সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে একঝাঁক তরুণ ফুটবলার দলে টেনেছে চেলসি। তাদের মধ্যে অন্যতম কাই হাভার্টজ। এর সুফলটা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ ও লিগ কাপে পেয়েছে চেলসি। বাকি ছিল উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ। ইউরোপিয়ান শীর্ষস্থানীয় এই প্রতিযোগিতায় যেন রাহুর দশা লেগেছিল জার্মান তারকার ওপর। অবশেষে কেটে গেছে অমানিশা।

chelsea mancity

হাভার্টজ গোল পেলেন চ্যাম্পিয়নস লিগে। ইউরোপিয়ান এলিট ক্লাবে প্রতিযোগিতায় এটাই প্রথম গোল তার। এই গোলটা এতটাই মহামূল্যবান যে, শিরোপা নির্ধারণ হয়েছে তাতে। শনিবার রাতে ‘অল ইংল্যান্ড ইউরোপিয়ান ফাইনালে’ হাভার্টজের গোলে বাজিমাত করেছে চেলসি। ম্যানচেস্টার সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়ে পশ্চিম লন্ডনের ক্লাবটি জিতল স্বপ্নের দ্বিতীয় রুপালি ট্রফি।

চ্যাম্পিয়নস লিগে এটা চেলসির তৃতীয় ফাইনাল। প্রথমবার তীরে এস তরি ডুবিয়েছিল পশ্চিম লন্ডনের ক্লাবটি। ফাইনালে হেরে যায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে। ২০০৮ সালে স্বপ্নপূরণ হয় তাদের। থ্রিলার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ব্লুজরা। তৃতীয় ফাইনাল ও দ্বিতীয় শিরোপার জন্য চেলসিকে অপেক্ষা করতে হলো এক যুগেরও বেশি সময়।

অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার সুফল পেল ইংলিশ জায়ান্টরা। এবার ম্যানচেস্টার দুঃস্বপ্ন নয়। এ জন্য চেলসি মালিক রোমান আব্রামোভিচ ধন্যবাদ দিতে পারেন টমাস টুখেলকে। গেল জানুয়ারিতে ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে সরিয়ে জার্মান কোচকে নিয়োগ দেন রাশান ধনকুবের। টুখেলের ছোঁয়ায় বদলে যায় ধুঁকতে থাকা চেলসি। আব্রামোভিচের আস্থার ‘শেষ’ প্রতিদান দেন টুখেল; ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফাইনালে জিতলেন নিজের প্রথম শিরোপা।

chelsea logo new

গত মৌসুমেও ফাইনালের মঞ্চে ছিলেন তিনি। কিন্তু ওই আসরে ন্যূনতম ব্যবধানে হেরে যায় টুখেলের দল প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। সেই ফাইনালের আরেকজন ছিলেন কালকের ফাইনালের মঞ্চে। তিনি থিয়াগো সিলভা। এই মৌসুমেই ফ্রি ট্রান্সফারে চেলসিতে যোগ দিয়েছেন তিনি। শিরোপা জিততে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডারে অবদান অনস্বীকার্য। টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত খেলেছেন ২৬ বছর বয়সী তারকা।

অথচ ভাগ্যের কী পরিহাস, পোর্তোর ফাইনালে এসেই পুরনো কুঁচকির ইনজুরিতে পড়েন সিলভা। ম্যাচের বয়স তখন ৩৮ মিনিট। সিটি স্ট্রাইকার ফিল ফোডেনের মাথার ওপর লাফ দিয়ে হেডে বল বিপদমুক্ত করেন সিলভা। তখনই মাটিতে পরে চোট পান তিনি। মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েও কাজ হলো না। বেঞ্চে বসে তখন হতাশ সিলভা জার্সিতে মুখ লুকানোর চেষ্টা করেন। দারুণ খেলতে থাকা চেলসি একটা বড় ধাক্কাই খেল।

