মুশির ব্যাটে দুঃখ ঘুচল

একদিনের ক্রিকেটে কয়েকবারই শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সিরিজে দলটা জুজু হয়ে উঠেছিল টাইগারদের কাছে। আটটি সিরিজ খেলে ছয়টিতেই পেতে হয়েছে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ। ড্র হয়েছে বাকি দুটো। অবশেষে অপেক্ষার অবসান হলো। মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ঘুচল দুঃখ। প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজে লঙ্কানদের হারাল বাংলাদেশ।

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ৩৩ রানে হারিয়েছে টাইগাররা। আজ একই ভেন্যুতে বৃষ্টিভেজা দ্বিতীয় ওয়ানডেতে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে স্বাগতিক শিবির জিতল আরো বড় ব্যবধানে। ইতিহাস গড়া জয়টা ডাক-ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে; ১০৩ রানের। এই জয়ে আইসিসি ওয়ানডে লিগের শীর্ষে উঠে গেল বাংলাদেশ। একই সঙ্গে এক ম্যাচ হাতে রেখে জেতা হলো সিরিজ। আগামী শুক্রবার হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্যে মাঠে নামবে তামিম ইকবালের দল।

ম্যাচ ও সিরিজ জয়ের নায়ক মুশফিক। দুই ম্যাচেই জ্বলে উঠেছেন খর্বশক্তির এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরির আভাস নিয়ে ফিরে গেছেন সাজঘরে। আজ ঠিকই প্রত্যাশিত তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়েছেন মুশি। তার শতকের ওপর দাঁড়িয়ে ২৪৬ রান তুলেছে বাংলাদেশ। ১১ বল বাকি থাকতে অলআউট হয়েছে টাইগাররা। জবাব দিতে নেমে পুঃননির্ধারিত ৪০ ওভারে নয় উইকেটে ১৪১ রান তুলতে সক্ষম হয় লঙ্কানরা।

বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পেয়েছে মুশফিকের ব্যাটের ওপর দাঁড়িয়ে। টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামা টাইগাররা এদিনও ভুগল ইনিংসের শুরুতে। এক প্রান্ত আগলে রেখে আগা-গোড়া লড়াই চালিয়ে গেলেন মুশি। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে রানস্রোত বইয়ে দিয়েছেন ব্যাটে। ১২৫ রানের ঝলমলে ইনিংসে কোনো ছক্কা নেই; তবে চার মেরেছেন ১০টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪১ রান এসেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাট থেকে।

৭৪ রানে চার উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন দিশেহারা তখন পথ দেখান মিডল অর্ডারের অভিজ্ঞ এই দুই ব্যাটসম্যান। পঞ্চম উইকেটে গড়েন প্রতিরোধ। ৮৫ রানের জুটি ভাঙে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে। এরপর আরেক দফা আসা-যাওয়ার মিছিল ব্যাটসম্যানদের। মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন যদিও ১১ রান করেছেন কিন্তু মাটি কামড়ে তার উইকেটে পরে থাকার তাৎপর্য অনেক। এ সময়ে নির্ভার ব্যাটিং করেছেন মুশি।

লোয়ার অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান খুলতে পারেননি রানের খাতা। তন্মধ্যে আছেন অভিষিক্ত শরিফুল ইসলাম। এই ত্রয়ী সাকিব আল হাসানের পদাঙ্ক অনুরকণ করেছেন। ওপেনার তামিম ফিরেছেন ১৩ রানে। যাকে নিয়ে সম্প্রতি বেশ চর্চা চলছে সেই লিটন দাস আজ আউট হলেন উইকেটে থিতু হওয়ার পর। দলীয় তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৫ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। এ ছাড়া মোসাদ্দেক ও আফিফ হোসেন সমান ১০ রান করেছেন।

বাংলাদেশের ইনিংস জুড়ে ভুগিয়েছে বৃষ্টি। অবশ্য ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব যে ম্যাচে থাকবে এটা অনুমিতই ছিল। দফায় দফায় বৃষ্টি দেখল বাংলাদেশের ইনিংস। তবু ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমল না। বাংলাদেশও টিকতে পারল না শেষ পর্যন্ত। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে গুটিয়ে গেল টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার পক্ষে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন দুষ্মন্ত চামিরা ও লাকসান সান্দাকান। দুটি শিকার ইসুরু উদানার।

