বোলিং লাইন। ইনিংসে কোনো ছক্কা অবশ্য নেই। আট চারে ১১২ বলে ১০২ রান করলেন লিটন। ইনিংস খেলার পথে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদি হাসানের সঙ্গ পেয়েছেন তিনি। তিনজনই হাফসেঞ্চুরির পথে ছিলেন। কিন্তু ইনিংসের পূর্ণতা দিতে পারেননি একজনও। এই ত্রয়ীর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৫ রান এসেছে আফিফের ব্যাট থেকে।

৩৫ বলের ইনিংসে মেরেছেন দুটি ছক্কা ও এক চার। ৫২ বলে এক ছক্কায় ৩৩ রান করেছেন মাহমুদ। ২৫ বলে একটি করে চার-ছক্কায় ২৬ রানের খেলেছেন মিরাজ। এই ত্রয়ীর ক্যামিও ইনিংস ও লিটনের ‘অন্যরকম’ শতকের সুবাদে দলীয় সংগ্রহ পৌনে তিন শ ছাড়ায় বাংলাদেশ। টাইগারদের পতন হওয়া উইকেটের তিনটি নিয়েছেন লুক জঙ্গী। দুটি করে শিকার এনগারাভা ও মুজারাবানির।

জিম্বাবুয়ের জন্য লক্ষ্যটা নাগালের বাইরে চলে গেছে। বড় রান তাড়ায় ইনিংসে শুরুতেই ধসে পড়ে তারা। স্বাগতিকদের শুরুটাও প্রায় বাংলাদেশের মতোই বন্ধুর। ১৩ রানে দুই উইকেট খোয়ানোর পর ৭৪ রানের মধ্যে নেই চার উইকেট। টাইগাররা ধাক্কাটা সামলে উঠেছিল। কিন্তু জিম্বাবুয়ে পারেনি। ব্রেন্ডন টেলর ও ডিয়ন মেয়ার্স সাজঘরে ফেরার পর রেজিস চাকাবা বাংলাদেশের জয়টা কেবল বিলম্বিত করেছেন।

৩১ বলে তিন চারে ২৪ রানে আউট হন অধিনায়ক টেলর। ২৪ বলে সমান চারে ১৮ রানে ফেরেন মেয়ার্স। এক প্রান্ত আগলে রেখে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন চাকাবা। ১১৯ রানে জিম্বাবুয়ের অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। ৫১ বলে ৫৪ রান এসেছে চাকাবার ব্যাট থেকে। ইনিংসে চারটি চারের সঙ্গে ছিল দুটো ছক্কার মার।

জিম্বাবুয়েকে ধসিয়ে দিয়েছেন সাকিব। টাইগার অলরাউন্ডারের ঘূর্ণিতে দিশেহারা জিম্বাবুয়ে শেষ ১৬ রান যোগ করতে গিয়ে খুইয়েছে পাঁচ উইকেট। দলের আটজন যেতে পারেননি দশকের ঘরে। এক বলের জন্য বোলিংয়ের কোটা পূরণ করতে পারেননি সাকিব। ৩০ রানে তিন মেডেনসহ পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন এই বাঁ-হাতি তারকা। তবু সাকিব পেয়েছেন পার্শ্ব নায়কের চরিত্র। ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠেছে লিটনের হাতে।

ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের ইতিহাসে (রানের হিসেবে) এটা বাংলাদেশের চতুর্থ বড় জয়। আগের জয়টিও ছিল এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। গত বছর সিলেটে জিম্বাবুয়েকে ১৬৯ রানে হারিয়েছিল টাইগাররা। আর বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের আগের রেকর্ড জয়টি ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ২০১৮ সালে দুবাইতে এশিয়া কাপের ম্যাচটিতে লঙ্কানদের ১৩৭ রানে হারায় বাংলাদেশ।