দুর্ভাগা সুইডেনের বিদায়, শেষ আটে ইউক্রেন

নক আউট পর্ব এমনই। কার কপালে যে কী লেখা তা পূর্বানুমান করাই মুশকিল। এই যেমন দুর্দান্ত খেলেও বিদায় নিতে হলো সুইডেনকে। তাদের জিততে দেয়নি ইউক্রেনের ক্রসবার। বেরসিক গোলপোস্ট তো ছিলই, সঙ্গে যুক্ত হলো লাল কার্ড দুর্ভাগ্য। এই দুইয়ে মিলে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে স্বপ্নের সমাধি হয়ে গেল জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচবিহীন সুইডেনের।

মঙ্গলবার রাতে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ ষোলোর শেষের নাটকীয়তায় জিতল ইউক্রেন। নির্ধারিত দেড় ঘণ্টার লড়াই শেষে ম্যাচ অমীমাংসিত থাকল ১-১ গোলে। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটে। সেখানেই নাটক। সমতা যখন কোনোভাবেই ভাঙছিল না তখন অপেক্ষা ছিল কেবল টাইব্রেকারের। কিন্তু ভাগ্য নির্ধারণীর লড়াইয়ে যেতে হলো না।

অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় ভাগের ইনজুরি টাইমে দুর্দান্ত এক গোল করে বসলেন আর্টেম ডোভবিক। তার মাথাস্পর্শী বলটা সুইডেনের জালে আগ্নেয়াস্ত্রের মতোই প্রবেশ করল। তাতে ক্ষত-বিক্ষত সুইডিসরা। ২-১ গোলে হেরে কার্যত শেষ হয়ে গেল তাদের স্বপ্নযাত্রা। এমিল ফর্সবার্গ-রবিন ওলসেনদের হারিয়ে ইউক্রেন চলে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে।

ম্যাচের ২৩ মিনিটে প্রথমবার কেঁপে ওঠে সুইডেনের জাল। আলেক্সান্ডার জিঙ্কেঙ্কোর গোলে লিড নেয় ইউক্রেন। বিরতিতে যাওয়ার আগেই সমতায় ফেরে সুইডিসরা। দারুণ গোলে স্কোর লাইন ১-১ করেন লাইপজিগ প্রাণভোমরা ফর্সবার্গ। চলমান ইউরো টুর্নামেন্টে এটা তার চতুর্থ গোল। এই গোলের সুবাদে গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে চলে এসেছিলেন তিনি।

কিন্তু সোনার জুতা জেতা হলো না তার দল আসর থেকে ছিটকে যাওয়ায়। হয়তো বিদায়ের পরও আশা থাকতো ফর্সবার্গের। এদিন দুবার গোলপোস্ট ফিরিয়ে দিয়েছে তাকে। তা না হলে গোল সংখ্যা হতে পারতো ছয়। সবমিলিয়ে ইউক্রেন ম্যাচে তিনবার গোলপোস্টের বেরসিক আচরণের কারণে গোল পায়নি গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালিস্টরা।

আরো বড় দুর্ভাগ্য নেমে আসে সুইডেন শিবিরে। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের প্রথমার্ধের মাঝপথে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন মার্কাস ড্যানিয়েলসন। ভিএআরের সহায়তায় তাকে কঠিন শাস্তি দেন ম্যাচকর্তা। শেষ কুড়ি মিনিটে একজন কম নিয়ে পুরোপুরি রক্ষণাত্মক মেজাজে খেলে সুইডিসরা। আর ১০ জনের প্রতিপক্ষের ওপর সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে ইউক্রেন।

কোনোভাবেই যখন গোল হচ্ছিল না তখন ইউক্রেন কোচ আন্দ্রে শেভচেঙ্কো মাঠে নামান ডোভবিককে। বেঞ্চ ছেড়ে উঠে আসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাজিমাত করেন তিনি। ইউরো টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই করলেন স্বপ্নের গোল। গোলটা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ডোভবিকের কারণে। ১২১তম মিনিটে করা তার এই গোলের ওপর দাঁড়িয়েই তো শেষ আটে উঠে গেল ইউক্রেন!

কোয়ার্টার ফাইনালে আরো বড় পরীক্ষা অপেক্ষা করছে শেভচেঙ্কোর দলের জন্য। আগামী শনিবার ইতালির রোমে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ইউক্রেন মোকাবেলা করবে টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট ইংল্যান্ডকে। কাল রাতে শেষ ষোলোর অন্য ম্যাচে জার্মানিকে ২-০ গোলে হারিয়েছে ইংলিশরা। ম্যাচের শেষ দিকে গোল দুটি করেন রহিম স্টার্লিং ও হ্যারি কেন।

অথচ এই ইউক্রেনের শেষ ষোলোতে যাওয়া নিয়েই ছিল সংশয়। গ্রুপপর্বে তাদের পয়েন্ট ছিল মাত্র তিন। গ্রুপের তৃতীয় সেরা দলের কোটায় নক আউটে পর্বের টিকিট পেয়েছে ‘সি’ গ্রুপে থাকা ইউক্রেন। নক আউট পর্বের প্রথম ম্যাচেও ভাগ্যের ছোঁয়ায় বাজিমাত করল তারা। আর মৃত্যুকূপ খ্যাত ‘এফ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন সুইডেন বিদায় নিল। গ্রুপে তাদের পয়েন্ট ছিল সাত। রানার্সআপ স্পেনের চেয়ে দুই বেশি।