বাংলাদেশের মতো শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ততটা ভোগায়নি বৃষ্টি। তবে রান ন’টার পর শুরু হওয়া বৃষ্টি লঙ্কানদের অলআউটের সময়টা কেবল দীর্ঘায়িত করেছে। লঙ্কানদের ‍শুরু ও শেষটা হলো একই রকম। ২৪৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে তাদের অবস্থা বাংলাদেশের মতোই ভঙ্গুর। ৭৭ রানে রানে হারায় চার উইকেট। এই ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেনি অতিথি শিবির। আগের ম্যাচের কেউ ভয়ও দেখাতে পারেনি টাইগারদের।

প্রথম ওয়ানডের শ্রীলঙ্কার ইনিংসের শেষ দিকে বাংলাদেশকে ভালোই ভুগিয়েছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। আজ তাকে ছ’ রানেই ফিরিয়ে দিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। আগের ম্যাচে চার উইকেট নেওয়া এই স্পিনার আজ নিলেন তিনটি। ১০ ওভারে দিয়েছেন ৩৮ রান। তবে বোলিং ইনিংসের মূল নায়ক মুস্তাফিজুর রহমান; এদিন হাজির হলেন আরো বিধ্বংসীরূপে। ছয় ওভারে মেডেনসহ ১৬ রানে মুস্তাফিজ নিলেন তিন উইকেট।

ব্যাট হাতে সিরিজে নিষ্প্রভ থাকা সাকিব কিছুটা পুষিয়ে দিয়েছেন বল হাতে। তার শিকার দুটি। তবে পাদ প্রদীপে এসেছেন শরিফুল। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে এক উইকেট নিলেও প্রথম পাঁচ ওভারে বল হাতে থাকলেন যথেষ্ট মিতব্যয়ি। পাঁচ ওভারে ১৭ রান দিলেন তিনি। শেষ ওভারে দিয়েছেন ১৩। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে এদিনও উইকেট পাননি তাসকিন আহমেদ। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে সাদামাটা বোলিং করলেন ডানহাতি এই পেসার।

বাংলাদেশের বোলারদের তোপে ২৫ রানও করতে পারেননি শ্রীলঙ্কার কোনো ব্যাটসম্যান। তবে প্রথম সাত ব্যাটসম্যানই ছুঁয়েছেন দুই অংক; আউট হয়েছেন উইকেটে থিতু হয়ে। শেষের ক’জন এলেন আর গেলেন। তাদের আসা-যাওয়ার মিছিল থামায় বৃষ্টি। ১২৬ রানে নয় উইকেট খুইয়ে লঙ্কানদের যখন শোচনীয় অবস্থা তখনই ফের বৃষ্টি। ৩৮তম ওভার শেষে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। তাতে অলআউট ঠেকিয়েছে লঙ্কনারা। অপেক্ষা বেড়েছে বাংলাদেশের।

দানুসকা গুনাথিলাকা অতিথিদের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৪ রানে আউট হন। আরেক ওপেনার, উইকেটরক্ষক ও অধিনায়ক কুশল পেরেরা ফিরেছেন ১৪ রানে। তিনে নেমে কুড়ি রান দেখিয়েছে পাথুম নিসাঙ্কার ব্যাট। কুশল মেন্ডিস ও আশেন বান্ডারা সমান ১৫ রানে ফিরেছেন। এ ছাড়া ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ১০ ও দাসুন সানাকা ১১ রানে আউট হয়েছেন। পরের চার ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ১৮ রান করেন ইসুরু উদানা। ম্যাচের শেষ ওভারে শরিফুলকে জোড়া ছক্কা মারেন তিনি।

বৃষ্টি থামার পর ‍দুই ওভারে ১১৯ রানের অসম্ভব লক্ষ্য পায় শ্রীলঙ্কা। ৩৯তম ওভারে দুই রান করে শ্রীলঙ্কা। শেষ ওভারের ঝড়ে ১৩ রান করে দলের পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনেন উদানা।