রেকর্ড জয়ে রঙিন বাংলাদেশ, বিদায় মাহমুদউল্লাহ!

হারার আগে হারল না জিম্বাবুয়ে। সবটুকু নিংড়ে দিয়েই লড়ল তারা। তবু শেষ রক্ষা হলো না। সিরিজের একমাত্র টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনে তাদের সব প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। আজ হারারেতে জিম্বাবুয়েকে ২২০ রানে হারিয়ে ম্যাচ ও সিরিজ দুটোই জিতে নিল টাইগাররা। দেশের বাইরে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়।

রেকর্ড এই জয়ের নায়ক অনেকেই। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তাসকিন আহমেদ এবং মেহেদি হাসান মিরাজ- প্রত্যেকেই ম্যাচ সেরার দাবিদার। তবে আলোচনায় কেবল মাহমুদউল্লাহ। আজ টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ দিনটা পার করে ফেললেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। সকালে ‘তাকে গার্ড অব অনার’ দিয়েই পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। দলের জয়টা তাই তার জন্য বিদায়ী অর্ঘ্য।

শেষ দিন জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল সাত উইকেট। জিম্বাবুয়েকে করতে হতো ৩৩৭ রান। গড়তে হতো ইতিহাস; ভাঙতে হতো বিশ্বরেকর্ড। খুব স্বাভাবিকভাবেই পারেনি তারা। ৪৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ে গুটিয়ে গেছে ২৫৬ রানে। এর আগে তিন উইকেটে ১৪০ রানে দিনের খেলা শুরু করেছিল তারা।

জিম্বাবুয়ের পক্ষে ড্র করাটাও প্রায় অসম্ভব ছিল। কারণ ব্যাটিংয়ের অন্যতম ভরসা ব্রেন্ডন টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাট করতে গিয়ে আগের দিন ফিরে গেছেন ৯২ রানে। আজ ডিয়ন মেয়ার্স ১৮ ও ডোনাল্ড তিরিপানো ব্যক্তিগত সাত রানে দিনের খেলা শুরু করেন। দুজন ভালোই ভুগিয়েছেন বাংলাদেশকে। ৮৮ বলে ২২ রান করেন মেয়ার্স।

অবাক করা বিষয় হচ্ছে ইনিংসে কোনো চার না মারলেও দুটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। তবে সঙ্গী হারালেও সঙ্গ হারাননি তিরিপানো। আজ পুরোটা দিন তাসকিন-মিরাজদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের বিপরীতে লড়াই করে গেছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। চাপের মধ্য দিয়েই তুলে নিয়েছেন ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি।

ইনিংসটা খেলার পথে নয় নম্বর ব্যাটসম্যান ভিক্টর নিয়াচির ভালোই সঙ্গ পেয়েছেন তিনি। ৫৪ বলে ১০ রানে ফেরান নিয়াচি। তার বিদায়ের পর ব্লেসিং মুজারাবানিকে নিয়ে ফের লড়াই করেন তিরিপানো। ১৪৪ বলে ৫২ রানে আউট হন তিনি। শেষ দিকে ২৭ বলে ১০ রান করেন রিচার্ড এনগারাভা। ৫১ বলে ৩০ রানে অজেয় থাকেন ব্লেসিং মুজারাবানি।

বাংলাদেশের পক্ষে চারটি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন ও মিরাজ। প্রথমজন লোয়ার অর্ডার এবং দ্বিতীয়জন জিম্বাবুয়ের টপ অর্ডারে ধস নামান। এর ফাঁকে সাকিব ও এবাদত নিয়েছেন একটি করে উইকেট। দুই ইনিংস মিলিয়ে নয় উইকেটে ১৪৮ রান খরচ করেন মিরাজ। যা দেশের বাইরে কোনো বাংলাদেশির সেরা বোলিং।

দেশের বাইরে ৫৯ টেস্টে এটা পঞ্চম জয় টাইগারদের। তন্মধ্যে দুটিই এলো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বিদেশের মাটিতে রানের হিসেবে এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। আগের জয়টাও জিম্বাবুইয়ানদের বিপক্ষেই। ১৪৩ রানে জিতেছিল টাইগাররা। সেই ম্যাচেও স্বাগতিকদের চার শর বেশি লক্ষ্যমাত্র দিয়েছিল সফরকারী বাংলাদেশ।

এর আগে প্রথম দিন টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ১৩২ রানের মধ্যেই ছয় উইকেট খুইয়ে বসে বাংলাদেশ। সেখান থেকে সাত নম্বর ব্যাটসম্যান লিটন দাসকে নিয়ে টাইগারদের কক্ষপথে ফেরান আটে নামা মাহমুদউল্লাহ। লিটন পাঁচ রানের জন্য শতক পাননি। মাহমুদউল্লাহ ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে করেন অরপাজিত ১৫০ রান। তার সঙ্গী তাসকিন আহমেদ ৭৫ রান করেন।

এ ছাড়া মুমিনুল হক সৌরভ ৭০ রানে আউট হন। এই চুতষ্টয়ের ব্যাটিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে প্রথম ইনিংসে ৪৬৮ রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে বড় সংগ্রহের আভাস দেয় জিম্বাবুয়ে। যদিও মিরাজ ও সাকিব ঘূর্ণির কবলে পড়ে ২৭৬ রানে থেমে যায় স্বাগতিকদের ইনিংস। ফিরতি ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে সেঞ্চুরি তুলে নেন বাংলাদেশের দুই তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত (১১৭*) ও সাদমান ইসলাম (১১৫*)।

তাদের শতকের ওপর দাঁড়িয়ে এক উইকেটে ২৮৪ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল। জিম্বাবুয়ে লক্ষ্য পায় ৪৭৭ রানের। টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের দুই দশকের ইতিহাসে প্রতিপক্ষকে এত বেশি রান কখনোই টার্গেট দিতে পারেনি টাইগাররা। সবমিলিয়ে প্রতিপক্ষকে চার শর বেশি লক্ষ্যমাত্রা চতুর্থবার দিয়েছে টাইগাররা। আগের তিনবারও জিম্বাবুয়েকে বিশাল টার্গেট দেয় বাংলাদেশ।

প্রতিবারই বড় ব্যবধানে হেরেছে জিম্বাবুয়ে। আজও ব্যতিক্রম হলো না। এবার বরং ইতিহাস হলো বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৪৬৮/১০, ২৮৪/১ (ডি.)।

জিম্বাবুয়ে: ২৭৬/১০ ও ২৫৬/১০।

ফল: বাংলাদেশ ২২০ রানে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

সিরিজ: এক ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে জয়ী।