ডেনিস রূপকথা থামিয়ে ইংল্যান্ডের ইতিহাস

লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম কাঁপিয়ে দিয়েছিল ডেনমার্ক। ফ্রি-কিকে চূর্ণ ইংল্যান্ডের রক্ষণের দর্প। পিছিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিট পর আত্মঘাতী গোলে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনও করে ইংলিশরা। বাকিয়ে সময়ে আপ্রাণ চেষ্টা করেও ডেনিসের জালে বল পাঠাতে পারেনি থ্রি লায়নরা। স্বপ্নের গোলটা এসেছে অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটের প্রথমার্ধে। তাতেই বাজিমাত।

প্রথমবারের মতো ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠে গেল স্বাগতিক ইংল্যান্ড। বুধবার রাতে রূপকথার ডেনমার্ককে ২-১ গোলে হারিয়ে ৫৫ বছর পর মৌলিক কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠল ইংলিশরা। সবশেষ ১৯৬৬ সালে ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল তারা। ওই বছর পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে ফুটবলের একমাত্র গৌরবের শিরোপা জেতে স্বাগতিক ইংল্যান্ড।

দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচের প্রথম ভাগেই ছড়ায় উত্তেজনার রেণু। ইংল্যান্ডের ডেরায় গিয়ে তাদেরই দর্শকদের সামনে দুঃসাহসিক ফুটবল খেলে ডেনিসরা। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমনে ভয় ধরিয়ে দেয় ইংলিশ সমর্থকদের। ৩০ মিনিটে স্বপ্নের গোলও পেয়ে যায় তারা। মিকেল ডামসগার্ডের দারুণ ফ্রি-কিক আশ্রয় নেয় স্বাগতিকদের জালে। চলমান ইউরো টুর্নামেন্টে এটাই ইংলিশদের প্রথম গোল হজম।

৬৬ হাজার দর্শক উপস্থিতির প্রায়সব আসন ইংল্যান্ডের দখলে। ডামসগার্ড গোলটা করতেই স্তব্ধ হয়ে যায় স্বাগতিক শিবির। সমতায় ফিরতে মরিয়া ইংলিশরা মুহুর্মুহু আক্রমণ শুরু করে ডেনমার্কের বিপদসীমায়। আক্রমণের তোপ সামলাতে গিয়ে আত্মঘাতী গোল করে বসলেন সিমন কেজায়ের। ম্যাচ তখন ৪০ মিনিট ছুঁই ছুঁই। বুকায়ো সাকার বিপজ্জনক পাস রুখতে চেয়েছিলেন ডেনিস অধিনায়ক।

তার পায়ে লেগে বল জড়িয়ে যায় জালে। অবশ্য কিছুই করার ছিল না তার। কেজায়ের বল স্পর্শ না করলেও রহিম স্টার্লিংয়ের গোল করার সুযোগ ছিল প্রায় শতভাগ। ম্যাচে স্টার্লিং গোল পাননি। তবে ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত খেলেছেন ইংলিশ ফরওয়ার্ড। প্রায় সাপের মতো এঁকে বেঁকে ত্রাস ছড়িয়েছেন ডেনমার্কের বিপদসীমায়। ইংল্যান্ড যে পেনাল্টি পেয়েছে সেটার মূল কৃতিত্ব তারই।

ডি-বক্সে ডান পাশে স্টার্লিংকে পেছন থেকে ফেলে দেন জোয়াকিম মাহলি। এই ভুলেই শেষ হয়ে গেল ডেনমার্কের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। তার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে। স্পট কিক নিতে আসা হ্যারি কেনের মাটি কামড়ানো শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে রুখে দেন ডেনমার্ক গোলরক্ষক স্মাইকেল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ফিরতি শটে গোল করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক ও স্ট্রাইকার। ব্যস, উচ্ছ্বাসে ফেটে পরে ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম।

ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ হয়েছে ১-১ গোলে। দ্বিতীয়ার্ধের বেশিরভাগ সময়ে বল ঘুরেছে ডেনমার্কের রক্ষণভাগের আশপাশ দিয়ে। এ সময়ে ইংল্যান্ড কয়েকটা গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল ইংলিশরা। তাদের বেশ কয়েকটা প্রচেষ্টা মাটি করে দেন ডেনিস গোলরক্ষক স্ম্যাইকেল। ১১৪তম মিনিটে পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিয়ে বাবা পিটার স্মাইকেলের নামটা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

১৯৯২ সালে উয়েফার আমন্ত্রণে ইউরো টুর্নামেন্টে খেলতে এসে পিটারের অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ডেনমার্ক। কিন্তু বাবার মতো ফাইনালে ওঠা হলো না তার। সতীর্থের একটা ভুলেই শেষ হয়ে গেল স্বপ্নযাত্রা। সেই ভুলের সুযোগ নিয়ে ফাইনালে উঠে গেল ইংল্যান্ড। আগামী রোববার একই ভেন্যুতে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ইতালির মুখোমুখি হবে ইংলিশরা।