ইউরো ২০২০: ইউক্রেনের বৃত্ত ভাঙার চ্যালেঞ্জ

সাম্প্রতিক বছর ধরে বাজে সময় কাটছে ইউক্রেনের। ২০১৬ ইউরোতে কোনো পয়েন্টই পায়নি দলটি। আরো হতাশার কথা হচ্ছে, গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচের একটিতেও গোল করতে পারেনি তারা। যা অনেকের কাছেই বিস্ময়কর ঠেকেছিল। দুঃস্বপ্নের একটা টুর্নামেন্টের পরও নিজেদের ফিরে পায়নি তারা। এখনো উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন।

তাদের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দিয়েছে সার্বিয়া। ২০১৯ সালের জুনে ইউক্রেনকে ৫-০ গোলে চূর্ণ করে তারা। যা সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভক্তির পর দলটির সবচেয়ে বিপর্যস্ত হার। উয়েফা নেশনস লিগটা একদম বাজে কেটেছে তাদের। ২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইতেও সুবিধা করতে পারছে না ইউক্রেন। এক সময়কার জায়ান্ট দলের এমন কঠিন সময় ডেকে নিয়ে এসেছে তাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা।

কয়েক বছর ধরে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ভালোই যুদ্ধের মহড়া দিয়েছে তারা। এবারের ইউরোতেও সেই শীতল যুদ্ধ টেনে নিয়ে এসেছে ইউক্রেন। নিজেদের জার্সিতে বিতর্কিত ক্রিমিয়াার সীমান্ত একেঁ এবং সেনা স্লোগান দিয়ে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে তারা। তাতে ক্ষেপে আগুন ক্রিমিয়া রাজ্যের দখলে থাকা রাশিয়া।

ইউক্রেনকে জার্সি পরিবর্তনের জন্য উয়েফার কাছে নালিশ জানায় তারা। যদিও রাশানদের পুরো আবেদন শোনেনি উয়েফা। ইউক্রেনকে জার্সি থেকে কেবল ‘রাজনৈতিক’ স্লোগান সরাতে বলেছে তারা। মাঠের বাইরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করা ইউক্রেন ভেতরেও দারুণ কিছু করতে চায়। টুর্নামেন্টে ভালোকিছু করতে আপাতত ইতিবাচক মেজাজে আছে তারা। গত দুই আসরে গ্রুপপর্বে বিদায় নেওয়া দলটার জন্য মূল চ্যালেঞ্জ বৃত্ত ভাঙার। 

প্রধান কোচ - আন্দ্রে শেভচেঙ্কো: ইউক্রেনের সর্বকালের সেরা ফুটবলার বলা হয় আন্দ্রে শেভচেঙ্কোকে। খেলোয়াড় ভূমিকায় নিজেকে প্রমাণ করে নির্বাসনে চলে যান তিনি। ২০১২ ইউরোর পর অবসর নেন শেভা। পরে কোচিংয়ের মাধ্যমে ফুটবলে ফিরে আসেন এসি মিলানের এই কিংবদন্তি। ২০১৬ ইউরোর পর দায়িত্ব নেন জাতীয় দলের। তার অধীনে ভালো-মন্দ মিলিয়ে চলছে ইউক্রেনিয়ানরা। তবে এবারের ইউরোতে সেরাটা দিতে মরিয়া ইউক্রেন।

প্রধান অস্ত্র - ওলেকসান্দ্র জিঙ্কেঙ্কো: ২০১৬ সালে প্রথম ফুটবলার হিসেবে ম্যানচেস্টার সিটিতে জিঙ্কোকে নিয়ে আসেন পেপ গার্দিওলা। যিনি খেলতেন লিভারপুলে। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ মৌসুমে সিটির হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন তিনি। যে কোনো মুহূর্তে রণকৌশলের ছক পরিবর্তন করতে জিঙ্কেঙ্কোর আলাদা গুরুত্ব আছে। একাধারে রক্ষণ এবং মধ্যমাঠ দুই বিভাগেই পারফর্ম করতে পারেন তিনি।

তরুণ তুর্কি - ইলিয়া জাবারনি: ইউক্রেনের শীর্ষস্থানীয় ঘরোয়া লিগে গত মৌসুমে অভিষেক হয় ইলিয়া জাবারনির। পেশাদার ক্যারিয়ারের প্রথম মৌসুমেই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ১৮ বছর বয়সী এই তরুণ। তার কাছ থেকে প্রায় শতভাগ বের করে এনেছিলেন কিভ কোচ মিরসেয়া লুসেস্কু। ক্লাবের দুর্দান্ত ফর্মটা ইউরোতেও বয়ে আনতে চান জাবারনি। বয়স কম হলেও এই তুর্কিই ইউক্রেনের রক্ষণ সামলাবেন শুরু থেকে।

গ্রুপপর্ব: ইউক্রেনের গ্রুপটা তাদের জন্য বেশ কঠিন। ‘সি’ গ্রুপে তাদের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রিয়া ও নেদারল্যান্ডস এবারের ইউরোর স্বাগতিক দেশগুলোর দুটি। তাই গ্রুপপর্বে দুটো দলের মঠে গিয়ে খেলতে হবে ইউক্রেনকে। প্রতিপক্ষের মাঠে জয় তাদের জন্য সহজ হবে না। তবে উত্তর মেসিডোনিয়ার বিপক্ষে জয় প্রত্যাশা করতেই পারে ইউক্রেনিয়ানরা।

সম্ভাব্য একাদশ - গোলরক্ষক: বুসচান, ডিফেন্ডার: কারাভায়েভ, জাবারনি, মাতভিয়েঙ্কো, সোবল; মিডফিল্ডার: মাকারেঙ্কো, জিঙ্কেঙ্কো, মালিনভস্কি; ফরওয়ার্ড: ইয়ারমোলেঙ্কো, ইয়ারেমচুক, সাইহাঙ্কোভ

সেরা সাফল্য: গ্রুপপর্ব (২০১২, ২০১৬)

ফিফা র্যাঙ্কিং: ২৪

ইউক্রেন ম্যাচসূচি:

১৩ জুন: নেদারল্যান্ডস-ইউক্রেন (ইয়োহান ক্রুইফ স্টেডিয়াম; অ্যামস্টারডাম)
১৭ জুন: ইউক্রেন-উত্তর মেসিডোনিয়া (এরিনা ন্যাশনালা, বুখারেস্ট)
২১ জুন: ইউক্রেন-অস্ট্রিয়া (এরিনা ন্যাশনালা, বুখারেস্ট)