এই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে পশ্চিম লন্ডনের ক্লাবটি। সেরা ডিফেন্ডারকে হারানোর পরের মিনিটেই গোল করে বসেন হাভার্টজ। উল্লাসে মেতে ওঠে চেলসি। সিলভার মুখে ফুটল আনন্দের হাসি। হাসিটা শেষ পযন্ত চওড়া থাকল। গোলটার আর শোধ দিতে পারেনি সিটি। তবে ম্যাচের বাকি সময়ে সিটির দুরন্ত আক্রমণবিভাগের বিরুদ্ধে ভালোই পরীক্ষা দিতে হলো চেলসি ডিফেন্ডারদের।

চেলসি গোলটা করেছে প্রতিআক্রমণ থেকে। গোলরক্ষক মেন্ডি বাড়ানো বল মাঝমাঠে পেয়ে যান ম্যাসন মাউন্ট। তার থ্রু খুঁজে পায় চিতার বেগে ছোটা হাভার্টজ। ততক্ষণে ডি-বক্স ছেড়ে বাইরে চলে আসেন সিটি গোলরক্ষক এডারসন। সেটারই মাসুল দিতে হলো ব্রাজিলিয়ন তারকা ও তার দলকে। এডারসনকে টপকে বল নিয়ে ফাঁকায় চলে আসেন জার্মান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার; অনায়েসেই খুঁজে নেন জালের ঠিকানা।

manchester city logo 1

এই গোলে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললেন বায়ার লেভারকুজেনের প্রাক্তন তারকা। চ্যাম্পিয়নস লিগের কুড়িতম ম্যাচে এসে স্বপ্নের প্রথম গোলের দেখা পেলেন হাভার্টজ। সমতায় ফিরতে মরিয়া সিটি অবশ্য গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল। কিন্তু তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন জেসুস-স্টার্লিং-অ্যাগুয়েরোরা। গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ খেলা কেভিন ডি ব্রুইনেও।

কালকের ফাইনালে ‘ফলস নাইনে’ খেলেছিলেন বেলজিয়ান মিডফিল্ডার। কিন্তু সিটি কোচ গার্দিওলার এই ফটকা কাজে আসেনি। দ্বিতীয়ার্ধে একের পর এক খেলোয়াড় বদলি করেও ম্যাচের ভাগ্য নিজেদের অনুকূলে আনতে পারেননি স্প্যানিশ কোচ। বরং ৫৫ মিনিটে অ্যান্তনি রুদিগারের ট্যাকলে চোটে পরে সিটির স্বপ্নের বজ্রাঘাত দেন ডি ব্রুইনে। ইনজুরি ও অশ্রু নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।

ম্যাচের শেষ দিকে রক্ষণাত্মক কৌশলের আশ্রয় নেন চেলসি কোচ টুখেল। ফরওয়ার্ডদের তুলে ডিফেন্ডারদের মাঠে নামান। ওদিকে সিটি কোচ গার্দিওলা মাঠে নামান জেসুস, অ্যাগুয়েরোদের। রহিম স্টার্লিং, ফিল ফোডেনদের মতো নিরাশ করেছেন তারাও। গোলের যথেষ্ঠ সুযোগ হাতছাড়া করেছে চেলসিও। তাতে অবশ্য ক্ষতি হয়নি তাদের। কাজের কাজটা যে হাভার্টজ করে ফেলেছেন!

সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে এনিয়ে চেলসির কাছেই তৃতীয়বার হারল ম্যানচেস্টার সিটি। অথচ এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে হট ফেভারিটের তালিকায় শীর্ষে ছিল সিটিজেনরা। কে জানতো প্রিমিয়ার লিগ প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে স্বপ্ন জমা দিয়ে আসতে হবে। পাঁচ মাস আগেও এই চেলসির পক্ষে বাজি ধরার লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ছিল। যে দলটা ইংলিশ লিগের আট নম্বরে নেমে গিয়েছিল। এক টুখেল নামক জিয়নকাঠিতে বদলে গেল চেলসি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.