সাকিবদের কাণ্ডে আম্পায়ারিং ছাড়লেন মনিরুজ্জামান

কখনো সাকিব আল হাসান, কখনো তামিম ইকবাল, কখনো মুশফিকুর রহিম কিংবা কখনো অন্য কেউ। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ারদের ওপর আক্রোশ ঝেরেছেন অনেকেই। ক্রিকেটারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত এমন অশোভন আচরণ আত্মসম্মানে লাগে আম্পায়ারদের। সম্ভ্রম হানির ভয় থাকে তাদের। সব আম্পায়ারের প্রতিনিধি হয়ে যেন নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরলেন একজন।

ছবিতে বল হাতে মনিরুজ্জামান

তিনি মনিরুজ্জামান। আইসিসির প্যানেলভুক্ত উদীয়মান আম্পায়ার। অকালেই ঝরে গেলেন এই প্রতিভা। আম্পায়ারদের প্রতি সাকিবদের অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের কারণে কঠিন সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেললেন মনিরুজ্জামান। অনেক ভেবে-চিন্তে আম্পায়ারিং ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এক কর্তা খবরটি নিশ্চিত করেছেন।

সম্প্রতি ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগে সাকিব আম্পায়ারদের অসম্মান করেছেন। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাজে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন মাঠে। ভেঙেছেন স্টাম্প। সেদিন অবশ্য মাঠে আম্পারিংয়ে ছিলেন না মনিরুজ্জামান। কিন্তু সাকিবদের কাণ্ড দেখে খুব হতাশ হয়েছেন তিনি। যার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আম্পায়ারিং ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মঙ্গলবার মনিরুজ্জামান বলেছেন, ‘আমার জন্য যথেষ্ঠ হয়েছে। আমি আর আম্পায়ারিং করতে চাই না। আমার আত্মসম্মান আছে এবং এটা নিয়ে বাঁচতে চাই। আম্পায়াররা ভুল করতেই পারেন। কিন্তু আমাদের যদি এভাবে মূল্যায়ন করা হয় তাহলে বলার কিছু থাকে না। সত্যি বলতে টাকার জন্য আমি আম্পায়ারিং করি না। বিসিবির কাছ থেকেও কোনো বেতন নেই না। কেবল ম্যাচ ফি পাই।’

মনিরুজ্জামান যোগ করলেন, ‘আমি সাকিবের ম্যাচে ছিলাম না। তবে মাঠে তার প্রতিক্রিয়া দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে। মাহমুদউল্লাহর ম্যাচে আমি টিভি আম্পায়ার ছিলাম এবং পুরো বিষয়টা মনোযোগ দিয়ে দেখেছি। সবমিলিয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর আম্পায়ারিং না করার। আমি বিসিবির কোনো কর্মকর্তা নই। শুধুমাত্র খেলাটিকে ভালোবাসি বলেই এটা করে যাচ্ছি।’

সম্প্রতি ঢাকা লিগে সাকিব যা করেছেন তা বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য চরম বিব্রতকর। সেই ম্যাচে থাকতে না পেরে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছেন মনিরুজ্জামান, ‘আমার ভাগ্য ভালো যে সেই ম্যাচে ছিলাম না। কিন্তু কে জানে পরের ম্যাচে আমার সঙ্গেই না তেমনকিছু হয়। আগামীকালকের ম্যাচে কী ঘটবে এটা ভেবে করে আমি নিজের ঘুম নষ্ট করতে পারি না।’

মনিরুজ্জামানের আম্পায়ারিং ছাড়ার প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির এক কর্তা বলেছেন, ‘আমরা মনিরুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আর আম্পারিং করতে আগ্রহী নন। তিনি আমাদের কোনো কর্মকর্তা নন যে তার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা চাইব। কিন্তু আমি এটা বলতে পারি যে আম্পায়ার হিসেবে তার সামনে ভালো একটা ক্যারিয়ার ছিল।’

মনিরুজ্জামান নিজেও একসময় ক্রিকেটার ছিলেন। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাটসম্যান ভূমিকায় দেখা গেছে তাকে। কিন্তু খেলোয়াড় ভূমিকায় বেশিদূর এগোতে পারেননি তিনি। আম্পায়ার ভূমিকায় স্বপ্ন দেখছিলেন বড় কিছু করার। কার্যত তা স্বপ্নই থেকে গেল। ক্রিকেটারদের কারণে অকালে ঝরে গেলেন প্রতিভাবান আম্পায়ার মনিরুজ্জামান।