ইউরো ২০২০: বাজির দরে শীর্ষে ইংল্যান্ড

বড় কোনো টুর্নামেন্ট মানেই ফেভারিটের তকমা গায়ে জড়ানো। যদিও তকমটার সার্থকতা শেষ অবধি ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে থ্রি লায়নরা। চলমান ইউরো টুর্নামেন্টেও শিরোপা দৌড়ে এগিয়ে রাখা হচ্ছে দলটাকে। সেই দলটাই কিনা হোঁচট খেল স্কটল্যান্ডের সঙ্গে! ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে মিশন শুরু করা ইংলিশরা পরের ম্যাচে ঘরের মাঠে ড্র করেছে স্কটিশদের সঙ্গে।

ইংল্যান্ড ফুটবল দল

আসলে প্রত্যাশার চাপ বেশি হয়ে গেলে যা হয় আরকি। যেমনটা হয়েছিল গত বিশ্বকাপেও। শিরোপার আশা জাগিয়েও সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে যায় ইংল্যান্ড। সেই দুঃস্মৃতির ক্ষতে প্রলেপ দিতে পারে ইংলিশরা ইউরো জিতে। এ জন্য শক্তিশালী স্কোয়াড আছে। দলটিতে ভরসা করার মতো ফুটবলারের অভাব নেই। তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হ্যারি কেন।

তার নেতৃত্বেই এবারের ইউরোতে খেলছে ইংল্যান্ড। রক্ষণ, মধ্যমাঠ কিংবা ফরওয়ার্ড সবখানেই দলটির খেলোয়াড়রা নিজেদের ক্লাবে সেরা। তবে ইনজুরির কারণে ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার-আরনল্ডের ইউরো খেলা হলো না। এ নিয়ে অবশ্য উদ্বিগ্ন নয় ইংল্যান্ড। এই ডিফেন্ডারের অভাব পুষিয়ে দেওয়ার মতো ফুটবলারের অভাব নেই। দলটা স্বপ্ন দেখছে প্রথমবারের মতো ইউরো জয়ের।

স্কটল্যান্ডের কাছে হোঁচট খেয়েছে ইংল্যান্ড

কিন্তু স্বপ্নযাত্রায় স্কটল্যান্ডের কাছে হোঁচট খেয়েছে ইংল্যান্ড। যতটা দাপুটে ফুটবল খেলার কথা ছিল এখন অবধি তা পারেনি তারা। প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে কোনোরকমে হারিয়েছে তারা। পরের ম্যাচে তো স্কটল্যান্ডের জালের ঠিকানাই খুঁজে পায়নি। এর ফলে গ্রুপ টেবিলের দ্বিতীয়তে চলে গেছে তারা। আজ (২২ জুন) চেক প্রজাতন্ত্রকে হারাতে না পারলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না ইংলিশরা।

তাদের জন্য কাজটা কঠিন হতে পারে। ইংল্যান্ড শিবিরে হানা দিয়েছে করোনাভাইরাস। ইতোমধ্যে ডিফেন্ডার বেন চিলওয়েল ও মিডফিল্ডার ম্যাসন মাউন্টকে ১০ দিনের জন্য আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। যদিও পরীক্ষায় দুজনেই নেগেটিভ হয়েছেন। কিন্তু ঝুঁকি নিতে নারাজ এফএ। তবে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে গিয়ে চেক ম্যাচটার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিল ইংল্যান্ড।

প্রধান কোচ- গ্যারেথ সাউথগেট: ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের প্রধান কোচের পদ থকে সরে দাঁড়ান স্যাম অ্যালারডাইস। ভারপ্রাপ্ত কোচ হিসেবে সাউথগেটকে নিযুক্ত করে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করেন এই কোচ। পরবর্তীতে তাকে পাকাপাকিভাবে রেখে দেন ইংল্যান্ডের ফুটবলকর্তারা। বিশ্বকাপে দলকে সেমিফাইনালে তুলে তার প্রতিদান দিয়েছেন সাউথগেট।

দুর্ভাগ্যবশত ফাইনালে উঠতে পারেনি থ্রি লায়নরা। তিন বছরের মধ্যে ইংল্যান্ড দলটা আরো পরিণত হয়ে উঠেছে। দলে এসেছেন একঝাঁক প্রতিভাবান ফুটবলার। যা সাউথগেট ও ইংল্যান্ডের স্বপ্নপূরণের বড় নিয়ামক হতে পারে। ইংলিশ এই কোচের একটা দুঃখও আছে। ২৫ বছর আগে ইউরোর সেমিফাইনালে টাইব্রেকে জার্মানির বিরুদ্ধে পেনাল্টি মিস করেছিলেন সাউথগেট। খেলোয়াড় হিসেবে ব্যর্থ হওয়া এই কোচের জন্য এবারের ইউরো জেতা বিরাট চ্যালেঞ্জ।

প্রধান অস্ত্র- হ্যারি কেন: তুলনামূলকভাবে ইংল্যান্ড দলটা বেশ তরুণ। তাদের দলনেতা হ্যারি কেন। গত বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করেছিলেন ইংলিশ এই স্ট্রাইকার। জিতেছেন গোল্ডেন বুট। ইংল্যান্ডর প্রধান ভরসা তিনিই। যদিও এখন পর্যন্ত নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। প্রথম ম্যাচে রহিম স্টার্লিংয়ের একমাত্র গোলে ক্রোয়েশিয়াকে হারায় ইংল্যান্ড। পরের ম্যাচেও গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন কেন। আজ চেক প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষের ম্যাচটা তার জন্য জ্বলে ওঠার মঞ্চ হতে পারে।

তরুণ তুর্ক- জুডে বেলিংহাম: ইংল্যান্ড দলে তরুণদের মধ্যে অন্যতম বেলিংহাম। জার্মান বুন্দেসলিগায় বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের জার্সিতে গেল মৌসুমে আগুন ঝরিয়েছেন বেলিংহাম। চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে একটি গোল করেছিলেন। তার আরেকটি গোল বাতিল করে দিয়েছেন ম্যাচকর্তা। সেই ম্যাচটায় অবশ্য হেরে গেছে ডর্টমুন্ড। তবে নিজের জাত চিনিয়েছেন ১৭ বছর বয়সী বেলিংহাম। এবারের ইউরোতে বেলিংহাম আলাদাভাবেই নজরে এসেছেন।

সম্ভাব্য একাদশ: গোলরক্ষক: পিকফোর্ড; ডিফেন্ডার: জেমস, স্টোনস, ম্যাগুইরে, হোয়াইট; মিডফিল্ডার: বেলিংহাম, রিস, হ্যান্ডারসন; ফরওয়ার্ড: কেন, স্টার্লিং, ফোডেন।

সেরা সাফল্য: ৪

ফিফা র্যাঙ্কিং: তৃতীয়স্থান (১৯৬৮, ১৯৯৬)

ইংল্যান্ড ম্যাচসূচি

১৩ জুন: ইংল্যান্ড ১-০ ক্রোয়েশিয়া (লন্ডন; ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম)
১৮ জুন: ইংল্যান্ড ০-০ স্কটল্যান্ড (লন্ডন; ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম)
২২ জুন: ইংল্যান্ড-চেক প্রজাতন্ত্র (লন্ডন; ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম)