রাত পোহালেই মহাযুদ্ধ

ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাচীন ও ধ্রুপদী এক লড়াইয়ের নাম ‘সুপার ক্লাসিকো’। তাতে দ্বিখন্ডিত ফুটবল দুনিয়া। বাংলাদেশ সময়ে আজ রাত পোহালেই শুরু হবে এই মহাযুদ্ধ। যেখানে বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই মীমাংসা হবে এবারের মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট তথা কোপা আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের।

লড়াইটা ঘরের মাঠে বলেই কিছুটা এগিয়ে ব্রাজিল। কিন্তু আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় শক্তি লিওনেল মেসি। জাতীয় দলের জার্সিতে এই টুর্নামেন্টে অতিমানবীয় ফর্মে আছেন ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার। আর্জেন্টিনার ফাইনালে ওঠার আসল রূপকার তিনিই। আসরে পাঁচ ম্যাচে মেসি করেছেন চার গোল; সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরো পাঁচটি।

বিশ্বজুড়ে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা তার দিকেই তাকিয়ে থাকবেন। ক্লাব ফুটবলে সর্বস্ব জেতা মেসি জাতীয় দলের হয়ে একটা সাফল্যের জন্য হাসফাঁস করছেন বহু বছর ধরে। গেল দেড় দশকের অন্যতম সেরা ফুটবলারের এটা হতে যাচ্ছে পঞ্চম ফাইনাল। আগের চার ফাইনালের সবকটিতেই হেরেছেন মেসি অ্যান্ড কোং। তন্মধ্যে কোপা আমেরিকার ফাইনালেই হার তিনটি।

এবার ফুটবল দায় মেটাতে পারবে তো? ২৮ বছরের শিরোপা না পাওয়ার যন্ত্রণা শেষ হবে তো আর্জেন্টিনার? দুই প্রশ্নের মাঝখানেই বড় বাধা ব্রাজিল। যারা কখনো ঘরের মাঠে কোপা আমেরিকার শিরোপা হাতছাড়া করেনি। আগের পাঁচটি আসর আয়োজন করে প্রতিবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। এই মুহূর্তে টুর্নামেন্টের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নও সেলেকাওরা।

আর্জেন্টিনার একটা দুশ্চিন্তা অবশ্য আছে। ফাইনালে উঠতে গিয়ে ইনজুরিতে পরেছেন তাদের অধিনায়ক। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে কলম্বিয়ান ফুটবলারের কড়া ট্যাকলে রক্তাক্ত হয়েছেন মেসি। মোজা চুয়ে চুয়ে তার পা থেকে রক্ত ঝরতে দেখা গেছে। আর্জেন্টিনার হয়ে শিরোপাস্বপ্ন পূরণে মেসি কতটা মরিয়া তা বোঝাতে লোমহর্ষক এই দৃশ্যটাই যথেষ্ঠ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ফাইনালে শতভাগ ফিট মেসিকে পাবে তো আর্জেন্টিনা?

গতবারও আর্জেন্টিনার স্বপ্নের সমাধি হয়েছে এই ব্রাজিলের কারণেই। সেমিফাইনালে নেইমারবিহীন সেলেকাওদের কাছে ২-০ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায় আর্জেন্টিনা। ফাইনালে পেরুকে হারিয়ে নবমবারের মতো কোপা আমেরিকা জয়ের স্বাদ পায় সেলেকাওরা। সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল দুটো ম্যাচেই গোল করেছিলেন ব্রাজিল ফরওয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল জেসুস।

অথচ সেই তিনিই আজ ফাইনালে নিষিদ্ধ। কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ ফুটবলারকে উড়ন্ত লাথি মেরে দেখেছেন লাল কার্ড। পেয়েছেন সেমিফাইনাল থেকে নির্বাসন। তার নিষেধাজ্ঞা আরো এক ম্যাচ বাড়িয়ে দিয়েছে কোপা আমেরিকার আয়োজক ও দক্ষিণ আমেরিকা ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা কনমেবল। তাতে বড়সড় একটা ধাক্কা খেয়েছে ব্রাজিল।

জেসুস না থাকায় আজ বাড়তি প্রত্যাশার চাপ নিয়ে খেলতে হবে নেইমারকে। আসরে এখন পর্যন্ত নিজে দুই গোল করার পাশাপাশি তিনটি অ্যাসিস্ট রয়েছে তার। ফাইনালের জন্য এমন ফর্ম যে কোনো প্রতিপক্ষের জন্যই দুশ্চিন্তার। আর্জেন্টাইনদেরও তাই বাড়তি ভয় আছে নেইমারকে নিয়ে। আর ব্রাজিলের সব ভয় যেন জমা হয়েছে মেসির পায়ে।

এবারের কোপায় আগুনে ফর্মে রয়েছেন মেসি। কিন্তু আর্জেন্টিনা অধিনায়ককে কীভাবে বোতলবন্দি করতে হয় তা ভালোই জানা আছে ব্রাজিল কোচ তিতের। গত কোপা আমেরিকাতেও তো মেসিকে নিষ্ক্রিয় রেখেছিলেন অভিজ্ঞ এই কোচ। ম্যাচের আগের দিন সেলেকাও মিডফিল্ডার মার্কুইনহস তা আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন। শিরোপা ধরে রাখতে তারাও মরিয়া হয়ে মাঠে নামবেন।

তবে আর্জেন্টিনার ফাইনালে ওঠার একক নায়ক মেসি নন। গোলরক্ষক অ্যামিলিয়ানো মার্টিনেজের বীরত্বে টাইব্রেকে জিতে ফাইনালে ওঠে আলবিসেলেস্তেরা। ভাগ্য নির্ধারণী পেনাল্টি শ্যুট আউটে হেরে বিদায় নেয় কলম্বিয়া। সেমিতে দারুণ পারফর্ম করা মার্টিনেজের বিশ্বস্ত গ্লাভসের দিকে এবার চেয়ে থাকবেন আর্জেন্টাইনরা। ওদিকে ব্রাজিলের তারকা গোলরক্ষক তো আছেনই, তবে রক্ষণে ব্রাজিলের বড় শক্তি ক্যাসেমিরো ও থিয়াগো সিলভার উপস্থিতি।