শক্তিশালী বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ: বাস্তবে রূপ নিচ্ছে ভারতের পরিকল্পনা
- Details
- by রবার্ট ফারলি
বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের সক্ষমতা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত। শক্তিশালী বাহিনী গঠনে সম্পদ ও অভিজ্ঞতা থাকলেও একটি নতুন যুদ্ধ জাহাজ তৈরি ও এর আকৃতি, বৈশিষ্ট্যসহ বেশকিছু বড় সিদ্ধান্তের সম্মুখীন দেশটি। একটি বিশাল বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ বর্তমানে সেবা দিচ্ছে এবং আরেকটি যুদ্ধজাহাজ নৌবাহিনীতে যুক্ত হওয়ার পথে। পরাশক্তির সক্ষমতা অর্জনে দেশটিতে বিমানবাহী রণতরীর কার্যক্রম কীভাবে শুরু হলো, এটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এবং যুদ্ধজাহাজে ভারতের ব্যাপক বিনিয়োগের কৌশলগত যুক্তি কী? - এ নিয়েই আজকের এই লেখা।
ভারতে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের রণতরীর শুরু: অর্থনৈতিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারত স্বাধীনতার পর থেকেই বিমানবাহী রণতরীর বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছে। চীন এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপরীতে ভারত সাবমেরিনের চেয়ে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের প্রতি মনোনিবেশ করেছে। দেশটিতে হালকা ধরনের রাজকীয় যুদ্ধজাহাজ আইএনএস বিকরান্ট ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সেবা দিয়েছে যা ১৯৭১ সালে সফলভাবে যুদ্ধ করেছে। অপর যুদ্ধজাহাজ আইএনএস বিরাট ১৯৮৭ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীতে যুক্ত হয় এবং ২০১৬ সাল পর্যন্ত সেবা দেয়। এই রণতরীগুলো ভারতীয় নৌবাহিনীকে যুদ্ধজাহাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা দিয়েছে।
পুরনো এই যুদ্ধজাহাজটি (আইএনএস বিরাট) দীর্ঘদিন চালিয়েছিল রয়্যাল নেভি। তারা এটিকে দ্বিতীয় যুদ্ধের সময় ব্যবহার করে। পরে তা ভারতের নৌবাহিনীর হাতে আসে। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে যুদ্ধজাহাজ বিরাট স্তিমিত হয়ে পড়ে। এরপর নতুন একটি যুদ্ধজাহাজ তৈরির পরিবর্তে ভারত রাশিয়ার তৈরি পুরনো যুদ্ধজাহাজ অ্যাডমিরাল গরস্কোভ কিনতে চায়। ১৯৯০ সালের পর্যন্ত গরস্কোভ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। ভারত এটি ব্যাপক সংস্কারের জন্য দুই বিলিয়ন ডলার খরচ করে।
২০১৪ সালে এটি ভারতীয় নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়। নতুন নাম হয় আইএনএস বিক্রমাদিত্য। ৪৫ হাজার টন ওজনের বিক্রমাদিত্য ২০টি মিগ-২৯কে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার বহন করতে সক্ষম হয়। যুদ্ধজাহাজ বিরাটের পর এটি ব্যাপক খরচ ও সেবাপ্রদানের সমস্যা সত্ত্বেও ভারতীয় নৌবাহিনীকে ব্যাপক শক্তি বৃদ্ধি ও নতুন মাত্রা যোগ করে।
ভারতীয় নৌবাহিনীকে পুনর্গঠনের প্রথম পদক্ষেপ ছিল বিক্রমাদিত্য। দ্বিতীয় পদক্ষেপ ছিল নতুন আইএনএস বিকরান্ট। ৪০ হাজার টন ওজনের এই ‘স্কাই-জাম্প’ যুদ্ধজাহাজটি ভারতের কাচিন শিপইয়ার্ডে নির্মাণ করা হয়। ২০০৯ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হলেও প্রত্যাশা করা হয় বিক্রমাদিত্যের মতো ‘এয়ার উইং’ যুক্ত যুদ্ধজাহাজটি ২০২০ সালে সেবায় যুক্ত হবে। এটি তৈরির প্রক্রিয়ায় বেশকিছু বিঘ্ন ঘটেছে যেগুলোর অধিকাংশই প্রথমবারের মতো যুদ্ধজাহাজ তৈরির ক্ষেত্রে সমস্যা হিসেবে ধরা হয়েছিল।
সু-৩৩, এফ/এ-১৮ বা ড্যাসল্ট র্যা ফল’র বাদে আপাতত মিগ-২৯কে যুদ্ধবিমানই রণতরীতে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। বোয়িং এবং ড্যাসল্ট উভয়েই ভারতে রণতরীজাত যুদ্ধবিমান রপ্তানিতে কিছুটা আশাবাদী। এমনকি স্যাবও যুদ্ধবিমান গ্রিপেন ভারতীয় নৌবাহিনীতে সংযুক্ত করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। ভারতীয় নেভিও হাল টেজাস বিমানকে রণতরীতে যুক্ত করার চিন্তা করেছিল। তবে তারা ব্যাপক জটিল প্রক্রিয়ায় উগ্র এই যুদ্ধবিমানকে রণতরীতে যুক্ত করার সিদ্ধান্তকে বুদ্ধিমানের মতো পরিহার করেছে।
