রিয়ালের বিদায়, ফাইনালে চেলসি

ঘরের মাঠে প্রথম লেগে হার ঠেকাতে দাঁতে দাঁত চেপে লড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। শেষ অবধি করেছে ড্র। বুধবার স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে দ্বিতীয় লেগে চেলসির সামনে দাঁড়াতেই পারল না জিনেদিন জিদানের দল; হেরে গেল ২-০ গোলে। সেমিফাইনালের দুই লেগ মিলিয়ে ৩-১ ব্যবধানে হেরে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের চলতি মৌসুম থেকে ছিটকে গেল রিয়াল মাদ্রিদ।

স্প্যানিশ জায়ান্টদের বিদায় করে নয় বছর পর টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে গেল চেলসি। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ প্রিমিয়ার লিগ প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটি। আগামী ২৯ মে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে অভিজ্ঞতায় এগিয়ে চেলসি। ২০১১-১২ মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে স্বপ্নের রুপালি ট্রফি জেতে চেলসি। সিটি এখনো শিরোপাশূন্য।

রিয়াল মাদ্রিদ ধাক্কা খেয়েছে প্রথম লেগেই। ছন্নছাড়া ফুটবল খেলে কোনোরকম চেলসির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে জিদানের দল। প্রতিপক্ষের মাঠে কাল আরো বাজে পারফর্ম করল লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। রক্ষণ, মধ্যমাঠ কিংবা আক্রমণ সব জায়গাতেই নড়বড়ে রিয়াল। বেনজেমা-রামোসদের পারফরম্যান্সে দেখা গেল ক্লান্তির ছাপ। যার মাসুল গুনতে হলো শিরোপাস্বপ্ন খুইয়ে।

ম্যাচে রিয়াল যতটা বিবর্ণ ততটাই উজ্জীবিত ছিল চেলসি। ম্যাচের প্রায় এক ‍তৃতীয়াংশ বল পায়ে রেখেই রিয়ালকে কাঁপিয়ে দিয়েছে তারা। চেলসি কতটা দাপুটে ফুটবল খেলেছে সেটা ম্যাচের ফল দিয়ে বোঝানো মুশকিল। ফরওয়ার্ডরা গোলমিসের মহড়া না দিলে এদিন অন্তত চারটা গোল পেতে পারতো পশ্চিম লন্ডনের ক্লাবটি।

নিশ্চিত বেশ কয়েকটা গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন চেলসি ফরওয়ার্ডরা। রিয়াল গোলরক্ষক থিবাউট কোর্তোয়া প্রাণপণে চেষ্টা করেছেন গোলবার অক্ষত রাখতে। কিন্তু বৃথা গেছে তার সব প্রচেষ্টা। রিয়ালের ভাগ্য ভালো যে একবার গোলপোস্ট বাঁচিয়ে দিয়েছে গোলের হাত থেকে। এই ভাগ্যের ওপর দাঁড়িয়েই আবার প্রথম গোল ‍তুলে নেয় চেলসি।

২৭ প্রতি আক্রমণে লিড নেয় স্বাগতিক শিবির। কাই হাভার্টজের চিপ রিয়ালের ক্রসবারে লাগে। বল ফিরতেই সহজেই হেডে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন ফাঁকায় চলে আসা টিমো ওয়ার্নার। যদিও মিনিট তিনেক আগেই একবার কেঁপেছিল রিয়ালের জাল। কিন্তু ওয়ার্নারের গোলটা বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের ফাঁদে। সেই হতাশা দূর হয়েছে একটু পরই।

গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠে রিয়াল। খানিকটা গতি বাড়ে অতিথি শিবিরে। করিম বেনজেমার জোড়াল শট ভয় পাইয়ে দিয়েছিল চেলসিকে। যদিও নির্ভার করেন চেলসি গোলরক্ষক এদুয়া মেন্ডি। এদিন তিন কাঠির নিচে দারুণ পারফর্ম করেছেন তিনি। তবে আসল পরীক্ষা দিতে হয়েছে রিয়াল গোলরক্ষক কোর্তোয়াকে। বেলজিয়ান তারকা এদিন মান বাঁচিয়েছেন দলের।

শেষ পর্যন্ত হার ঠেকাতে পারেননি। বরং শেষ দিকে আরেকটা গোল হজম করেন বেলজিয়ান তারকা। ৮৫ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ম্যাসন মাউন্ট। এই গোলটাও এসেছে পাল্টা আক্রমণ থেকে। এর আগে চেলসির চার ফুটবলার রিয়াল গোলরক্ষক কোর্তোয়াকে একা পেয়েও কাঙ্খিত ঠিকানায় বল পাঠাতে পারেননি। আসলে সমস্যা ছিল রিয়ালের রক্ষণদুর্গে।

চোট কাটিয়ে অধিনায়ক সার্জিও রামোস মাঠে ফিরলেও ঠিক চেনা ছন্দে ছিলেন না। বরং আগের চেয়েও ভঙ্গুর দেখা গেল রিয়ালের রক্ষণকে। আক্রমণে বেনজেমা, ভিনিচিয়াসরাও যেন নিজেদের ছায়া হয়ে থাকলেন। মধ্য মাঠে টনি ক্রুস-লুকা মডরিচ ছিলেন নিষ্ক্রিয়। সবমিলিয়ে চেলসির বিরুদ্ধে বিবর্ণ দেখা গেল টুর্নামেন্টের রেকর্ড সর্বোচ্চ ১৩ বারের চ্যাম্পিয়নদের।