ইউরো ২০২০: ইউক্রেনের জার্সি দেখে ক্ষেপে আগুন রাশিয়া

আগামী শুক্রবার শুরু হচ্ছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২০। টুর্নামেন্টকে আসন্ন রেখে সম্ভাব্য সবরকম প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে অংশগ্রহণকারী দলগুলো। তাদের মধ্যে একটি ইউক্রেন। এবারের আসরে শিরোপা জয়ে দলটি ফেভারিট না হলেও বড় দলের স্বপ্ন ভেঙে দেওয়ার মতো সামর্থ্য আছে তাদের।

ইউক্রেনের প্রস্তুতি ভালোই হয়েছে। মঙ্গলবার গা গরমের ম্যাচে সাইপ্রাসকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে দলটি। কিন্তু বড় জয় নয়, হঠাৎ করেই ইউক্রেন আলোচনায় এলো অন্য ইস্যুতে। ইস্যুটা একেবারেই রাজনৈতিক। আসন্ন ইউরো টুর্নামেন্টের জন্য ইউক্রেনিয়ানরা যে জার্সি তৈরি করেছে তা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।

বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ক্রিমিয়া। যা একসময় রাশিয়া সরকার প্রধান ইউক্রেনকে ‘উপহার’ দেয়। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখলে নেয় রাশিয়া। পরবর্তীতে বিচ্ছিন্ন রাজ্যটি স্বাধীনতা চেয়ে লড়াই করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তাতে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। যদিও এখন পর্যন্ত জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মহল তাদের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়নি।

আন্তর্জাতিক মহল ও জাতিসংঘ ক্রিমিয়া উপদ্বীপটিকে এখনো ইউক্রেনের রাজ্য হিসেবে দেখছে। স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ক্রিমিয়ায় গণভোটের আয়োজন করা হয়। তখন ৯৬.৬ শতাংশ ভোটার ইউক্রেনে না থেকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ভোট দেয়। গণভোটে রাশিয়ার প্রচ্ছন্ন ছায়া ছিল বলে অভিযোগ করে ইউক্রেন।

বিচ্ছিন্ন এই রাজ্যটি নিয়ে বহু বছর রাশিয়া-ইউক্রেনের কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল চলছে। একটা পর্যায়ে তো দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছিল! কয়েক বছর পর ফের ক্রিমিয়া আলোচনায় এলো ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্ট দিয়ে। আসন্ন ইউরোতে ইউক্রেন নিজেদের জার্সির সামনের দিকে সীমান্ত এঁকে দিয়েছে।

ইউক্রেনের মানচিত্রের ওই রেখার মধ্যে আছে বিতর্কিত ভূখণ্ড ক্রিমিয়া। এতে করে ইউরো টুর্নামেন্টে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক যুদ্ধের অনুপ্রবেশ ঘটল। খুব স্বাভাবিকভাবেই ক্ষেপে আগুন হলো রাশিয়া। ইউক্রেনের ইউরো জার্সি নিয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়েছে তারা। ক্ষোভ প্রকাশ করে ইউক্রেনের শাস্তি চেয়ে উয়েফার কাছে আবেদন করেছে রাশিয়া।

বরাবরের মতোই ইউক্রেনের জার্সিতে নীল ও হলুদ রঙের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাদা রঙ। সেই সাদা অংশেই ইউক্রেনের মানচিত্র দেখানো হয়েছে। ইউক্রেনের সীমান্তের মধ্যে বিতর্কিত উপদ্বীপ ক্রিমিয়াকেও উপস্থাপন করেছে ইউক্রেনিয়ানরা। আর জার্সিতে তারা লিখেছে, ‘গ্লোরি টু ইউক্রেন’ ও ‘গ্লোরি টু হিরোজ’। যা ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর স্লোগান।

বিতর্কিত এই জার্সি নিয়ে ইউক্রেন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আন্দ্রিভ পাভেলকো বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্বাস ইউক্রেনের সীমান্তের প্রতিচ্ছবি জার্সিতে থাকলে খেলোয়াড়দের শক্তি বাড়বে। কারণ তারা পুরো দেশের জন্য লড়াই করবেন।’ গেল রোববার এক ভিডিও বার্তায় ইউরোতে নিজেদের জার্সি উন্মোচন করে ইউক্রেন ফুটবল ফেডারেশন।

এই জার্সি প্রসঙ্গে রাশিয়ার অ্যাসেম্বলি দুমার ডেপুটি দিমিত্রি স্বিশচেভ বলেছেন, ‘সাত বছর ধরে ক্রিমিয়া রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ড। কাজেই ইউক্রেনের জার্সিতে যে নকশা করা হয়েছে তা অযৌক্তিক। আমি নিশ্চিত এ ব্যাপারে উয়েফা কঠোর পদক্ষেপ নেবে। ইউরোর জন্য নতুন জার্সি তৈরি করার মতো সময় এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।’

অবশ্য উয়েফার অনুমোদন নিয়েই নতুন জার্সি উন্মোচন করেছে ইউক্রেন। এক বিবৃতিতে উয়েফার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই জার্সি ইউক্রেনিয়ান জাতীয় দলের (এবং অন্যসব দলের জার্সি), উয়েফা ইউরো ২০২০ এর জন্য অনুমোদন দিয়েছে উয়েফা। প্রযোজ্য সরঞ্জামের বিধিবিধান অনুযায়ী এটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’

আসন্ন ইউরোতে ‘বি’ গ্রুপে খেলবে রাশিয়া। গ্রুপে তাদের তিন প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম, ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ড। আর ‘সি’ গ্রুপে আছে ইউক্রেন। গ্রুপে তাদের তিন প্রতিদ্বন্দ্বী যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়া ও উত্তর মেসিডোনিয়া।