কৌশলগত মূলনীতি ভারতীয় রণতরী বাহিনী এ ব্যাপারে তিনটি যুক্তি দাঁড় করিয়েছে। প্রথমটি হলো- রীতিসম্মত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য যা পাকিস্তানের নৌ সম্পদ ও স্থলঘাঁটিতে অভিযান পরিচালনা করা যাবে। দূর্ভাগ্যজনকভাবে রণতরীর অতিরিক্ত ওজনের কারণে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে বিরাট ও বিক্রমাদিত্যকে বেশ বেগ পোহাতে হবে আর তা নিশ্চিতভাবেই পাকিস্তানের নজরে এসেছে।
দ্বিতীয়ত, রণতরীগুলো ভারত মহাসাগরে ভিনদেশি প্রতিযোগী ও শত্রুর বিরুদ্ধে ভারতীয় নৌবাহিনীর দাপট ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। ভারত মহাসাগরে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যর চেয়ে আরও বেশি ক্ষমতা ও সুবিধা পাবে ভারত। এ ছাড়া বাণিজ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে সুযোগ তৈরি হবে।
তৃতীয়টি হলো- চীনের বিরুদ্ধে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবেলা। দ্বিতীয় বৃহৎ রণতরী কমিশনিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে চীন তুলনামূলকভাবে কম সময়ের মধ্যে ভারতের নৌ-বিমানের উৎকর্ষতাকে ছাড়িয়ে গেছে। যদিও রণতরীর অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে চীনের অভিজ্ঞতা কম রয়েছে তবুও দক্ষ জাহাজ নির্মাণ শিল্প এবং অভিজাত বিমান সেক্টরের কারণে দম্ভ প্রকাশ করে চীন। যা তাদেরকে বিদেশি প্রযুক্তির ওপর কম নির্ভর করে তুলেছে। যদিও চীনের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে পেরে উঠতে ভারতে সংগ্রাম করা লাগতে পারে। তবে ভৌগলিক নৈকট্যের ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে ভারত।
ভারতের নৌবাহিনীর কাছে প্রত্যাশা: ভারতের নৌ-বিমান প্রজেক্টের পরবর্তী ধাপ হলো আইএনএস বিশাল। প্রচলিত পদ্ধতিতে চালিত ৬৫ হাজার টন ওজনের ক্যাটোবার (ক্যাটাপাল্ট অ্যাসিস্টেড টেক-অফ বাট অ্যারেস্টেড) রণতরী এটি। বিকরান্টের থেকে অভিজ্ঞতার আলোকে এর ডিজাইন ও নির্মাণশৈলী আরও সুচারুভাবে করা হবে আশা করা যায়। বিশালের ক্ষেত্রে ভারত নজিরবিহীন মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। যার মধ্যে রয়েছে ইএমএএলএস ইলেক্ট্রোম্যাগননেটিক ক্যাটাপাল্ট সিস্টেম, যা জেরাল্ড আর ফোর্ড’র ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশাল দুর্ধর্ষ যুদ্ধবিমান পরিচালনা করতে পারবে। আশা করা যায় ২০৩০ সালের মধ্যে বিশাল সেবায় যুক্ত হতে পারবে।
সাম্প্রতিক সময়ে গুজব উঠেছে, ভারত এফ-৩৫ জয়েন্ট স্ট্রাইটক ফাইটার ধরনের বিমান কেনার চেষ্টা করছে। এর ফলে ভারতকে ব্যাপক শুল্কের বোঝা টানতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৃহৎ চুক্তি সাধন করতে হবে। এখন পর্যন্ত এফ-৩৫সি বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক রণতরী বিমান এবং আইএনএস বিশাল এটি নিশ্চিতভাবে পরিচালনা করতে পারবে।
পরবর্তী ধাপ: ২০৩০ সালের গোড়ার দিকে তিনটি রণতরী চালুর চিন্তা রয়েছে ভারতের। এর পরবর্তী ধারপ হবে আইএনএস বিক্রমাদিত্যকে প্রতিস্থাপন করা। যদিও এটি এখন হালকাভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর বাইরের কাঠামো ৩০ বছরের পুরনো। এটি অন্য দুটির মতো সক্ষম হবে না।
যদি বিশাল সবমিলিয়ে গ্রহণযোগ্য হয় তবে ভারতের কাজ হবে এরকমই আরও রণতরীর নির্মাণ করা যা নির্মাণ দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে। যদিও ভারতীয় নৌবাহিনী নিউক্লিয়ার প্রচলনের ধারণা দিয়েছে। তবে সত্যিকারভাবে নিউক্লিয়ার রণতরীর প্রয়োজন নেই। কৌশলগতভাবে নৌবাহিনীর কাজ হবে বিষয়টি নিজেদের মধ্যে রাখা।
রবার্ট ফারলি: দ্য ব্যাটলশিপ বুক বইয়ের লেখক এবং ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’র নিয়মিত কন্ট্রিবিউটর
সূত্র: দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.