ইতিহাস গড়ার পর জয়ের পথে বাংলাদেশ

টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের প্রায় দুই দশকের ইতিহাসে এমন লক্ষ্যমাত্রা বহুবার পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু হিমালয়তুল্য সেইসব লক্ষ্যে কখনোই পৌঁছাতে পারেনি টাইগাররা। আজ হারারে টেস্টের চতুর্থ দিন জিম্বাবুয়েকে এমনই স্বপ্নের একটা লক্ষ্য ছুড়ে দিলো বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের জিততে হলে করতে হবে ৪৭৭ রান। টেস্ট ক্রিকেটের প্রায় দেড় শ বছরের ইতিহাসে এত রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই কারোরই।

আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় বাংলাদেশ দল

কাজেই রোববার সিরিজের একমাত্র টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনে জিততে হলে জিম্বাবুয়েকে গড়তে হবে বিশ্বরেকর্ড। রানপাহাড়ের জবাব দিতে নেমে হার ঠেকাতে লড়ছে স্বাগতিক শিবির। চতুর্থ দিনের খেলা শেষে তিন উইকেটে ১৪০ রান করেছে জিম্বাবুয়ে। জিততে হলে তাদের করতে হবে আরো ৩৩৭ রান। আর বাংলাদেশের দরকার সাত উইকেট। ড্র করাটাও জিম্বাবুইয়ানদের জন্য বেশ কঠিন। কাটিয়ে দিতে হবে শেষ দিনের পুরোটা সময়।

প্রথম ইনিংসে রানপাহাড়ের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও আলো ছড়িয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। আরেকটু ছোট করে বললে দুই তরুণ সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। আজ দুজনই তুলে নিয়েছেন স্বপ্নের সেঞ্চুরি। এই দুজনের অজেয় শতকের ওপর দাঁড়িয়ে এক উইকেটে ২৮৪ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেছে টাইগাররা। লিড ৪৭৬ রানের। এই টেস্টের আগে প্রতিপক্ষকে কখনোই এতবড় টার্গেট দিতে পারেনি বাংলাদেশ।

সাদমান ও শান্তর হার না মানা সেঞ্চুরি

দলীয় ৮৮ রানে ফিরতি ইনিংসের একমাত্র উইকেটটি হারায় টাইগাররা। ৯৫ বলে ছয় চারে ৪৩ রানে সাজঘরে ফেরেন সাইফ হাসান। এনগারাভার বলে মায়ার্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বাংলাদেশ ওপেনার। পরে শান্তকে নিয়ে ১৯৬ রানের অবিচ্ছেদ্য এক জুটি গড়েন সাদমান। জুটি গড়ার পথে দুজনই তুলে নিয়েছেন শতক। তবে ইনিংস খেলার পথে সাদমান যতটা শান্ত ছিলেন, শান্ত ততটাই আগ্রাসী ছিলেন।

আদর্শ টেস্ট মেজাজে ব্যাটিং করা সাদমান অপরাজিত থাকলেন ব্যক্তিগত ১১৫ রানে। ১৯৬ বলের ইনিংসটা তিনি সাজিয়েছেন নয়টি চারে। তবে ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করেছেন শান্ত। তার ১১৭ রানের উত্তাল ইনিংসটা ছিল মাত্র ১১৮ বলে! বিধ্বংসী ইনিংসে পাঁচটি চার ও ছয়টি ছক্কা মেরেছেন শান্ত। তার ব্যাটিং দেখে কে বলবে এটা টেস্ট সংস্করণের খেলা চলছে! এ যুগলের ব্যাটিং দৃঢ়তায় চতুর্থবারের মতো প্রতিপক্ষকে চার শ’র বেশি টার্গেট দিলো বাংলাদেশ।

আগের তিনটিও অবশ্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০১৩ সালে হারারে টেস্টে জিম্বাবুয়েকে ৪০১ রানের লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে বাংলাদেশ জিতেছে ১৪৩ রানে। পরের বছর চট্টগ্রাম টেস্টে জিম্বাবুইয়ানদের ৪৪৯ রানের টার্গেট দিয়ে টাইগাররা জেতে ১৮৬ রানে। সবশেষ ২০১৮ সালে ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের ৪৪৩ রানের চাপায় পড়ে জিম্বাবুয়ে হারে ২১৮ রানে। টেস্ট ক্রিকেটে রানের হিসাবে যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বড় জয়। এবার সেই রেকর্ড ভাঙার সুযোগ মুমিনুল অ্যান্ড কোং-এর।

বাংলাদেশের হিমালয়তুল্য লক্ষ্যমাত্রা ছুড়ে দেওয়ার ভিতটা গড়ে দিয়েছে প্রথম ইনিংস। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অজেয় ১৫০, লিটন দাসের ৯৫, তাসকিন আহমেদের ৭৫ ও মুমিনুলের ৭০ রানের সুবাদ প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ তোলে ৪৬৮ রান। অথচ এই ইনিংসে প্রথম দিনে ১৩২ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে কঠিন চাপেই ছিল টাইগাররা। পরে মাহমুদউল্লাহ, লিটন ও তাসকিনের দৃঢ়তায় দলীয় সংগ্রহ সাড়ে চার শ ছাড়ায় বাংলাদেশ।

খুব স্বাভাবিকভাবেই আরো একটা হারের মুখোমুখি জিম্বাবুয়ে। টাইগারদের জয়ের পথে সবচেয়ে বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলর। সেই কাঁটা উপড়ে ফেলেছেন সেই মেহেদি হাসান মিরাজ। যিনি প্রথম ইনিংসে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। টেলরকে শতক বঞ্চিত করেন তিনি কট অ্যান্ড বোল্ডে। টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাট করে ৯২ রানে আউট হন টেলর। ৭৩ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে ১৬টি চার মেরেছেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি যখন সাজঘরে ফিরছিলেন তখন জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ১১০ রান!

টেলরের আগে ও পরে ফিরে গেছেন দুই ওপেনার। মিল্টন শুম্বাককে ১১ রানে ফেরান তাসকিন। কায়তানো সাকিব আল হাসানের এলবি হয়ে সাত রানে আউট হন। ম্যাচে এটা তার পঞ্চম শিকার। শেষ বিকেলে জিম্বাবুয়ের উইকেটের লাগাম টেনে ধরেন ডিয়ন মেয়ার্স ও ডোনাল্ড তিরিপানো। প্রথমজন ১৮ ও দ্বিতীয়জন সাত রানে অপরাজিত থেকে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেছেন। কাল শেষ দিনে দ্রুতই তাদের গুটিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য বাংলাদেশের বোলারদের।