এমন জয়েও রানার্সআপ রিয়াল মাদ্রিদ!

পরাজয় চোখ রাঙাচ্ছিল। ম্যাচের শেষ দিকে পাঁচ মিনিটের জাদুতে ভোজবাজির মতো সবকিছু পাল্টে দিল রিয়াল মাদ্রিদ। পিছিয়ে থেকেও ভিয়ারিয়ালের বিরুদ্ধে ২-১ গোলের নাটকীয় জয় পেল জিনেদিন জিদানের দল। অন্য যে কোনো সময় হলে এমন একটা জয়ের পর উৎসবে মেতে উঠতো রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট যে একেবারেই আলাদা!

জিতেও লাভ হলো না রিয়াল মাদ্রিদের। কারণ ভাগ্য তাদের হাতে ছিল না। শনিবার রাতে অন্য ম্যাচে জয় পেয়েছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। তাতেই সাত বছর পর স্প্যানিশ লা লিগার চ্যাম্পিয়ন হলো ডিয়েগো সিমনের দল। রানার্সআপ হলো রিয়াল মাদ্রিদ। তাদের জয়টার কোনো মূল্য রইল না তাতে। রিয়ালের জন্য সান্ত্বনা- নিজেদের কাজটুকু করেছে তারা।

ম্যাচ শেষে মার্সেলোসহ রিয়ালের কয়েকজন ফুটবলার মাটিতে বসে পড়লেন। তাদের চেহারা হয়ে উঠল যুদ্ধবিধ্বস্ত পরাজিত সৈনিকের মতো। নাটকীয় জয়ের তৃপ্তি নেই কারোর মুখে। তবে আশা জেগেছিল রিয়ালেরও। একই সময়ে শেষ হওয়া অন্য ম্যাচে হারতে পারতো অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। রিয়ালের মতো তারাও অবশ্য পিছিয়ে থেকেও জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।

অ্যাটলেটিকো গোল হজম করেছে ১৮ মিনিটে। দুই মিনিট পর রিয়াল মাদ্রিদ। রিয়ালের জালে বল পাঠিয়ে ভিয়ারিয়ালকে উচ্ছ্বাসে ভাসান ইয়েরেমি পিনো। গোলটা কোনোভাবেই শোধ দিতে পারছিল না স্বাগতিক শিবির। ভিয়ারিয়ালের বিরুদ্ধে আরেকটি ম্যাচে হোঁচট খাওয়ার পালা হয়েছিল তাদের। গেল নভেম্বরে এই দলটাই রিয়ালকে ১-১ গোলে রুখে দিয়েছিল।

সেই ড্রয়ের প্রতিশোধের বদলে উল্টো পরাজয় চোখ রাঙাচ্ছিল রিয়াল মাদ্রিদকে। ম্যাচের শেষ দিকে পাশার দান উল্টে দেয় জিদানের দল। ৮৭ মিনিটে রিয়ালকে সমতায় ফেরান মৌসুমজুড়ে দলের ঘানি টানা করিম বেনজেমা। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে জয়সূচক গোল করে বসেন লুকা মডরিচ। তাতেই এলো নাটকীয় জয়।

রিয়াল সমতায় ফিরতে পারতো ৫৫ মিনিটে। কিন্তু বেনজেমা হেডে গোল করলেও ভিএআরের সহায়তা নিয়ে অফসাইডের কারণে গোলটা বাতিল করে দেন রেফারি। সেই হতাশা রিয়াল কাটিয়ে উঠেছে ঠিকই, কিন্তু এতে আনন্দের ছিটেফোটা থাকল না। বেনেজমার ক্রস থেকে দারুণ একটা গোল করেও বিমর্ষ থাকলেন মডরিচ।

এই ম্যাচে রিয়ালের একটা অর্জন আছে। লিগে টানা ১৮ ম্যাচ অজেয় থাকার গৌরব নিয়ে মৌসুম শেষ করল জিদানের দল। তবে শিরোপাহীনভাবে মৌসুম শেষ করার হতাশা নিশ্চিতভাবেই অনেকদিন পোড়াবে মাদ্রিদ জায়ান্টদের। গেল জানুয়ারিতে স্প্যানিশ সুপার কাপে অ্যাথলেটিক বিলবাওর হাত ধরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয় রিয়াল।

ছয়দিন পর তৃতীয় সারির ক্লাব আলকোয়ানোর কাছে হেরে কোপা ডেল রের স্বপ্নের সমাধী হয় তাদের। এখানে তাদের বিদায় হলো শেষ বত্রিশে। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া রিয়াল ছিটকে যায় সেমিফাইনাল থেকে। প্রিয় ভুবন থেকে তাদের বিদায় হয় চেলসির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় লেগে হেরে। সবমিলিয়ে মৌসুমটা ভালো গেল না রিয়ালের।

জিনেদিন জিদান

সব হারিয়ে নিঃস্ব রিয়াল মনোযোগ বাড়ায় লা লিগায়। এখানে আশার প্রদীপ জ্বেলে ছিল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার গোলশূন্য ড্র। সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনি জিদানের দল। একই রাউন্ডে হোঁচট খায় রিয়ালও। সেই ম্যাচটা জিততে পারলে কালকের জয়টা রিয়ালকে এনে দিতে পারতো লিগ শিরোপা। আসলে ফুটবল এমনই- প্রত্যাশার প্রতিফলন সবসময় হয় না।

লিগের ৩৮ রাউন্ড শেষে ৭৯ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয়েছে বার্সেলোনা। ৮৪ পয়েন্টে রানার্সআপ রিয়াল মাদ্রিদ। দুই পয়েন্ট বেশি নিয়ে লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। কাল রাতে ভায়াদোলিদকে একই ব্যবধানে হারিয়েছে তারা। তাতে মাদ্রিদ শহরের একপাশে শুরু হয় উৎসব; অন্য পাশে নেমে আসে শ্মশানের নীরবতা।